বিলখুকশিয়ার সেচ প্রকল্প বন্ধ, আড়াই হাজার হেক্টর জমি অনাবাদি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:১৩ পিএম, ২৫ মার্চ,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ১০:৫৪ পিএম, ১০ নভেম্বর,রবিবার,২০২৪
যশোরের মনিরামপুর ও কেশবপুরে বিলের পানি নিষ্কাশনে সেচ কার্যক্রম মাঝপথে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আসন্ন বোরো মৌসুমে ২ হাজার ৫‘শ হেক্টর জমি আনাবাদি রয়ে গেছে।
এলাকার কৃষকদের অভিযোগ, সেচ প্রকল্পের টাকা নয়ছয়ের কারণে মাঝপথে এর কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে।
এ সমস্যা নিরসনে গত মঙ্গলবার (২৩ মার্চ) থেকে সংশ্লিষ্ট এলাকার চেয়ারম্যানের উদ্যোগে শত শত কৃষক স্বেচ্ছাশ্রমে বিলের পানি নিষ্কাশনে ডায়ের খালের ৮ ব্যান্ডের জলকপাটের পলি অপসারণ কাজ চলিয়ে যাচ্ছেন।
খবর পেয়ে পাউবো‘র কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দেন। শ্রীনদী পলিতে ভরাটের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা যায়।
উপজেলা কৃষি অফিসের ভাষ্যমতে, কেশবপুরের পূর্বাংশের বিলখুকশিয়া ও সাতাশ বিল এলাকায় ১ হাজার হেক্টর জমি রয়েছে। ঘেরের পানি নিষ্কাশন করে বছরের একমাত্র ফসল বোরো আবাদের শর্তে এ সমস্ত জমিতে মৎস্য ব্যবসায়ীরা মাছের ঘের করেছেন।
শ্রীনদী ভরাটের কারণে চলতি বছর মনিরামপুরের পূর্বাংশ, কেশবপুরের বিলখুকশিয়া ও সাতাশ বিলে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়ায় বোরো আবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।
এ লক্ষে গত ৯ জানুয়ারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এসএম রুহুল আমীনকে আহবায়ক, উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক মফিজুর রহমানকে সদস্য সচিব ও সুফলাকাটি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান এসএম মুনজুর রহমানকে কোষাধ্যক্ষ করে বিলের পানি নিষ্কাশন নিরসন প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি নামে ১৯ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়।
গত ১৫ জানুয়ারী থেকে বিলখুকশিয়ার ওয়াপদা বেঁড়িবাধের ওপর ১৩৪টি ডিজেল চালিত সেচ পাম্প বসিয়ে এ প্রকল্পের সেচ কার্যক্রম শুরু করা হয়। গত ১৫ ফেব্রুয়ারী বিলখুকশিয়া ও সাতাশ বিল এলাকা জলাবদ্ধ রেখে পূর্বঘোষণা ছাড়াই সেচ কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়।
ফলে মনিরামপুর ও কেশবপুরের ২ হাজার ৬‘শ ৬৬ হেক্টর জমি জলাবদ্ধতার কারণে কৃষকরা এবার বোরো আবাদ থেকে বঞ্চিত হয়। পানি নিষ্কাশন সম্ভব হলে এসব জমিতে ১৫ হাজার মেট্রিকটন ধান উৎপাদিত হতো। এতে কৃষকরা প্রায় ৩০ কোটি টাকার ক্ষতির সন্মুখিন হয়েছেন।
সুফলাকাটি ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার আব্দুল গফফার অভিযোগ করে বলেন, মনিরামপুরসহ বিলখুকশিয়া ও সাতাশ বিলের পানি নিষ্কাশনে রশিদ ছাড়াই প্রায় কোটি টাকা আদায় করা হয়েছে। ওই প্রকল্পের কোষাধ্যক্ষ টাকা আদায় করে নয়ছয় করেছেন। তিনি কমিটির কাছে সেচ প্রকল্পের আয় ব্যয়ের হিসেব দাখিল না করেই সেচ কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়ায় কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এতে মনিরামপুর এলাকার কৃষকরা লাভবান হয়েছে।
এ ব্যাপারে সেচ প্রকল্পের কোষাধ্যক্ষ এসএম মুনজুর রহমান বলেন, বিলখুকশিয়া ও সাতাশ বিলের পানি নিষ্কাশনে ১৩৪টি ডিজেল চালিত সেচ পাম্প বসানো হয়েছিল। এর মধ্যে ১২৬টি চালু ছিল। এক মাসের অধিক সেচ কার্যক্রম চালাতে প্রায় ৮০ লাখ টাকা খরচ করা হয়ে গেছে। এর মধ্যে ঘের মালিক ও এলাকার কৃষকদের কাছ থেকে ৬২ লাখ টাকা আদায় করা হয়েছিল। কোন নয়ছয় হয়নি। অর্থাভাবে শেষ পর্যন্ত সেচ কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে।
সুফলাকাটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাস্টার আব্দুস সামাদ বলেন, পানি নিষ্কাশন কাজ মাঝপথে বন্ধ হওয়ায় তার নের্তৃত্বে এলাকার শত শত কৃষক গত মঙ্গলবার থেকে ওই বিলের পানি নিষ্কাশনে শ্রীনদীর ডায়ের খালের ৮ ব্যান্ডের জলকপাটের দু‘পাশের পলি স্বেচ্ছাশ্রমে অপসারণ কাজ চলিয়ে যাচ্ছেন।
প্রথম দিনেই জলকপাটের দুটি কপাট খুলে দেয়া হয়েছে। এতে দ্রুত বিলের পানি নামছে ফলে নদীর গভীরতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর সুফল আগামী বর্ষা মৌসুমে জনগণ ভোগ করবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মুন্সি আছাদুল্লাহ বলেন, ৬ মাস আগে খালটি খনন করা হলেও শ্রীনদীতে ব্যাপকভাবে পলি জমছে। যে কারণে কিছুদিন যেতে না যেতেই আবার পলিতে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। ভবদহ প্রকল্পের মধ্যে শ্রীনদী অন্তর্ভূক্ত রয়েছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ৮৮০ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত এ সমস্যার সমাধান হবে না।