গড়াই নদী ড্রেজিং ও তীর সংরক্ষনে স্থানীয়দের সাতে মতবিনিময়
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:১৭ পিএম, ৬ এপ্রিল,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ০৯:২৫ পিএম, ১৭ নভেম্বর,রবিবার,২০২৪
গড়াই নদী ড্রেজিং ও তীর সংরক্ষনে চলমান প্রকল্পের নিবিড় পরিবীক্ষসহ সমীক্ষার অংশ হিসেবে এই ড্রেজিং প্রকল্পের স্থায়ী ও টেকসই ফলাফল নিশ্চিতে আরও কোন বিষয় সংযোজনের প্রয়োজন আছে কি না সেসব পরামর্শ ও তথ্য সংগ্রহে স্থানীয়দের সাথে মতবিনিময় ও কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গতকাল সোমবার (৫ এপ্রিল) বেলা ১১টায় বাংলাদেশ পরিকল্পনা মন্ত্রনালয়ের পরিবীক্ষন ও মূল্যায়ন সেক্টর-৪ আইএমইডি'র পরিচালক খলিল আহমেদের সভাপতিত্বে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কুষ্টিয়ার সেমিনার কক্ষে এই মত বিনিময় ও কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
এই কর্মশালা ও মতবিনিময় সভার আয়োজন করেছিলেন আইএমইডি কর্তৃক সমীক্ষা কার্যক্রমে নিয়োজিত পরামর্শক সংস্থা ডিপিডিএস লি: এসোসিয়েশন উইথ হলিমো কনসালটেন্সি লিমিটেড।
এসময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইএমইডির পরিবীক্ষন ও মূল্য্য়ান সেক্টর-৪র মহাপরিচালক মো: আফজাল হোসেন, বিশেষ অথিথি ছিলেন গড়াই নদী ড্রেজিং প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো: মনিরুজ্জামান, পানি উন্নয়ন বোর্ড কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী কেএম জহুরুল হক, উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো: সালাহ উদ্দিন, ড্রেজিং প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী তাজবির হোসেনসহ গড়াই ড্রেজিং প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ, আইএমইডির সমীক্ষা দলের সদস্যগণ।
স্থানীয় সুধীজনদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কুষ্টিয়া সরকারী কলেজের অধ্যাপক আহসান কবীর রানা, আলাউদ্দিন আহমেদ ডিগ্রী কলেজের সহকারী অধ্যাপক শেহাব উদ্দিন, গনমাধ্যমকর্মী হাসান আলী, হাটশ হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান সেলিম উদ্দিন, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মুস্তাফিজুর রহমান মিলন মন্ডল প্রমুখ।
শুরুতে সরকারের ৬শ ২৯ কোটি টাকা প্রাক্কলন ব্যয়ে(২০১৮-২০২২) চলমান এই গড়াই নদী ড্রেজিং ও তীর সংরক্ষন প্রকল্পর গুরুত্ব লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তুলে ধরা হয়।
এসময় মুক্ত আলোচনার মাধ্যমে পরামর্শ আহ্বান করা হয়। এ সময় তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে সদর উপজেলার হাটশ হরিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মুস্তাফিজুর রহমান মিলন বলেন, "দীর্ঘ ২০/২২ বছর ধরে কুষ্টিয়াতে গড়াই খননের নামে আসলে কি হচ্ছে? মাঝে মধ্যে ড্রেজার থেকে তেল চুরি নিয়ে হৈ-হট্টগোল হয়, তখন নানা অনিয়মের কথা শুনি। সরকারের এতোবড় প্রকল্প শত শত কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে অথচ টেকসই ফলাফল পাচ্ছি না। আপনারা এক বছর নদী কাটা বন্ধ রাখেন, পরের বছরই নদীতে ড্রেজিংএর কোন চিহ্ন খুজে পাওয়া যায় না"।
