কুষ্টিয়া বিএডিসি অফিসের এডির বিরুদ্ধে অর্থ লোপাটের অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:৩০ পিএম, ৮ এপ্রিল,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ০৪:০৫ পিএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
কুষ্টিয়া বিএডিসি অফিসের সহকারী পরিচালক মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তিনি কুষ্টিয়া বিএডিসি (সার) অফিসের সহকারী পরিচালক হিসেবে কর্মরত থাকলেও গুদাম ইনচার্জ হিসেবে সকল কিছুর দায়িত্ব দীর্ঘ ৯/১০ বছর ধরে তার হাতে।
প্রভাব খাটিয়ে তিনি স্থানীয় কিছু দালাল ডিলার ও উপর মহলের সহযোগিতায় সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য করে যাচ্ছেন।
মাহবুবুর রহমানের দুর্নীতির বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরে গত ৮ মার্চ ২০২১ তারিখে চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএডিসি বীজ ও সার ডিলার সমিতির ৩৬ জন ডিলারের স্বাক্ষরিত একটি লিখিত অভিযোগ বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান বরাবর প্রেরণ করেন, সেই সাথে বিভিন্ন দপ্তরে উক্ত দরখাস্তের অনুলিপিও প্রদান করেন তারা।
চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএডিসি বীজ ও সার ডিলার সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের প্রদত্ত তথ্য মতে জানা যায়, কুষ্টিয়া বিএডিসি সার গোডাউন থেকে কুষ্টিয়া, মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গার সকল সার ডিলার মালিকগণ কুষ্টিয়ার সার গোডাউন থেকে বরাদ্দকৃত পত্র মতে ডিলাররা তিউনিসিয়ার টিএসপি সার পাচ্ছেন না, কারণ উক্ত গোডাউন ইনচার্জ কুষ্টিয়ার হাতে গোনা কয়েকজন সার ডিলারদের সহযোগিতায় দীর্ঘ ৯/১০ বছর একই পদে থেকে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য করে যাচ্ছেন।
তার কোন সমস্যা হলে কুষ্টিয়ার ঐ সকল ডিলাররা সেগুলো ম্যানেজ করেন ভিন্ন ভিন্ন কায়দায়। মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত অভিযোগের বিষয়টি নিয়ে চুয়াডাঙ্গা থেকে প্রকাশিত দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় তার বিরুদ্ধে গত ৯ মার্চ তারিখে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত অভিযোগ পত্রের সাথে দেশের বড় বড় ১০টি সার আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক তিউনিশিয়া হতে সার আমদানি করে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জেলার বিএডিসি অফিসে প্রেরণ করেন।
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন ঢাকা অফিসের মহা ব্যবস্থাপক(সার ব্যবস্থাপনা) তপন কুমার আইচ কর্তৃক স্বাক্ষরিত গত ২৯ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখের ১২.০৬.০০০০.২৪১.৪০.০৭২.২০.৮৫ নং স্মারকে ১৫,২৫০ টন সার খুলনা হতে বিভিন্ন গুদামে প্রেরণের জন্য পরিবহন কর্মসূচি প্রদান করেছেন খুলনা বিভাগের বিএডিসি অফিসের দপ্তর গুলোতে।
উক্ত সূত্রের আলোকে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন ঢাকা অফিসের মহা ব্যবস্থাপক(সার ব্যবস্থাপনা) তপন কুমার আইচ কর্তৃক স্বাক্ষরিত পরিবহন শাখা থেকে গত ৪ জানুয়ারি ২০২১ তারিখে ১২.০৬.০০০০.২৪১.৪০.০৭২.২০.১৪১নং স্মারকে তিউনিশিয়া হতে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের চুক্তির আওতায় ২০২০-২১ অর্থ বছরে এমভি প্যান জেসমিন জাহাজে ৮ম লটে আমদানিকৃত ২৬,২৫০ মেট্রিক টন টিএসপি সারের মধ্যে খুলনা মংলা বন্দরে খালাস করে ১৫,২৫০ মেট্রিক টন সার খুলনা বিভাগের অধীনে বিভিন্ন জেলার গুদামে প্রেরণ করা হয়েছে।
গত ২৯ ডিসেম্বরের সংশোধিত তিউনিসিয়ার টিএসপি সার কুষ্টিয়া বিএডিসি সার গোডাউনে ২০০ কুষ্টিয়ার টিনশেডে ২০০ ও পাবনা জেলার ঈশ্বরদী থানায় ১৫০ মেট্রিক টন টিএসপি সার আনলোড হওয়ার কথা থাকলেও তার অর্ধেকেরও কম আনলোড হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
