সেতু নির্মানের মেয়াদ শেষ, অনিয়মের দায়ে কাজ বন্ধ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:১৫ পিএম, ৩ মার্চ,
বুধবার,২০২১ | আপডেট: ০৩:৫১ পিএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
পাথরের সাথে আগে থেকেই মেশানো বালি, নির্মান সামগ্রী পরিমাণে কম দেওয়া, মোটা বালুর বদলে ধুলাবালি, দিনের পরিবর্তে রাতে চলছে ঢালাই, নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলাধীন কুমারখালী জিসি গোপগ্রাম জিসি সড়কের চেইনেজ এক হাজার একশত মিটারের ২৫ মিটার পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণাধীন কাজের।
এলাকাবাসীর এমন অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় রবিবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বিকালে নির্মাণা কাজ বন্ধ করে দেয় কুমারখালী উপজেলা প্রকৌশলী। এছাড়াও এই গুরুত্বপূর্ণ সেতুর নির্মাণ কাজের মেয়াদ শেষ হলেও দৃশ্যমান কাজ না হওয়ায় বেড়েই চলেছে এলাকাবাসীর ভোগান্তি।
উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ওই সেতুটি নির্মাণে দুই কোটি ৪৯ লক্ষ ৯২ হাজার ১৯৯ টাকা পাঁচ পঁয়সায় গেল বছরের (২০২০ সাল) ১২ ফেব্রুয়ারি চুক্তি সম্পন্ন করেন নড়াইল জেলার লোহাগাড়া থানার লক্ষীপাশার মেসার্স নূর কনস্ট্রাকশন। ২০২০ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি কাজ শুরু করার চুক্তি হলেও এ পর্যন্ত পুরাতন সেতুটি ভাঙা অস্থায়ী বাইপাস সড়ক এবং ৫টি পাইলিং করা ছাড়া তেমন অগ্রগতি নেই সেতু নির্মান কাজের।
এরপর নির্ধারিত তারিখের পাঁচ মাস পরে ১৭ জুলাই সেতু নির্মাণ কাজের শুভ উদ্বোধন করেন কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সেলিম আলতাফ জর্জ। উদ্বোধনের পরে ধীর গতিতে নির্মাণ সামগ্রী ফেলা হলেও অগ্রগতি নেই কাজের।
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি শেষ হয়েছে কাজের মেয়াদ। একবছর মেয়াদ কাজের মেয়াদ শেষ হলেও দেখা মেলেনি সেতুর। আরো জানা গেছে, ব্রীজের পিলার নির্মাণে ব্যবহার করা হচ্ছে বালু মিশানো পাথর, মোটা বালি সাথে চিকন বালি ও দিনের পরিবর্তে রাতে চলছে ঢালাইয়ের কাজ।
এলাকাবাসী এমন অনিয়মের অভিযোগ দিলে উপজেলা প্রকৌশলী অফিস অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। এ বিষয়ে কুমারখালী উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পলাশ বলেন, এই সেতুটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ও যানবাহন চলাচল করে। কিন্তু ঠিকাদার পাথরের সাথে বালি ও মোটা বালির সাথে ধুলাবালি মিশিয়ে কাজ করছে। যা সম্পূর্ণ অনিয়ম ও ভবিষ্যতের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
তিনি আরও বলেন, অনিয়মের কথা বললেই চাঁদাবাজীর হুমকি দেয়। হাসান নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, কাজে ব্যাপক অনিয়ম হচ্ছে। এভাবে কাজ হলে সেতুটি যানবাহন চলাচলের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হবে। নাম প্রকাশ না করা শর্তে একজন স্কুল শিক্ষক বলেন, এই সেতুটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এক বছরেরও সেতুটি মুখ দেখতে পারলাম না। মানুষ ও যানবাহন চলাচলের খুব অসুবিধা হচ্ছে।
সেতুটি দিয়ে চলাচলকারী কুমারখালী সরকারি কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্র মুরাদ হোসেন বলেন, পাঁথরে গাঁদা কোঁদাল দিয়ে খুড়লে পাঁথরের বদলে শুধু বালি পাওয়া যাচ্ছে। আর উপরে মোটা বালি থাকলেও ভেতরে ধুলাবালি। তিনি আরও বলেন, অনিয়ম করতেই দিনের কাজ রাতে করে।
এ বিষয়ে জানতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার টিপুকে বারবার ফোন দিলেও তিনি ফোন ধরেননি। কুমারখালী উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুর রহিম বলেন, বালি মিশানোসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে সেতুটির কাজ আপাতত বন্ধ করা হয়েছে। কাজের মেয়াদও শেষ হওয়ার কথা স্বীকার করেন তিনি।