প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে হাই স্কুলের গাছ কাটার অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:২৮ পিএম, ৯ এপ্রিল,শুক্রবার,২০২১ | আপডেট: ০২:৫৭ এএম, ২৩ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪
নাটোরের লালপুর উপজেলার নান্দরায়পুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহফুজুর রহমান ও উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী আলমগীর হোসেনের বিরুদ্ধে কোন রকম অনুমতি ছাড়াই এবং বিনা টেন্ডারে নান্দরায়পুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রায় ৫ লক্ষ টাকা মূল্যের মেহেগুনি গাছ কাটার অভিযোগ উঠেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার (৮ এপ্রিল) নান্দরায়পুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
এ অভিযোগের অনুলিপি লালপুর উপজেলা পরিষদ, জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, উপজেলা বনকর্মকর্তা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর প্রদান করা হয়েছে।
তিনি লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেন, নান্দরায়পুর উচ্চ বিদ্যালয় চত্বরের গাছ অনৈতিকভাবে কেটে ফেলার লক্ষ্যে গত বুধবার দুপুরে এক জরুরী সভার আয়োজন করে নান্দরায়পুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
সেখানে উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী আলমগীর হোসেন বলেন, গাছ কেটেই ভবন নির্মাণ করা হবে এবং আমার সিদ্ধান্তই বড় সিদ্ধান্ত। এর পরেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহফুজুর রহমান শ্রমিক লাগিয়ে ছোট বড় ৮-১০টি মেহগনি গাছ কাটতে শুরু করেন। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ৫ লক্ষ টাকা।
অভিযোগে তিনি আরো বলেন, মাধ্যমিক বিদ্যালয় গুলো মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হলেও আমার উর্দ্ধতন কোনো কর্মকতাকেই এ বিষয়ে অবহিত করা হয়নি। এমনকি আমাকেও তারা বিষয়টি জানায়নি।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নান্দরায়পুর উচ্চ বিদ্যালয়ের চারটি বড় মেহেগুনি গাছ সহ ছোট বড় ৮-১০ টি গাছ কেটে ফেলার লক্ষে বড় বড় মেহেগুনি গাছের ডালপালাসহ মাথা কেটে ফেলা হয়েছে।
স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, গাছগুলোসহ জমিটি হাই স্কুলের, এমনকি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মূল ভবনটিও হাই স্কুলের জায়গায় অবস্থিত। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আর একটি নতুন ভবন নির্মানের জন্য স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলার ওই প্রকৌশলী, ওই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং বিদ্যালয়ের সভাপতি মিলে সরকারি কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই গাছ গুলো কেটে ফেলার উদ্যোগ নেই। আর সে লক্ষে গত বুধবার বিকেলে গাছ গুলোর ডালপালাসহ মাথা কেটে ফেলা হয়।
নান্দরায়পুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলাম জানান, গাছসহ জমিটি হাইস্কুলের, আর আমি ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক, কিন্তু আমাকে না জানিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ উপরোক্ত ব্যাক্তিরা যোগসাজস করে জোর পূর্বক প্রায় ৫ লক্ষ টাকা মূল্যের গাছ কেটে নেয়ার পাঁয়তারা করে।
বিষয়টি জানতে পেরে গতকাল বৃহস্পতিবার (৮ এপ্রিল) উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে একটি অভিযোগপত্র জমা দিয়েছি। এছাড়া এ অভিযোগের অনুলিপি সংশ্লিষ্ট আরো ৫ দপ্তরে জমা দিয়েছি, এখন বিষয়টি তারাই দেখভাল করবেন।
এবিষয়ে নান্দরায়পুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহফুজুর রহমান জানান, গাছ কাটার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই, আমার বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মান করা হবে তাই বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি ও স্থানীয় লোকজন যেখানে বলবে সেখানেই ভবন হবে।
এবিষয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি অসিম কুমার জানান, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিজস্ব জমিতে খেলার মাঠ রয়েছে, সেখানে নতুন ভবন নির্মান করা হলে খেলাধুলার পরিবেশ নষ্ট হবে তাই স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও প্রকৌশলীসহ স্থানীয়দের নিয়ে মিটিং করে হাই স্কুলের গাছ কেটে সেখানে প্রাইমারি স্কুলের নতুন ভবন নির্মানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
ঐ মিটিংয়ে হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক উপস্থিত ছিল কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক উপস্থিত ছিলনা তবে তার সাথে ইউপি চেয়ারম্যানের কথা হয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী আলমগীর হোসেন তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, গাছ কাটার হুকুম দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। বিষয়টা নিতান্তই শিক্ষা অফিস এবং বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির, এখানে আমার কোন হাত নেই।
এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান জানান, দুটিই সামাজিক প্রতিষ্ঠান, মাঠের সৌন্দর্য রক্ষার্থে স্থানীয়দের সাথে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বিনা অনুমতিতে বা বিনা রেজুলেশনে ও বিনা টেন্ডারে হাইস্কুলের গাছ কাটা যায় কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, যেহেতু হাইস্কুলের ম্যানেজিং কমিটির বিরুদ্ধে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা আছে তাই সকলের সাথে আলাপ করেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একাডেমিক সুপারভাইজার সাদ আহম্মেদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, এ বিষয়ে একটি অভিযোগ আমরা পেয়েছি, একটি প্রতিষ্ঠানের গাছ বা সম্পদ অন্য প্রতিষ্ঠানে দেয়ার বা হস্তান্তরের কোন সুযোগ নেই।
এ বিষয়ে লালপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার উম্মুল বানীন দ্যুতি জানান, এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি, এক প্রতিষ্ঠানের সম্পদ অন্য প্রতিষ্ঠান কখনোই নষ্ট করতে পারে না, তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।