কারণ বরাদ্দকৃত প্রেরিত সারের অনুকূলে তিনটি জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অপরিদপ্তর থেকে প্রতিটা জেলার ডিলারদেরকে সার গুলো বিভাজন করে বাজারজাত করণের জন্য কুষ্টিয়া বিএডিসি অফিসে প্রেরণ করেন। উক্ত বরাদ্দকৃত লিস্ট ডিলাররা হাতে পাওয়ার পর তারা টিএসপি সার পাওয়ার জন্য কুষ্টিয়া বিএডিসি অফিস এর অনুকূলে পে অর্ডার করেও তারা টিএসপি সার পাননি।
সে কারণেই ভুক্তভোগী সার ডিলার সমিতি চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন দপ্তরে মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। কারণ তিনি এডি হয়ে গুদাম ইনচার্জ এর কাজ করে যাচ্ছেন। সেই সুবাদে উক্ত মাল পথের মধ্যে থেকেই বিক্রি করে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ তুলেছে ডিলার মালিকরা।
ডিলার মালিকরা প্রতিবেদককে বলেন, দেশে তিউনিসিয়ার টিএসপি সারের ব্যাপক চাহিদা থাকার কারণে প্রতিনিয়ত মাহবুবুর রহমান আমাদেরকে ঠকিয়ে খুলনা মংলা বন্দর হতেই তিনি বিভিন্ন ডিলারদের কাছে অধিক মূল্যে বিক্রি করে দিচ্ছেন। এটা শুধু একদিনের চালান এর ঘটনা নয় দীর্ঘ ৯/১০ বছর ধরে কিছু ডিলারদের সহযোগিতায় সিন্ডিকেট করে এই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।
তারা এটাও বলেন, বন্দর থেকে সরাসরি কিছু বিক্রি করেন অবশিষ্ট অবিকৃত টিএসপি সার পাবনা জেলার ঈশ্বরদী এলাকাতে একটি গুদাম আছে সেখানে তিউনিসিয়ার টিএসপি সার গুলো ওখানে রাখা হয় এবং ওখান থেকেই অধিক মূল্যে তার ঘনিষ্ঠ ডিলারদের কাছে বস্তা প্রতি যার মূল্য ১০০০ টাকা, কিন্তু তিনি বিক্রি করছেন ১২০০ থেকে ১৩০০ শ' টাকায়। প্রতি বস্তায় ৫০ কেজি করে সার থাকে।
ডিলার মালিকরা আরো বলেন, মাহবুবুর রহমানের ব্যবহার এতটাই খারাপ যে সার আনতে গেলে তিনি অকথ্য ভাষায় ডিলারদের কে গালিগালাজ করে বলেন, টিএসপি সার নেই ডিএপি এবং এমওপি সার আছে পারলে এগুলো নিয়ে যান। টিএসপি সার গোডাউনে নেই আমরা ওটা দিতে পারব না। অথচ টিএসপি সার থাকে ঈশ্বরদী গোডাউনে আর কিছু থাকে কুষ্টিয়ার গোডাউনে যেগুলো দেওয়া হয় তার নিকটস্থ ডিলারদেরকে।
অন্যদিকে ডিলার মালিকরা আরেকটি বিষয় প্রতিবেদককে জানান, গুদামরক্ষক হিসাবে চাকরি করছেন রাজিয়া সুলতানা। রাজিয়া সুলতানা অফিসে বসে থাকেন কিন্তু একজন বহিরাগত যার কোন নিয়োগ নাই তিনি হলেন উক্ত রাজিয়া সুলতানার স্বামী গিয়াস তিনি গুদাম রক্ষকের কাজ করছেন গুদামের ভিতরে।
অভিযোগকারী সার ডিলারদের তথ্য উপাত্ত নিয়ে কুষ্টিয়া বিএডিসি (সার) অফিসের সহকারী পরিচালক মাহবুবুর রহমানের (ইনচার্জ) প্রশ্ন করা হলে তিনি যথাযথ জবাব দিতে ব্যর্থ হন।
এসকল হিসাবের কোন সদুত্তর দিতে পারেন নাই প্রতিবেদকের কাছে, তিনি বারংবার ভুল বোঝানোর চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন। অন্যদিকে গুদামরক্ষক রাজিয়া সুলতানাকে তার স্বামী গিয়াসের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে রাজিয়া সুলতানা বলেন, আমার স্বামীকে এডি মাহবুবুর রহমান সার গোডাউন দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়েছেন। একজন বহিরাগত কিভাবে সরকারি গোডাউনের ভিতর সারের হিসাব-নিকাশ দেখাশোনা করে যাচ্ছেন তার যথোপযুক্ত বিচার দাবি করেছেন সকল সার ডিলারা।
দুর্নীতিবাজ মাহবুবুর রহমানের বিষয়ে যুগ্ম পরিচালক মোঃ লিয়াকত আলীর সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আমি মাত্র তিন মাস অত্র অফিসের বদলি হয়ে এসেছি এ বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা আপনারা তার সঙ্গে কথা বলেন বলে তিনি এড়িয়ে যান।
অন্যদিকে এই মাহবুবুর রহমান একই পদে একই স্থানে দশটি বছর কিভাবে চাকরি করছেন তারও যথোপযুক্ত বিচার দাবি জানিয়েছেন সমস্ত সার ডিলাররা। সেই সাথে তার সকল স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির হিসাব জনসম্মুখে প্রকাশ ও জরুরী ভিত্তিতে তাকে কুষ্টিয়া হতে শাস্তিমুলক বদলির জন্য উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের মাহবুবুর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।