সড়কে নিহত ১৬
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:১২ এএম, ২২ মার্চ,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ১১:৩৭ এএম, ২২ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
প্রতিদিনই সড়কে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল ভারী হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় আজ রবিবার সড়ক দুর্ঘটনায় ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ফরিদপুরে পৃথক ৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১২ জন, চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে কাভার্ডভ্যানের ধাক্কায় এক মোটরসাইকেল আরোহী, সাভারে পুলিশসহ নিহত ৩ হয়েছেন।
ফরিদপুর : ফরিদপুরে পৃথক ৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ফরিদপুরের মধুখালীতে মাইক্রোবাস-ট্রাকের সংঘর্ষে শিশু ও নারীসহ ৯ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে এক পরিবারের ছয় সদস্য রয়েছেন। রবিবার সকাল সাতটার দিকে ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার মাঝকান্দিতে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে দুইজন ঘটনাস্থলে নিহত হন। চারজনকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনার পর মৃত ঘোষণা করা হয়। বাকি তিনজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
নিহত ৯ জনের মধ্যে সাতজন একই পরিবারের সদস্য। তারা হলেন ২০১৯ সালের নভেম্বরে ঢাকার আশুলিয়াতে প্রতিপক্ষের ধরিয়ে দেওয়া আগুনে নিহত তৃতীয় লিঙ্গের সদস্য (হিজড়া) মেহের ওরফে কাজলীর মা মিয়াজান বিবি (৬৮), বোন আমেনা বেগম (৪৮), স্ত্রী কুটি বিবি (৪২), মেয়ে মরিয়ম (২৫), জামাতা জুয়েল রানা (৩২) এবং মরিয়ম-জুয়েলের চার মাসের শিশু মুজাহিদ। নিহত অপর তিনজন হলেন আইনজীবী আব্বাসউদ্দিন (৪৮), গ্রামের মাতব্বর নজরুল ইসলাম (৬০) ও গাড়ি চালক আল আমিন (৩০)। এছাড়া দুর্ঘটনায় আহত মন্টু (৫০), মো. কুদ্দুস (৩০), মুন্নী (৩৫) ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
করিমপুর হাইওয়ে থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. কাওসার হোসেন জানান, দুর্ঘটনার শিকার মাইক্রোবাসটি (ঢাকা মেট্রো- ৫৩-৩৫৩৩) ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক ধরে ঝিনাইদহের দিক থেকে ফরিদপুরের দিকে আসছিল। ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার মাঝকান্দির মোড়ে পারিশা ফিলিং স্টেশন থেকে একটি ট্রাক (চট্ট- মেট্রো-ট-১১-৯৬২৭) তেল ভর্তি করে মহাসড়কে ওঠার সময় ওই মাইক্রোবাসটির সাথে সামনের দিক থেকে সংঘর্ষ হলে এ দুর্ঘটনা ঘটে। তিনি বলেন, এ দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলে একজন নারী ও একজন পুরুষসহ দুইজন নিহত হন। আহত হন মাইক্রোবাসের আরও ১০ জন যাত্রী।
মধুখালী দমকল বাহিনীর স্টেশন কর্মকর্তা টিটোব সিকদার বলেন, আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এদিকে মেডিকেল হাসপাতালে আনার পর চার জনকে তাৎক্ষণিকভাবে মৃত ঘোষণা করা হয়। বাকি তিনজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকেল চারটার মধ্যে মারা যান।
ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক মো. সাইফুর রহমান বলেন, হাসপাতালে আনার পর চারজনকে মৃত ঘোষণা করে কর্তব্যরত চিকিৎসক। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও তিনজন মারা যান। ফরিদপুরে মৃতদেহগুলো বুঝে নিতে এসেছিলেন ঝিনাইদহের মহেষপুর উপজেলার কাজীর বেড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেযারম্যান বি এন সেলিম রেজা। সামন্তখোলা গ্রামটি কাজীর বেড়া ইউনিয়নে অবস্থিত।
ইউপি চেয়ারম্যান বি এন সেলিম রেজা বলেন, আমার ইউনিয়নের জন্য এটি একটি বিপর্যয়কর ঘটনা। স্মরণকালের ইতিহাসে আমাদের ইউনিয়ন এতগুলো লাশ একসাথে দেখেনি। জানিনা মৃতদেহগুলো গ্রামে নিয়ে যাওয়ার পর সেখানে কি পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। সারা ইউনিয়নে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
ফরিদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাসুম রেজা, জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার সীমা রানী সাহা ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শন করেছেন। ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, নিহত প্রত্যেককে ১৫ হাজার করে টাকা দেওয়া হবে। অন্যদের আর্থিক পরিস্থিতি দেখে পরবর্তীতে তাদের সহযোগিতা করা হবে।
