বাবার পর মায়ের মৃত্যু সড়ক দুর্ঘটনায়, শোকে বাকরুদ্ধ সন্তান
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৩৮ পিএম, ২৭ মার্চ,শনিবার,২০২১ | আপডেট: ০২:৫০ পিএম, ১৯ নভেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
রাজশাহীর কাটাখালীতে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো কামরুন্নাহার বেগমের একমাত্র সন্তান মেহেদী হাসান তুবা (২০)। সে এবার উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছেন।
তার বাবা শাহজাহান মন্ডল তোতা ২০০০ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। ঠিক ২ দশক পর তার বাবার মতোই সড়কে প্রাণ গেল মা কামরুন্নাহার বেগমের। এখন বাবার পর মাকে হারিয়ে শোকে বাকরুদ্ধ একমাত্র সন্তান মেহেদী।
সরেজমিনে আজ শনিবার ঘুরে দেখা গেছে, শুধু মেহেদীই নয় এমন আহাজারির দৃশ্য পীরগঞ্জ উপজেলার ৫ গ্রামে চলছে। কেউ হারিয়ে বাবা-মাকে, কেউ হারিয়েছে ছেলে-মেয়েকে কেউবা হারিয়েছে স্বজনকে। তাদের আহজারি আর কান্নার রোলে ভারি এক হৃদয় বিদায়ক পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে।
কথা হয় মা হারানো মেহেদী হাসান তুবা’র সাথে। ‘বাকরুদ্ধ হয়ে চাপাকান্না সাথে বলছে, কে জানে বাবার পর মাকেও সড়ক দুর্ঘটনায় হারাতে হবে। আমারো যাওয়ার কথা ছিলো ওই বাসে রাজশাহীতে। যাওয়ার সময় মা বলেছিলো রাতের মধ্যে ফিরে আসবে।
কিন্তু এখন আমার মা জীবিত না মরদেহ হয়ে ফিরে আসবে। আমার যে আর কেউ থাকল না। খালা-খালুর সঙ্গে বেড়াতে গিয়ে মা আমাকে ছেড়ে গেল।
মেহেদী হাসান বলেন, আমার বয়স যখন আড়াই মাস তখন আব্বা মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মারা যান। মা আমাকে আগলে রেখে বড় করেছে। আমাকে নিয়ে তার অনেক স্বপ্ন ছিল। সবাই আমার আব্বার মতোই সড়কে মারা গেল।
আমার খালা-খালুও আমাকে খুব ভালোবাসতো। আজ তারা কেউই বেঁচে নেই। ঘুম থেকে দেরিতে উঠায় শুধু আমিই প্রাণে বেঁচে গেলাম।
নিহতের স্বজন ও স্থানীয়রা জানান, গতকাল শুক্রবার বেলা পৌনে ২টার দিকে রাজশাহীর কাটাখালীতে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় চার শিশুসহ ১৭ জনের সাথে প্রাণ হারান কামরুন্নাহার বেগম। তিনি রংপুরের পীরগঞ্জের চৈত্রকোল ইউনিয়নের বড় রাজারামপুর গ্রামের আব্দুল করিম সরকারের মেয়ে।
তার স্বামী শাহজাহান মন্ডল তোতার ২০ বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়। ছোট বোন শামসুন্নাহার (৩২) ও ছোট বোনের স্বামী সালাহ উদ্দিনের (৩৮) সঙ্গে কামরুন্নাহারও রাজশাহীতে বেড়াতে গিয়েছিলেন।
কাটাখালীতে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় কামরুন্নাহারসহ (৩৭) তার ছোট বোন, বোনের স্বামী এবং ৮ বছরের ছেলে সাজিদ ও আঠারো মাসের মেয়ে সাফা প্রাণ হারান।
বিষয়টি নিশ্চিত করে রংপুরের পীরগঞ্জ থানার ওসি সরেস চন্দ। তিনি জানান,‘রাজশাহীর ওই দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৭ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। লাশ দ্রুত পীরগঞ্জে আনার চেষ্টা চলছে। দুর্ঘটনাকবলিত মাইক্রোবাসে চালকসহ ১৮ জন যাত্রী ছিলেন বলে তিনি জানান।