টেন্ডার না হতেই শুরু না’গঞ্জ সিটি মডেল মসজিদের কাজ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:০৬ পিএম, ৩ মার্চ,
বুধবার,২০২১ | আপডেট: ০৪:২৫ পিএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার আগেই কাজ চলছে নারায়ণগঞ্জ জেলা মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও গণপূর্ত অধিদপ্তর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার কথা থাকলেও রহস্যজনকভাবে সেখানে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন কাজ করছে।
শুধু তাই নয়, গণপূর্ত অধিদপ্তর কাজ করছে বলেও প্রচার করছে সিটি করপোরেশন। কিন্তু গণপূর্ত অধিদপ্তর বলছে যেখানে প্রকল্প বাস্তবায়নে টেন্ডার প্রক্রিয়াই শেষ হয়নি সেখানে তাদের কাজ করার প্রশ্নই আসে না। তাহলে কাজ করছে কারা?
এমন প্রশ্নে সিটি করপোরেশন দাবী করেছেন, তারা মসজিদের পাশের পুকুরটি সংস্কার করে মুসল্লিদের ওজু করার জন্য ঘাটলা করে দিবেন। অথচ মসজিদ কমিটি বলছে এ বিষয়ে তারা কিছুই জানেন না। এবং তাদের সঙ্গে সিটি করপোরেশন কোন আলোচনা করেনি।
ফলে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি সংবাদ সম্মেলন করে মসজিদ কমিটি অভিযোগ করেছেন, মীর শরীয়ত উল্লাহ এস্টেটের মোট ৮২ দশমিক ৯ শতাংশ জায়গার মধ্যে জেলা মডেল মসজিদ নির্মাণের জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে তারা ৪৩ শতাংশ জায়গা ছেড়ে দিয়ে অনাপত্তি পত্র দিয়েছেন। কিন্তু বাকী ৪০ শতাংশের উপর প্রায় ৫৩৯ বছরের পুরাতন মোঘল আমলে নির্মিত একটি মসজিদ ভেঙ্গে ও তার আশপাশের জায়গা দখল করে সেখানে পার্ক এবং বহুতল বাণিজ্যিক ভবন নির্মানের চেষ্টা চালাচ্ছেন সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াত আইভী।
গত ২৩ ফেব্রুয়ারি মসজিদের পক্ষ থেকে নারায়ণগঞ্জ ৪র্থ সহকারী বিচারিক হাকিমের আদালতে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াত আইভীসহ আসামী করা হয়েছে সিটি কর্পোরেশনের ৩ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মালিককে। সংবাদ সম্মেলন থেকে তারা মেয়র আইভী ও সিটি কর্পোরেশনের আগ্রাসন থেকে সুলতানি আমলের এই প্রাচীন মসজিদ এবং ওয়াকফ সম্পত্তি রক্ষার জন্য সরকারের উচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
গতকাল মঙ্গলবার (২ মার্চ) বিকালে সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, মেসার্স জাকির এন্টারপ্রাইজ ও মেসার্স ইকবাল এন্টারপ্রাইজ নামে দুটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন কাজ করছে। এরমধ্যে ইকবাল এন্টারপ্রাইজের একাউন্টস অফিসার মো: আসাদুজ্জামান হিমেল জানান, তারা গত এক মাস আগ থেকে কাজ করছেন।
টেম্পোরালী (অস্থায়ী) ভাবে একটি মসজিদ নির্মাণ করছেন তারা। মসজিদের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। মডেল মসজিদ নির্মাণের সময় যাতে মুসুল্লিরা নামাজ পড়তে পারে। মডেল মসজিদ নির্মাণ সম্পন্ন হলে মসজিদটি পরে ভেঙ্গে ফেলা হবে।
এ বিষয়ে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো: আবুল আমিন দাবী করেন, সিটি করপোরেশন কারো জায়গা দখল করেনি। মসজিদ কমিটির সঙ্গে সিটি করপোরেশনের একাধিক বৈঠক হয়েছে। তাদের সঙ্গে আলোচনার পরই মসজিদের পুকুর সংষ্কার করে সেখানে ঘাটলা করে দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। আর মসজিদের কাজ আমরা করছি না। সেটা গণপূর্ত অধিদপ্তর করছে।
এ ব্যাপারে গণপূর্ত অধিদপ্তর নারায়ণগঞ্জে নির্বাহী প্রকৌশলী হেলাল উদ্দিন বলেন, মন্ডলপাড়ায় মডেল মসজিদ নির্মাণে এখনো টেন্ডার প্রক্রিয়াই শেষ হয়নি। আমরা কেন কাজ করতে যাবো। সকল প্রক্রিয়া শেষে যখন চুড়ান্তভাবে আমাদের কাজ করার জন্য বলবে তখনই আমরা প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ শুরু করবো।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ১২ জানুয়ারী সেখানে নির্মাণ কাজ উদ্বোধনের ভিত্তি প্রস্তুরের নাম ফলক লাগানো হয়েছে। আর আমি এখানে যোগদান করেছি ৩১ জানুয়ারি। ফলে পুরো বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি ঘটনাস্থলে এখনো যেতে পারিনি।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন নারায়ণগঞ্জের উপ পরিচালক মোহাম্মদ জাকির হোসাইন বলেন, প্রায় ১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে জেলা মডেল মসজিদ নির্মাণ প্রকল্পের বাস্তবায়নে রয়েছি আমরা এবং গণপূর্ত অধিদপ্তর। তবে পুরো কাজটি করবে গণপূর্ত অধিদপ্তর। আমরা শুধু তদারিক করবো। তবে এখনো টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হয়নি। টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হলে নির্মাণ কার্যক্রম শুরু হবে। কিন্তু সেখানে কাজ চলছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কারা কাজ করছে আমি জানি না।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আগে নির্মাণ কাজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন ও নামফলকের বিষয়ে আমি জানি না। গণপূর্ত অধিদপ্তর আমাদের দাওয়াত দিয়েছে আমরা গিয়েছি। এটা তারাই ভালো বলতে পারবে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ বলেন, মন্ডলপাড়া মসজিদ নিয়ে নানা আলোচনা হচ্ছে। সেই মসজিদে সিটি কর্পোরেশন কিভাবে সম্পৃক্ত বিষয়টি আমি জ্ঞাত নই। তবে সিটি করপোরেশন কিভাবে সম্পৃক্ত, সে বিষয়ে তাদের কাগজপত্র দেখতে চেয়েছি।
তিনি আরো জানান, মসজিদ কমিটি আদালতে একটি অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আবেদন করেছে বলে আমি শুনেছি। রায়ের কপি হাতে পাইনি। আদালত সাতদিন সময় নিয়েছে। সাতদিনের মধ্যে কেউ ওখানে কোন কাজ করতে পারবে না। কেউ ওখানে কাজ করছে কিনা আমার জানা নেই। তবে ওই সাত দিন কেউ যদি কাজ করে থাকে সেটা আদালত অমান্য হবে।
প্রসঙ্গত, গত ১২ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলা মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ কাজের ভিত্তি প্রস্তুর স্থাপন করেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভী।
এসময় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক আনিস মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন। নামফলকে লেখা রয়েছে নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করবে ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও গণপূর্ত অধিদপ্তর।