যাদুকাটা নদীতে চলছে বালি, পাথর ও কয়লা বাণিজ্য, আটক- ১
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৫৪ পিএম, ২১ মার্চ,রবিবার,২০২১ | আপডেট: ০১:৪২ এএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
সুনামগঞ্জের সীমান্ত নদী যাদুকাটা। এই নদীতে রয়েছে মহা মূল্যবান খনজি সম্পদ কয়লা, বালি ও পাথর। এসব খনিজ সম্পদ থেকে প্রতি বছর সরকার পেয়ে থাকে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব। কিন্তু সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালীরা প্রতিবছর অবৈধ ভাবে কয়লা, বালি ও পাথর বিক্রি করে ইতিমধ্যে হয়ে গেছে কোটিপতি।
সম্প্রতি অবৈধভাবে জাদুকাটা নদীর তীর কেটে বালি ও পাথর উত্তোলনের ছবি তোলার কারণে একটি জাতীয় দৈনিকের স্থানীয় সাংবাদিককে গাছে বেঁধে নির্যাতন করে জাদুকাটা নদীর অবৈধ ব্যবসায়ীরা।
এঘটনার প্রেক্ষিতে মামলা হাওয়ার পর প্রশাসনিক দৌড়ঝাপ বৃদ্ধি পায়। কিন্তু বন্ধ হয়নি যাদুকাটা নদীর বৈধ কয়লা, বালি ও পাথর উত্তোলন ও বিক্রি।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে- গতকাল শনিবার (২০শে মার্চ) সন্ধ্যায় যাদুকাটা নদীর চিহ্নিত অবৈধ বালি ও পাথর ব্যবসায়ী কিরন রায় (৪৫) কে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ।
গত শুক্রবার রাতে অভিযান চালিয়ে জাদুকাটা নদী কেটে ও অবৈধ কোয়ারী থেকে উত্তোলনকৃত ৫ লক্ষ টাকা মূল্যের ৫ হাজার ঘনফুট পাথরও জব্দ করা হয়। ওই সময় কিরন রায়কে গ্রেফতার করার পর তার সহযোগীরা পালিয়ে যায়।
গ্রেফতারকৃত কিরন রায় জেলার তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের গড়কাটি গ্রামের মৃত বরদা রায়ের ছেলে। তার নেতৃত্বে প্রায় শতাধিক শ্রমিক অবৈধ ভাবে জাদুকাটা নদীর তীর কেটে ও পাথর কোয়ারী থেকে প্রতিবছর কয়েক কোটি টাকার মূল্যের বালি ও পাথর বিক্রি করে।
তার সহযোগীরা এখনও বহাল তবিয়তে ৩০ থেকে ৪০টি অবৈধ কোয়ারী পরিচালনা করছে। অপরদিকে লাউড়গড় বিজিবি ক্যাম্পের সামনে দিয়ে যাদুকাটা নদীতে চলছে অবৈধ কয়লা ও পাথর ব্যবসায়ীদের জমজমাট বাণিজ্য।
সোর্স পরিচয়ধারী আমিনুল মিয়া, নাজিম মিয়া, নবীকুল মিয়া, নুরু মিয়াগং সিন্ডিকেডের মাধ্যমে সীমান্তের নো-ম্যন্সল্যান্ডে অবস্থিত ১২০৩নং পিলার অতিক্রম করে যাদুকাটা নদী দিয়ে ভারতের সীমানা থেকে প্রতিদিন অবৈধভাবে হাজার হাজার মেঃটন কয়লা ও পাথর ট্রলি বোঝাই করে আনছে।
লক্ষলক্ষ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে প্রতিদিন অবৈধ ভাবে কয়লা ও পাথর পাচার করলেও এব্যাপারে আজ পর্যন্ত নেওয়া হয়নি কোন পদক্ষেপ। সম্প্রতি যাদুকাটা নদী দিয়ে অবৈধ ভাবে কয়লা পাচার করা নিয়ে চোরাচালানী ও বিজিবির মধ্যে গুলাগুলি ও সংঘর্ষ হয়।
এঘটনার প্রেক্ষিতে গ্রাম্য সালিশ ও থানায় মামলা হয়েছে। তারপরও বন্ধ হয়নি যাদুকাটা নদীর অবৈধ ব্যবসা।
যাদুকাটা নদীর তীর কেটে ও অর্ধ শতাধিক পাথর কোয়ারী তৈরি করে কয়লা, বালি ও পাথর উত্তোলেনের ফলে ঘাগটিয়া, গরকাটি, আদর্শগ্রাম, মানিগাঁও, বিন্নাকুলী, মোদেরগাঁও এলাকা দিয়ে ইতিমধ্যে সহশ্রাধিক ঘরবাড়ি ও শতশত একর ফসলী জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
এব্যাপারে নির্যাতিত সাংবাদিক দৈনিক সংবাদ এর তাহিরপুর প্রতিনিধি ও উপজেলা প্রেসক্লাবে সাংগঠনিক সম্পাদক কামাল হোসেন রাফি বলেন- প্রশাসনিক তৎপরতার কারণে মাঝে মধ্যে অবৈধ কোয়ারী ও যাদুকাটা নদীর পাড় কেটে বালি-পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকে। তবে অবৈধ বালি ও পাথর ব্যবসায়ীরা এখনও বহাল তবিয়তে রয়ে গেছে।
তারা যাদুকাটা নদীর তীরে অবৈধ ভাবে কয়েক কোটি টাকা মূল্যের বালি ও পাথার মজুত করে রেখেছে। অবৈধ বালি ও পাথর জব্দ করে প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদেরকে শীগ্রই আইনের আওতায় নেওয়া জন্য প্রশাসনের উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
তাহিরপুর থানার ওসি আব্দুল লতিফ তরফদার বলেন- যাদুকাটা নদীর তীর কেটে ও কোয়ারী থেকে অবৈধ ভাবে পাথর উত্তোনের অপরাধে কিরণ রায়কে গ্রেফতার করে মামলা দিয়ে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
বেআইনি ভাবে যাদুকাটা নদীতে বালু ও পাথর উত্তোলন কাজে যারাই জড়িত থাকুন না কেন তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবেনা। আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।