এছাড়া ফরিদপুরের ভাঙ্গায় সড়ক দুর্ঘটনায় ২ শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে। শনিবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে ঢাকা-খুলনা মহসড়কের ভাঙ্গা পৌরসভার আতাদী নামক স্থানে মোটরসাইকেল ও প্রাইভেট কারের সংঘর্ষে মোটরসাইকেল আরোহী ২ শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে।
এলাকাবাসী ও ভাঙ্গা হাইওয়ে থানা সূত্রে জানা যায়, শনিবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে ভাঙ্গার কাউলীবেড়া গ্রামের এক বন্ধুর বাড়ি থেকে দাওয়াত খেয়ে ভাঙ্গা পৌর সদরের বাড়িতে ফেরার পথে ভাঙ্গার আতাদী নামক স্থানে মোটরসাইকেল ও প্রাইভেট কারের মুখোমুখি সংঘর্ষ হলে ঘটনাস্থলেই ২ মোটরসাইকেল আরোহীর মৃত্যু হয়।
এরা হলেন ভাঙ্গা পৌরসভার হোগলাডাঙ্গী মহল্লার আবু তালেব ফকিরের ছেলে নাইমুর রহমান রনি ফকির (২০) ও পৌরসভার চৌধুরীকান্দা সদরদী মহল্লার শফিকুল ইসলাম খানের ছেলে শাকিল খান (২২)। এ সময় এদের আরেক বন্ধু ভাঙ্গার কাউলীবেড়া মোটরা গ্রামের হানিফ চোকদারের ছেলে অপু চোকদার (২৪) আহত হয়।
দুর্ঘটনায় পর প্রাইভেট কারের সকলেই গাড়ি সড়কের পাশে ফেলে পালিয়ে যায়। পুলিশ মোটরসাইকেল ও প্রাইভেট কার থানায় নিয়ে আসে। নিহত নাইমুর রহমান রনি ফকির ঢাকার বনশ্রী আইডিয়াল কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ও শাকিল খান ঢাকার তেজগাঁও কলেজের বিবিএ অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওমর ফারুক জানান, রাতে দুর্ঘটনার খবর পেয়ে হাইওয়ে থানা পুলিশ ও দমকল বাহিনীর সদস্যরা লাশ দুটি উদ্ধার করে। আহত ব্যক্তিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এছাড়াও ভাঙ্গায় ট্রেনে কাটা পড়ে এক তরুণের মৃত্যু হয়েছে। আজ রবিবার সকাল সোয়া ৮টার দিকে ভাঙ্গা উপজেলার মানিকদহ ইউনিয়নের ব্রাহ্মণপাড়া গ্রামে রাজবাড়ী-ভাঙ্গা রেল সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে কাভার্ডভ্যানের ধাক্কায় আবদুল খালেক (৩৫) নামের এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। এতে মঞ্জু নামের আরেকজন গুরুতর আহত হয়েছেন। নিহত আবদুল খালেক চসিকের ১ নম্বর ওয়ার্ড উত্তর ফতেয়াবাদের মৃত ইমাম শরীফের ছেলে। আজ রবিবার দুপুর ২টায় হাটহাজারী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।
হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, হাটহাজারীতে কাভার্ডভ্যানের ধাক্কায় এক বাইক আরোহী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় কাভার্ডভ্যান চালক পালিয়ে গেছে। তবে ভ্যানটি আটক করা হয়েছে।
সাভার : সাভারের আজ রবিবার পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় পুলিশ সদস্যসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিরা হচ্ছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কনস্টেবল মিজানুর রহমান (৫০), কলেজছাত্র রায়হান মিয়া (২৫) ও অজ্ঞাত পরিচয় এক যুবক (৩৫)। এদের মধ্যে পুলিশ সদস্য মিজানুর রহমান ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের শাহআলী থানায় কর্মরত ছিলেন।
আজ রবিবার দুপুরে মোটরসাইকেল নিয়ে কর্মস্থল থেকে নিজ গ্রাম ধামরাই উপজেলার রোয়াইল ইউনিয়নের কৃষ্ণনগরে যাওয়ার পথে একটি পেট্রল পাম্পের সামনে দুর্ঘটনার শিকার হন তিনি। আশঙ্কাজনক অবস্থায় ওই পুলিশ সদস্যকে সাভারে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি ধামরাইয়ের কৃষ্ণনগর গ্রামের জিন্নত আলীর ছেলে।
অন্যদিকে সাভারের পাকিজা এলাকায় ভোরে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান সাভার সরকারি কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী রায়হান মিয়া। নিহত রায়হান মিয়া কোর্টবাড়ি এলাকার রতন মোল্ল্যার ছেলে। পুলিশ জানিয়েছে, পেছন থেকে আসা দ্রুত গতির একটি ট্রাক রায়হানকে চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়।
এ সময় স্থানীয়রা তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন। এ ছাড়া আশুলিয়ার মড়াগাং এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন অজ্ঞাত পরিচয় এক যুবক (৩৫)। নিহত তিনজনের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়েছে।