পানি শুন্য গড়াই, বিপাকে হাজারো কৃষক
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:২৪ পিএম, ৩১ মার্চ,
বুধবার,২০২১ | আপডেট: ০৯:২৬ পিএম, ১৭ নভেম্বর,রবিবার,২০২৪
পদ্মায় পানি কমে যাওয়ায় এর প্রধান শাখা নদী কুষ্টিয়ার গড়াই শুকিয়ে গেছে। এখন হেঁটেই পার হওয়া যায় এক সময়ের প্রমত্ত গড়াই। এদিকে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) প্রকল্পের পাম্প বন্ধ রাখায় বিপাকে পড়েছেন এ এলাকার হাজারো কৃষক।
যৌথ নদী কমিশন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, মার্চের শেষ দিকে কুষ্টিয়ার হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে মাত্র ২৩ হাজার কিউসেকের মতো পানি প্রবাহ রেকর্ড হয়েছে। পানির এই প্রবাহ গত পাঁচ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম।
যৌথ নদী কমিশনের হিসাবে ২০১৬ সালে মার্চের শেষে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানি প্রবাহ ছিল ২১ হাজার ৭১০ কিউসেক। এর পরে এখানে পানির প্রবাহ কখনও ৩০ হাজার কিউসেকের নিচে নামেনি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলীরা বলছেন, ভারতের সঙ্গে পানি চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ ১ এপ্রিল থেকে ১০ দিন ৩৫ হাজার কিউসেক করে পানি পাবে। তখন সংকট কেটে যাবে।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে গিয়ে দেখা গেছে পদ্মায় বালুচর জাগতে। হার্ডিঞ্জ ব্রিজের মোট ১৬টি গার্ডারের মধ্যে ১০টি আছে পানির মধ্যে। মাটিতে থাকা দুই পাশের দুটি বাদ দিলে বাকি চারটি গার্ডারের গোড়ায় বালু জমেছে।
খোকসায় গিয়ে দেখা গেছে গড়াই প্রায়-ই শুকিয়ে গেছে। কোন মতে বইছে ক্ষীণ পানির ধারা। স্থানীয়রা বলেন, ‘মানুষ বাঁশের চরাট ফেলে তার ওপর দিয়ে হেঁটে নদী পার হচ্ছে। পুরো নদী প্রস্থে প্রায় এক কিলোমিটার ধু ধু বালুচর জমেছে।’
কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের ড্রেজিং বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী তাজমীর হোসেন বলেন, ‘পদ্মায় পানি কমে যাওয়ায় গড়াইয়েও পানি কমেছে। তবে ১ এপ্রিল থেকে ৩৫ হাজার কিউসেক পানি পেলে অবস্থার উন্নতি হবে।’
পানি উন্নয়ন বোর্ডের দাবি, পরিকল্পিত খননে এবার নদীতে পানি প্রবাহ বেশি আছে। চলতি বছর শুষ্ক মৌসুমেও কুষ্টিয়া শহরের কাছে গড়াইয়ে কিছুটা পানি প্রবাহ আছে।
কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী কেএম জহুরুল হক জানান, নাব্যতা ধরে রাখতে টানা খনন চলছে গড়াইয়ে। উৎস মুখ কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার তালবাড়িয়া থেকে ২০ কিলোমিটার খনন হবে কুমারখালী পর্যন্ত।
এদিকে পদ্মা নদীতে পানি প্রবাহ কমে যাওয়ায় গত ২৬ মার্চ সন্ধ্যার পর থেকে জিকে সেচ প্রকল্পের পাম্প দুটির পানি সরবরাহ শূন্যে নিয়ে আসা হয় বলে জানান পাম্প হাউসের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান।
এতে বিপাকে পড়েছেন কৃষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মাগুরা ও ঝিনাইদহ জেলার কৃষকেরা। অনেকেই শ্যালো পাম্প দিয়ে ভূগর্ভ থেকে পানি তুলে সেচ দিচ্ছেন।
কুমারখালীর পাহাড়পুরের কৃষক মো. দেলোয়ার বলেন, ‘এখন পাম্প বন্ধ করে দেয়া তো গাছে তুলে মই টান দেয়ার মতো। আমাদের এই পেঁয়াজ এবং ভুট্টার এখন কী হবে, এ ছাড়া সামনে পাট এবং আউশ ধানের বীজতলা তৈরি করতে হবে।’
কুষ্টিয়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শ্যামল কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘জিকের সেচ সুবিধা বন্ধ থাকলে কৃষকের অনেক ক্ষতি হবে। বোরো চাষের এই সময়ে সেচ দেয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ। সেচ না দিলে ফলনে প্রভাব পড়বে।’
জিকে প্রকল্পের আওতায় বোরো মৌসুমে এবার কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মাগুরা ও ঝিনাইদহ জেলায় ১৯৪ কিলোমিটার প্রধান খালের মাধ্যমে প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে সেচসুবিধা দেয়ার লক্ষ্য রয়েছে।
গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) সেচ প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল হেকিম বলেন, ‘নদীতে পানি বাড়লেই আবার কৃষকদের সেচ সুবিধা দেয়া যাবে। ১ এপ্রিল আবার পাম্প চালু হতে পারে।’
তিনি জানান, মার্চের শেষে এসে পদ্মায় পানি পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ২৩ হাজার কিউসেকের মতো। ফলে পানি ৪.১ মিটার রিডিউসড লেভেলে (আরএল) নেমে আসায় বন্ধ রাখতে হচ্ছে জিকে সেচ প্রকল্পের দুটি পাম্পই।
ফারাক্কা পয়েন্টের আগে নানা প্রকল্পের মাধ্যমে ভারত গঙ্গার পানি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশ রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ।
তিনি বলেন, ১ হাজার সেচ প্রকল্প এবং ব্যারেজ নির্মাণ করেছে। সমালোচিত ইন্টার রিভার লিংকিং প্রকল্পের মাধ্যমে এসব প্রকল্প ও ব্যারেজের জন্য আগেই গঙ্গার পানি প্রত্যাহার করা হচ্ছে। তাই ফারাক্কা পয়েন্টে কত পানি পাচ্ছি তা নিয়ে আমাদের হৈচৈ না করে পুরো গঙ্গা বেসিন ধরে হিসাব নিতে হবে।