হাটশ হরিপুর ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান সেলিম বলেন, আজকে জানলাম যে, ফলপ্রসু ড্রেজিংএ স্থানীয় জনগোষ্ঠীসহ নদীর সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যারা সম্পৃক্ত তাদের সাথে মতবিনিময় করা আবশ্যক। তার মানে এর আগে ড্রেজিং কর্তৃপক্ষ নিজেদের খেয়াল খুশিমতো কাজ করার ফলেই এতো অস্বচ্ছতার সৃষ্টি হয়েছে। কৃর্তৃপক্ষ ইচ্ছাকৃত ভাবেই স্থানীয়দের দুরে রেখে অনিয়ম দুর্ণীতি করেছেন।
কুষ্টিয়া সরকারী কলেজের সহকারী অধ্যাপক আহসান কবীর বলেন, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০টি জেলায় শুষ্ক মৌসুমে কৃষি, মৎস, জীববৈচিত্র, পরিবেশ ও জলপথ রক্ষা এবং সর্বোপরি খুলনা বিভাগের উপকুলীয় লবণাক্ততার আগ্রাসন থেকে একমাত্র সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন কে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষার প্রধান মিঠা পানির উৎস হলো পদ্মা নদীর শাখা শুধুমাত্র গড়াই নদীর পানি প্রবাহ। গড়াই নদী খনন ও পূনরুদ্ধার প্রকল্প ফলপ্রসু ও টেকসই করতে না পারলে এই প্রকল্পের আসল উদ্দেশ্যই ব্যহত হবে।
পরিবেশবিদ গৌতম রায় বলেন, ১৯৭৫ সালে ভারত ফারাক্কা নির্মাণ করে ভগিরথি ও হুগলি নদীর পানি প্রত্যাহার করে নেয়। এরফলে শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশের পদ্মা ও তার শাখা নদী গড়াই পানি স্বল্পতার মুখে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে বালির চর জেগে উঠেছে। এতে গড়াই সংযুক্ত উপকুলবর্তী রূপসা, বলেশ্বর ও পশুর নদীর মিঠা পানির উৎসের অপমৃত্যু ঘটায় বঙ্গপসাগরের লবনাক্ততা গ্রাস করেছে।
গণমাধ্যমকর্মী হাসান আলী বলেন, ১৯৯৮ সালে প্রথম ধাপে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা ব্যায়ে গড়াই নদী পুনরুদ্ধার প্রকল্প ড্রেজিং, পরবর্তীতে ২০০৯ সাল হতে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ৯৪২.১ কোটি টাকা ব্যায়ে ২য় ধাপে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়নে গড়াই নদী পুনরুদ্ধার প্রকল্প এবং সর্বশেষ ৬শ ২৯ কোটি টাকা ব্যয়ে(২০১৮-২০২২)মেয়াদে গড়াই নদীর ড্রেজিং ও তীর সংরক্ষনের প্রকল্প বাস্তবায়ন চলমান। এই খনন প্রকল্পটিকে টেকসই ও ফলপ্রসু করার ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ মতামত ও দিক নির্দেশনার প্রয়োজন হলে সেটা নেয়া উচিৎ।
পরিশেষে এমন ফলপ্রসু আলোচনায় উঠে আসা মতামত ও সুনির্দিষ্ট পরামর্শ পেয়ে আয়োজক কর্তৃপক্ষ সন্তোষ প্রকাশ করে ধন্যবাদ জানান এবং অংশ গ্রহনকারীদের প্রসংশা করেন।
ঢাকা থেকে অন লাইনে যুক্ত উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের উপস্থিতিতে মত বিনিমিয়ে উঠে আসা বিষয়গুলিতে চরম ভাবে তোপের মুখে পড়েন ড্রেজিং প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী মনিরুজ্জামানসহ ড্রেজিং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ।
তবে প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান চলমান গড়াই নদী ড্রেজিং প্রকল্পের নানা সুবিধা দিক তুলে ধরে নিজের স্বপক্ষ বক্তব্য রেখে মতবিনিময় ও কর্মশালার সমাপ্তি টানেন।