মামুনুল হককে নিয়ে স্ট্যাটাস দেওয়ায় সুনামগঞ্জে লংকাকান্ড
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:০৬ পিএম, ৬ এপ্রিল,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ০৫:৫২ এএম, ২২ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব আল্লামা মামুনুল হককে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পক্ষে ও বিপক্ষে স্ট্যাটাস দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সুনামগঞ্জে চলছে লংকাকান্ড।
ফেসবুক স্ট্যাটাস কে কেন্দ্র করে এক ছাত্রলীগ নেতাকে বহিস্কার করাসহ স্কুলের প্রধান শিক্ষক রয়েছেন তোপের মুখে। অপরদিকে গ্রেফতার হওয়া যুবলীগ নেতাকে জামিন দিয়েছে আদালত। তবে তোপের মুখে থাকা প্রধান শিক্ষকের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসনকে শিক্ষা উপমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
বিভিন্ন সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে- সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফয়েজ উদ্দিন ওরফে মারজানকে বহিস্কার করা হয়েছে। সে জেলার ছাতক উপজেলার জাউয়া বাজার এলাকার বাসিন্দা।
গতকাল সোমবার (৫ এপ্রিল) রাত ১১টায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য স্বাক্ষরিত একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যম্যে জেলা ছাত্রলীগ নেতা মারজানকে বহিস্কারের তথ্য জানানো হয়।
এব্যাপারে সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান রিপন সাংবাদিকদেরকে জানান- হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের পক্ষ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয় জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফয়েজ উদ্দিন ওরফে মারজান। তারই প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সাথে যোগাযোগ করে তাকে বহিস্কারের জন্য প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছিল। এর প্রেক্ষিতে মারজানকে তার পদ থেকে এবং বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সকল কর্মকান্ড থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
অপরদিকে জেলার দিরাই উপজেলার রফিনগর ইউনিয়নের বাংলাবাজারে অবস্থিত একটি রেস্তোরায় বসে রফিনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এসবি গোলাম মোস্তাফা হেফাজতে ইসলামের নেতা আল্লামা মামুনুল হককে নিয়ে সমালোচনা করেন।
এঘটনাকে কেন্দ্র করে হেফাজতের নেতাকর্মীদের মাঝে উত্তেজনা দেখা দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে সালিশ বসিয়ে স্কুল শিক্ষককে চাকুরিচ্যুতির দাবি করে মামুনুলের কর্মী-সমর্থকরা।
এঘটনার খবর পেয়ে গতকাল সোমবার (৫ এপ্রিল) সন্ধ্যায় শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার নওফেল জেলা প্রশাসককে ফোন করে ওই শিক্ষকের নিরাপত্তার দেওয়ার নির্দেশ দেন।
অন্যদিকে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার ঘটনায় জেলার শাল্লা উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহবায়ক ও উপজেলা যুবলীগ নেতা অরিন্দম অপু চৌধুরীকেও হুমকি দেওয়া হয়েছে।
এঘটনায় যুবলীগ নেতা অপু চৌধুরী নিরাপত্তাহীনতায় আছেন এবং তিনি স্থানীয় প্রশাসনকে অবগত করেছেন বলে জানিয়েছেন।
অপরদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া জেলার তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান এমাদ হোসেন জয়কে গতকাল সোমবার (৫ এপ্রিল) বিকেলে আদালতে হাজির করা হলে তাকে জামিন দেয় আদালতের বিজ্ঞ বিচারক।
গত রবিবার সন্ধ্যায় হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতা মামুনুল হকের সাথে এক নারীর ছবি সংযুক্ত করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয় যুবলীগ নেতা এমাদ হোসেন জয়। এঘটনার প্রেক্ষিতে গত সোমবার সকালে তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠায় পুলিশ।
এব্যাপারে সুনামগঞ্জ জেলা যুবলীগের আহবায়ক ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান খায়রুল হুদা চপল বলেন- নারায়নগঞ্জের সোনারগাঁও রিসোর্টে নারীসহ হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতা মামুনুল হক আটকের ঘটনার পরপর সারাদেশের মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের ছবি পোস্ট ও শেয়ার করেছে। এসব নিয়ে আমাদের নেতাকর্মীদেরকে গ্রেফতার করাসহ দেওয়া হচ্ছে হুমকি-ধমকি। যা খুবই দুঃখজনক। আমাদের নেতাকর্মীরা যেন হয়রানীর শিকার না হয় সেদিকে খেয়াল রাখার জন্য পুলিশ প্রশাসনের প্রতি আহবান জানাচ্ছি।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন সাংবাদিকদের বলেন- দিরাইয়ের প্রধান শিক্ষককের বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহোদয় আমাকে বলেছেন তার খোঁজ খবর রাখতে। ওই শিক্ষকের নিরাপত্তায় আমরা সচেষ্ট আছি। তবে কেউ যাতে ধর্মীয় গুজব ছড়িয়ে অশান্তি সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।