কুষ্টিয়ার উপকারাগার ৪০ বছরেও কয়েদীর মুখ দেখেনি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:০৯ পিএম, ২ মার্চ,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ০৭:০৬ পিএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার উপ-কারাগারটিতে এখন কারারক্ষীর স্থলে ছাগল আর পুরুষ কয়েদীর স্থলে গরুর বসবাস। তবে কারগারটিকে কিশোর অপরাধ দমনে কিশোর শোধানাগার বা উন্নয়ন কেন্দ্রে রুপান্তিত করার গুঞ্জন থাকলেও কোন কার্য্যক্রম চোখে পড়েনি এখনও।
প্রায় ১২ দশমিক ২ একর জমির উপর আশির দশকে অত্যন্ত সুরম্য প্রাচীর বেষ্টিতে নির্মাণ করা হয় কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায় উপ- কারাগারটি। নির্মাণের ৪০ বছরেও নিবাস হিসেবে কোন কয়েদীর দেখা পাইনি এই কারাগারটি।
দীর্ঘদিন কারাগারটি অরক্ষিত অবস্থায় থাকলেও ২০১৮ সালে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক চিঠিতে বর্তমানে কারাগারটি নিয়ন্ত্রন করে জেলা সমাজসেবা কার্যালয়। সেখানে সমাজসেবা কার্যালয়ের একজন স্টাফ স্ব-পরিবারে বসবাস করেন।
তবে স্থানীয়দের দাবি কারাগারটি যথাযথ ব্যবহার করা হোক। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, উপ – কারাগারটির প্রবেশ পথে কারারক্ষী থাকার কথা থাকলেও রয়েছে দুইটি ছাগল। মূলফটকে প্রবেশ করতেই বামহাতে চোখে পড়বে মহিলা কয়েদীর ওয়ার্ড সেটাও ইট, কাঠে ভরপুর। ভবনটির একটু সামনে গেলেই পুরষ ওয়ার্ড। সেখানে কোন কয়েদী না থাকলেও রয়েছে কয়েকটি গরু আর গবরে ভরপুর। পাশেই রয়েছে মুরগী পালনের ছোট একটি কক্ষ। হাঁস,মুরগী,গরু আর ছাগল পালনের খামার হিসেবেই বর্তমানে কারাগারটি ব্যবহার করছে জেলা সমাজসেবা অফিসের একজন নাইট গার্ড।
দীর্ঘদিন ধরে রক্ষনাবেক্ষনের অভাবে দেয়াল থেকে খসে খসে পড়ছে ইট সিমেন্ট, দরজা জানালার কাঠগুলো অনেক আগেই হারিয়ে গেছে। কারাগারের বাইরে অফিস স্টাফদের জন্য নির্মিত তিন কক্ষ বিশিষ্ট কোয়াটারটি অনেক আগেই দখল করে নিয়েছে স্থানীয়রা।
জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে, আশির দশকে সারা দেশের ১৭ টি জেলায় ২৩ টি উপ-কারাগার নির্মাণ করেন তৎকালীন দেশের প্রেসিডেন্ট মরহুম হোসাইন মুহাম্মদ এরশাদ। তন্মেধ্যে একটি হল কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার অরক্ষিক এই উপ-কারাগারটি।
কারাগারটি বর্তমানে কুষ্টিয়া রাজবাড়ি আঞ্চলিক মহাসড়কস্থ খোকসা পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডে অবস্থিত। এই উপ কারাগারটিতে রয়েছে একটি প্রবেশ পথ, দুইটি কয়েদী রাখার হলরুম, দুইটি সাক্ষাৎকার কক্ষ, একটি স্টোর রুম, দুই কক্ষ বিশিষ্ট একটি অফিস রুম আর তিন কক্ষ বিশিষ্ট একটি কোয়াটার। রয়েছে বেশকয়েকটি টয়লেটও।
এবিষয়ে স্থানীয় দিনমজুর মাসুদ শেখ বলেন, কারাগারটি বানানোর সময় আমি লেবারের কাজ করেছিলাম, কিন্তু আজও এটি কাজে লাগেনি। নাম প্রকাশ না করা শর্তে একজন আওয়ামীলীগ নেতা বলেন, বহুটাকা ব্যায়ে নির্মিত কারাগারটি দিনে দিনে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। খোকসা বাসীর দাবি কারাগারটি চালু করা হোক।
জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ- পরিচালক রোকসানা পারভীন বলেন, উপ-কারাগারটি নানা জটিলতায় আজও চালু হয়নি, তবে প্রতিকীমূল্যে ভূমিমন্ত্রনালয় থেকে সমাজকল্যান মন্ত্রণালয়ের অধিনে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, সেখানে কিশোর শোধনাগার বা উন্নয়ন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তলার জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এবিষয়ে কুষ্টিয়া জেল সুপার তায়েফ উদ্দিন মিয়া বলেন, কিশোর অপরাধ দমনে এই উপ-কারাগারটি কিশোর শোধানাগার বা উন্নয়ন কেন্দ্রে রুপান্তিত করে সমাজসেবা কার্যালয়ের অধিনে দেওয়া হয়েছে।
তবে স্থানীয়রা বলছে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে কারাগারটি কিশোর শোধনাগারের কার্য্যক্রম শুরু করা হোক।