ত্রিমুখী দ্বন্দ্বে স্থবির জনজীবন, রৌমারী নৌঘাটে আটকে রয়েছে ১০ টাকা দরের চাল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:৩৯ পিএম, ১৮ মার্চ,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ০৩:০৪ পিএম, ১৯ নভেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
কুড়িগ্রামের রৌমারীতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির ১০ টাকা দরে কেজির চাল তিন দিন ধরে নৌকা ঘাটে আটকে রয়েছে। সম্প্রতি ট্রাক্টর দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে এলাকাবাসী। ফলে সাময়িকভাবে ট্যাফে ট্রাক্টর (কাঁকড়া) চলাচল নিষিদ্ধ করে দেয় স্থানীয় প্রশাসন।
আদেশ অমান্যের অপরাধে ট্যাফে ট্রাক্টরের দুই ড্রাইভারকে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে ১৫দিনের জেল দেওয়া হয়। এ কারনে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে ট্যাফে ট্রাক্টর মালিক-শ্রমিকরা। এই ত্রি-মুখী দ্বন্দ্বে স্থবির হয়ে পড়েছে উন্নয়ন কার্যক্রম ও জনজীবন।
আজ বৃহস্পতিবার (১৮ মার্চ) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রৌমারী নৌকা ঘাটে আটকে আছে খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির ১২০ মেট্রিক টন চাল। এছাড়াও রয়েছে চিলমারী ডিপো থেকে নিয়ে আসা শতাধীক ডিজেল ভর্তি ড্রাম ও রৌমারী বাজারের মালামাল দোকানদারদের নিত্যপণ্য সামগ্রী।
অপর দিকে মাটি, ইট, সিমেন্ট, পাথর ও বালু আনতে না পারায় ব্যহত হচ্ছে দাঁতভাঙ্গা-জামালপুর সীমান্ত পর্যন্ত প্রায় ৪০কি.মি মহাসড়ক ও ব্রহ্মপুত্র নদের ৩কি.মি তীর সংরক্ষণ কাজসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প।
১০টাকা দরে কেজির কার্ডধারী হতদরিদ্র সাইফুল ইসলাম বলেন, বাজারের ভালো চালের দাম ৬০-৭০টাকা। আমাদের গরিবের মোটা চাল ৪৫টাকা কেজি, যা আমার কেনার সামর্থ্য নাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ১০টাকা দরে চাল সেটাও পাইনা, এখন কি খেয়ে বাঁচি।
এনিয়ে কথা হয় খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির ডিলার স্বাধীন মিয়া জানান, আমরা ডিলাররা ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে ডিও লিটার নিয়ে বসে আছি। কিন্তু গুদামে চাল না থাকায় কার্ডধারীদের চাল দিতে পারছি না।
এদিকে রৌমারী-ঢাকা সড়ক ও জনপদের ঠিকাদার মেসার্স মীর হাবিবুল আলম ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মালিক বখতিয়ার হোসেন বলেন, মাটি, ইট, পাথর ও বালু আনা-নেওয়ার গাড়ী বন্ধ থাকায় সড়ক উন্নয়নের কাজ বন্ধ রয়েছে। সামনে বৃষ্টি-বাদলের দিন আসছে। সঠিক সময়ে মাটি-বালুর কাজগুলো করতে না পারলে এ বছরে আর করা যাবে না। ফলে জনভোগান্তি আরও বেড়ে যাবে।
রৌমারী বাজারের ব্যবসায়ী মোয়াজ্জেম হোসেন মাছুম জানান, রৌমারী উপজেলা উন্নয়ন কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটাতে ওঠে পড়ে লেগেছে একটি কুচক্র মহল। এদের চিহ্নত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনা দরকার। তা না হলে উন্নয়ন কার্যক্রম ব্যহত হবে, জনভোগান্তি আরও বেড়ে যাবে।
ডিলারদের কেনো চাল দেওয়া হচ্ছে না এক প্রশ্নের জবাবে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো.ইশকে আব্দুল্লাহ বলেন, উপজেলার বরাদ্দকৃত খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির ২২০ মেট্রিক টন চাল কুড়িগ্রাম খাদ্য গুদাম থেকে আনতে হয়।
পরিবহন জটিলতার কারনে রৌমারী নৌকাঘাটে ১২০ মেট্রিক টন চাল আটকে রয়েছে। বাকি চালগুলো কুড়িগ্রাম গুদামেই রয়েছে। ফলে রৌমারী উপজেলার ১৪হাজার ৫৯৪জন কার্ডধারীর চাল বিতরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবগত করা হয়েছে।
ট্যাফে ট্রাক্টরে মালিক মো.কানু মিয়া জানান, রৌমারী উপজেলার বেশী ভাগ রাস্তায় ট্যাফে ট্রাক্টর ছাড়া চলাচলে অনুপযোগী। ফলে বেশী ভাগ মালিক ব্যাংকে লোন নিয়ে কিস্তিতে এ ট্যাফে ট্রাক্টর কিনেছি। গাড়ী না চললে আমরা কিস্তি পরিশোধ করবো কি করে?
ট্যাফে ট্রাক্টরের মালিক মো.রকিব মন্ডল, আবু তালেব, হারিজুল হক ও সুজন মিয়া বলেন, উপজেলায় প্রায় ২শতাধীক ট্যাফে ট্রাক্টর রয়েছে। প্রতিটি গাড়ীতে ৫জন করে শ্রমিক কাজ করে। গাড়ী বন্ধ থাকায় প্রায় ২হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। মানবিক কারনে দ্রুত ট্যাফে ট্রাক্টর চলাচলের অনুমতির দাবি জানাচ্ছি।
রৌমারী উপজেলা ট্যাফে ট্রাক্টর মালিক সমিতির সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম মিনু বলেন, উপজেলা প্রশাসন থেকে মাইকিং করে ট্যাফে ট্রাক্টর চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। ফলে আমাদের গাড়ী বন্ধ রয়েছে। জরুরী প্রয়োজনে প্রশাসন চাইলে আমরা গাড়ী দিবো।
তিনি আরও জানান, গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় মালিক-শ্রমিক মিটিং করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ড্রাইভারদের লার্নার ও লাইসেন্স নেওয়ার জন্য বলে দিয়েছি এবং নদী থেকে উত্তোলনকৃত বালু পরিবহন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এব্যাপারে রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল ইমরান বলেন, এখানে কয়েকটি গ্রুপ হয়েছে, বিষয়টি নিরসন করা খুবই জটিল। আমি চেষ্টা করছি দ্রুত সমাধানে নিয়ে আসার জন্য।