রেলে নির্দেশনার বালাই নেই
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:২৮ এএম, ৩ এপ্রিল,শনিবার,২০২১ | আপডেট: ০২:৫৭ পিএম, ২২ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
বাইরে ভিড়ের মধ্যে হুড়মুড় করে ট্রেনে ওঠার তোড়জোড়। ভেতরে প্রায় প্রতিটি আসনেই পাশাপাশি বসা যাত্রী। কেউ কেউ মাস্ক পরলেও অনেকের মুখে তাও নেই। সরকার ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই সরকারি ব্যবস্থাপনায় চলা ট্রেনে চেপে গন্তব্যে যাত্রা সবার।
সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার সকালের এই চিত্র চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনের। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার পথে রওয়ানার অপেক্ষায় থাকা সকাল ৭টার সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেন ঘুরে এই চিত্র দেখা গেছে।
দেশে করোনার সংক্রমণ বাড়তে থাকায় ২৯ মার্চ ১৮টি নির্দেশনা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনের ৪ নম্বর নির্দেশনায় গণপরিবহনে ধারণ ক্ষমতার ৫০ ভাগের বেশি যাত্রী পরিবহন না করার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
৩০ মার্চ থেকেই সরকারের এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করে ট্রেনে অর্ধেক আসনে যাত্রী পরিবহনের ঘোষণা দেয় রেলওয়ে। তবে সেই ঘোষণার ৩ দিন পার হলেও সরকারি ব্যবস্থাপনায় চলা ট্রেনে বৃহস্পতিবার উপেক্ষিতই দেখা গেছে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে দেওয়া সেই নির্দেশনা। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন থেকে ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেট ও চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে ৯টি আন্তঃনগর ট্রেন ছেড়ে যায়। ধারণ ক্ষমতার ৫০ ভাগের বেশি যাত্রী নিয়ে এসব ট্রেন নিজ নিজ গন্তব্যের দিকে রওনা দেয় বলে জানা গেছে।
কোন ট্রেনে কত যাত্রী গেলেন
স্টেশন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সকাল ৭টায় ছেড়ে যাওয়া সুবর্ণ এক্সপ্রেসের আসন সংখ্যা ছিলো ৮৯০টি। এই ট্রেনে বৃহস্পতিবার যাত্রী ছিলেন ৭৪২ জন। সকাল ৭টা ২০ মিনিটে ছেড়ে যাওয়া বিজয় এক্সপ্রেসের আসন সংখ্যা ছিলো ৬৬০টি। এই ট্রেনে বৃহস্পতিবার যাত্রী ছিলেন ৪৬৯ জন। সকাল ৯টার পাহাড়িকা এক্সপ্রেসের আসন সংখ্যা ছিলো ৬৪৮টি। এই ট্রেনে বৃহস্পতিবার যাত্রী ছিলেন ৪৭৯ জন।
অন্যদিকে দুপুর সাড়ে ১২টার মহানগর এক্সপ্রেসের আসন সংখ্যা ছিলো ৭৫১টি। এই ট্রেনে বৃহস্পতিবার যাত্রী ছিলেন ৪৫৫ জন। বিকেল ৩টার মহানগর গোধুলি এক্সপ্রেসের আসন সংখ্যা ছিলো ৭০৯টি। এই ট্রেনে বৃহস্পতিবার যাত্রী ছিলেন ৪৭১ জন। বিকেল ৫টার সোনার বাংলা এক্সপ্রেসের আসন সংখ্যা ছিলো ৬১১টি। এই ট্রেনে বৃহস্পতিবার যাত্রী ছিলেন ৪৬০ জন।
এছাড়া বিকেল ৫টা ১৫ মিনিটের মেঘনা এক্সপ্রেসের আসন সংখ্যা ছিলো ৯২৯টি। এই ট্রেনে বৃহস্পতিবার যাত্রী ছিলেন ৬৩৪ জন। রাত ৯টা ৪৫ মিনিটের উদয়ন এক্সপ্রেসের আসন সংখ্যা ছিলো ৬৩৩টি। এই ট্রেনে বৃহস্পতিবার শতভাগ আসন বিক্রি করা হয়েছে। রাত ১১টার তুর্ণা এক্সপ্রেসের আসন সংখ্যা ছিলো ৬৬৮টি। এই ট্রেনেও বৃহস্পতিবার শতভাগ আসন বিক্রি করা হয়েছে।
সরকারি নির্দেশনার পর অর্ধেক যাত্রী নিয়ে ট্রেন চালাচলের ঘোষণার ৩দিন পার হলেও ট্রেনে বেশি যাত্রী পরিবহন নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন যাত্রীরা। তারা বলছেন- দেশে করোনার সংক্রমণ যে গতিতে বাড়ছে, তাতে সামাজিক দূরত্ব মানাসহ সরকার যেসব নির্দেশনা জারি করেছে তা মানার বিকল্প নেই।
খোদ সরকারি ব্যবস্থাপনায় চলা ট্রেনে সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষিত থাকা বিস্ময়ের উল্লেখ করে নজরুল ইসলাম নামে একজন যাত্রী বলেন, করোনার সংক্রমণ কমাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিকল্প নেই। অথচ ট্রেনে পাশাপাশি যাত্রী বসানো হচ্ছে। সামাজিক দূরত্ব আর থাকলো কই?
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ যা বলছে
চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার রতন কুমার চৌধুরী বলেন, যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি মানাতে সরকার যেসব নির্দেশনা দিয়েছে তা বাস্তবায়নে আমাদের চেষ্টার কমতি নেই। অর্ধেক আসনে যাত্রী পরিবহনের নির্দেশনা আসে ২৯ মার্চ। তবে এর আগেই আগামী ৪ এপ্রিল পর্যন্ত বিভিন্ন ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি হয়ে যায়। এখন যারা আগে টিকিট কিনে ফেলেছেন তাদের তো ট্রেন থেকে নামিয়ে দিতে পারি না।
তিনি বলেন, ৫ এপ্রিল থেকে ট্রেনে অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের নির্দেশনা শতভাগ বাস্তবায়ন করা হবে। এখন আমরা যেসব ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি করছি সেখানে মোট আসনের অর্ধেক আসনই বিক্রি করা হচ্ছে। এছাড়া যাত্রীদের মাস্ক পরা নিশ্চিত করাসহ স্বাস্থ্যবিধি মানাতে এবং স্টেশনে টিকিট বিক্রির সময় সামাজিক দূরত্ব রক্ষায় আমরা কঠোর হবো।