শায়েস্তাগঞ্জ বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট, শুকিয়ে গেছে খাল-পুকুর
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:০৯ পিএম, ৮ মার্চ,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ০৫:১৬ পিএম, ১৭ নভেম্বর,রবিবার,২০২৪
হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলাসহ আশপাশের বিস্তীর্ণ এলাকায় বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।
এখন ফাল্গুন মাস চলছে, সামনে আসছে চৈত্র মাস। এসব মৌসুমে পর্যাপ্ত পরিমাণে বৃষ্টিপাত না হওয়ার কারণেই দেখা দেয় পানির শূন্যতা। শুকিয়ে যায় খাল-পুকুর। এর বাইরে শুষ্ক মৌসুমে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অপেক্ষাকৃত নিম্নগামী হওয়ার কারণে প্রতি বছরই এ সংকটে পড়তে হয় এ এলাকার লোকজনের।
মূলত এ সংকটের সূত্রপাত হয় প্রায় বছর দশেক পূর্ব হতে। প্রাকৃতিক ভাবে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমশ নিম্নগামী হওয়াতে এ সংকট ধীরেধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতি বছর নভেম্বর-ডিসেম্বর মাস থেকে এসব এলাকায় সাধারণ টিউবওয়েলের পানির প্রবাহ হ্রাস পেতে থাকে।
ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে এসব অগভীর নলকূপগুলোর পানির প্রবাহ একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। ফলে এলাকার বাসিন্দারা সু-পেয় পানির অভাব অনুভব করতে থাকেন। এলাকাব্যাপী দেখা দেয় পান যোগ্য পানির সংকট।
শায়েস্তাগঞ্জে বেশ কিছু অঞ্চলে উঁচু টিলার উপরে সাধারণ মানুষের বাড়ি, ওইসব অঞ্চলে সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দেয়। এ সময়ে ভূগর্ভস্থ পানিরস্তর নিম্নগামী হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে বিদ্যুৎ চালিত পাম্পের সাহায্যে গভীর নলকূপের মাধ্যমে ধান চাষসহ অন্যান্য ফসলী জমিতে সেচের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করা।
শীত মৌসুমে রবি শস্যসহ বিভিন্ন ফসল চাষে প্রচুর পরিমাণে পানি সেচের প্রয়োজন হয়। তাই নদী নালা, খাল, বিল, পুকুরসহ অন্যান্য সকল জলাধারই পানিশূন্য হয়ে পড়ায় বাধ্য হয়েই ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন অপরিহার্য হয়ে পড়ে।
বিশুদ্ধ পানির অভাব দূরীকরণে এলাকার সচ্ছল ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বাড়ির আঙ্গিনায় ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা ব্যয়ে ডিপ-টিউবওয়েল স্থাপন করা হয়েছে। ওই ডিপ-টিউবওয়েলগুলো ব্যক্তি মালিকানাধীন হওয়াতে অনেকেই সেখানে চাইলেই যেতে পারেন না। লোকলজ্জা আর দূরত্ব ভয় তাদেরকে যেতে দেয় না। তারপরও প্রায়শ বাধ্য হয়েই যেতে হয় পান-যোগ্য পানির প্রয়োজন মেটাতে।
এ পানি সংকট বিষয়ে পৌরসভার মহলুলসুনামের বাসিন্দা তাফহিম চৌধুরী জানান, উনার বাড়ির অগভীর নলকূপটির পানি প্রবাহ ইতোমধ্যেই বন্ধ হয়ে গেছে, এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন।
আরেক ভুক্তভোগী দাউদনগর গ্রামের জুনায়েদ চৌধুরী জানান, উনার বাড়িতে ২৮০ ফুট গভীরতা সম্পন্ন টিউবওয়েলটির পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। তিনি ১৫ হাজার টাকা ব্যয়ে একটি মোটর সংযোগের মাধ্যমে আপাতত পানির অভাব পূরণ করতে পেরেছেন। তিনি আরও বলেন, মার্চ এপ্রিলের মধ্যে যদি বৃষ্টিপাত নাহয় তা হলে উনার সমস্ত প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হয়ে যাবে।
আর বিরামচর গ্রামের আহমেদ কবির জানান, উনার অগভীর নলকূপটির পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়াতে তিনি পাশের বাড়ির গভীর নলকূপ থেকে পাইপ লাগিয়ে পানি এনে উনার পানি সংকট থেকে আপাতত রক্ষা পেয়েছেন।
ভূগর্ভস্থ পানিরস্তর নিম্নগামীতার সাথে পাল্লা দিয়ে কমতে থাকে পুকুরের পানিও। এ ধারা অব্যাহত থাকলে অচিরেই পরিবেশে বিরূপ প্রভাবের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায়না। এ এলাকায় রাষ্ট্রেয় উদ্যোগে পর্যাপ্ত সংখ্যক গভীর নলকূপ স্থাপনের মাধ্যমে শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার এই পানি সংকট দূর করা সম্ভব বলে মনে করেন অত্র এলাকার সচেতন মহল।
এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নুরুল কবির ভুইয়া বলেন, বিশুদ্ধ পানির সমস্যা এই মৌসুমে হয়েই থাকে, আমি সরেজমিনে বিষয়টি দেখে আসছি। সেচ কাজে ও বিভিন্ন সময় পাম্প দিয়ে অতিরিক্ত পানি তুলার কারণে ওয়াটার লেভেল নিচে চলে আসে, সেজন্যই এমনটি হয়ে থাকে। আমরা পানির সমস্যা সমাধানের জন্য বিভিন্ন প্রজেক্ট হাতে নিয়ে কাজ করছি, পল্লী পানির ব্যবস্থা করছি। এছাড়া ও তারা নলকূপ করে দিচ্ছি।
তারা নলকূপের মাধ্যমে ওয়াটার লেভেল ৪০ ফুট নিচে চলে গেলেও পানি আসে৷ আমাদের হাতে আরও কয়েকটি প্রজেক্ট রয়েছে, সেগুলো করতে পারলে আশা করছি পানির সমস্যা দূরীকরণ করা সম্ভব হবে। এ বিষয়ে শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোঃ মিনহাজুল ইসলাম বলেন, এসময় সব এলাকাতেই পানির স্তর নিচে নেমে যায়। যার ফলে বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দেয়। উপজেলা থেকে ইতিমধ্যে ৭৮ টি অগভীর নলকূপ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এতে কিছুটা হলেও মানুষের কষ্ট লাগব হবে।