ভালুকায় সেফটিক ট্যাংকিতে পড়ে মা-ছেলেসহ ৩ জনের মৃত্যু
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:০৯ পিএম, ৪ মার্চ,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ০৯:৩২ পিএম, ২২ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
খেলতে গিয়ে শিশু, উদ্ধার করতে গিয়ে মা এবং সহযোগীতা করতে গিয়ে এক শ্রমিক তিনজনেই প্রান হারালো সেফটিক ট্যাংকির ভিতর।
গতকাল বুধবার (৩ মার্চ) সন্ধায় ময়মনসিংহের ভালুকার ধীতপুর ইউনিয়নের বহুলী গ্রামের প্রভিটা হ্যাচারীর কোয়ার্টারের সামনে মর্মস্পর্ষি এ ঘটনাটি ঘটে।
খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দু’টি ইউনিট তিন ঘন্টা চেষ্ঠা চালিয়ে ৩ জনের মরদেহ উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ঘটনার সময় বিকেল ৪টার দিকে প্রভিটা হ্যাচারীর সিনিয়র প্রকৌশলী সজল বাগচী’র ৪ বছরের শিশু পুত্র রুহিত বাগচী কোয়ার্টারের সামনে খেলা করছিল। কোয়ার্টারের সামনে হ্যাচারীর ডিমের খোসা ও বর্জ্য অপসারনের জন্য তৈরী সেফটি ট্যাংকির বেশ কয়েকটি মুখ রাখা হলেও একটির ঢাকনার অংশ বিশেষ ভাঙ্গা ছিল। যা চট দিয়ে কৃত্রিম ভাবে ঢেকে রাখা হয়।
শিশুটি খেলা করতে যাওয়ার সময় হঠাৎ ট্যাংকির গর্তে পড়ে যায়। খবর পেয়ে শিশুটির মা শ্রীমতি রুলী রানী বাগচী ট্যাংকিতে ঝাপিয়ে পড়েন সন্তানকে রক্ষা করতে। এ সময় তাঁকে সহায়তা করতে প্রভিটার অপর এক শ্রমিক হৃদয় হাসানও ট্যাংকিতে নামেন কিন্তু কিছু সময় অতিবাহিত হলেও তাদের ওপরে উঠে আসতে না দেখে হ্যাচারীর লোকজন ফায়ার সার্ভিসের সহায়তা চেয়ে ৯৯৯ নাম্বারে ফোন দেয়।
খবর পেয়ে ত্রিশাল ও ময়মনসিংহ থেকে দু’টি ইউনিট দু’জন ডুবুরীসহ ঘটনাস্থলে ছুটে আসে। ততক্ষনে শ্বাসরোধ হয়ে তিনজন ট্যাংকির ভিতরেই মারা যায়। তিন ঘন্টা চেষ্ঠার পর রাত ৯টার দিকে একে একে তিন জনের মরদেহ উদ্ধার করতে সক্ষম হয় ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা।
অভিযান শেষে ফায়ার সার্ভিসের ময়মনসিংহ সিনিয়র ষ্টেশন মাষ্টার আতিকুর রহমান গনমাধ্যমকে জানান, সেফটিক ট্যাংকি অরক্ষিত থাকার কারনেই এ দুর্ঘটনাটি ঘটতে পারে।
অপর দিকে প্রভিটার হ্যাচারীর ম্যানেজার রাশেদুল ইসলাম সবুজ বলেন, ট্যাংকির ঢাকনা সব গুলোই সুরক্ষিত রয়েছে। ঘটনাটি খেলতে গিয়ে ঘটেছে। আকষ্মিক এ ঘটনায় প্রভিটা হ্যাচারী পরিবার মর্মাহত। এ ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার মতো নয়। হ্যাচারী কর্তৃপক্ষ সাধ্যমত চেষ্ঠা করবে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে থাকার।
ঘটনাস্থলে এসে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) মোঃ মাইন উদ্দিন বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে কারো কোন গাফিলতি পরিলক্ষিত নেয়া হবে যথাযথ আইনী ব্যাবস্থা। এ দিকে ঘটনার সংবাদে এলাকার উৎসুক জনতার ভীড় লেগে যায় ঘটনাস্থলে।
উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ, ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফুল আলমসহ নানা বিভিন্ন দায়িত্বশীল ব্যাতিবর্গ ছুটে যান ঘটনাস্থলে। সমাবেশ ঘটে নানা-শ্রেনী পেশার হাজারো নারী-পুরুষের।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা জানান, দুর্গন্ধের কারনে অভিযান পরিচালনা করতে হয়েছে থেমে থেমে। প্রথমে শ্রমিকের লাশ,পরে মায়ের লাশ রাত নয়টার কিছু আগে শিশুটির লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।
পর্যবেক্ষক মহলের মতে ট্যাংকির ঢাকনাটি যথাযথ ভাবে স্থাপিত করা থাকলে এড়ানো সম্ভব হতো এ অনাকাংখিত দুর্ঘটনা।