চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ, প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে পারছে না রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:৩০ এএম, ২৩ ফেব্রুয়ারী,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ১১:৫৪ এএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
লালমনিরহাট-সান্তাহার ও রংপুর রুটে চলন্ত ট্রেনে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েই চলছে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা। প্রায়দিনই পাথর নিক্ষেপে ক্ষত-বিক্ষত হচ্ছে ট্রেনের জানালা। যাত্রীদের পাশাপাশি আহত হচ্ছেন রেলের কর্মকর্তা কর্মচারীরাও। এসব প্রতিরোধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ফলে দিনদিন ট্রেন ভ্রমণে আগ্রহ হারাচ্ছেন যাত্রীরা।
লালমনিরহাট রেল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, লালমনিরহাট-সান্তাহার ও রংপুর রুটে প্রায়ই বিভিন্ন স্থানে চলন্ত ট্রেনে পাথর ছুড়ে মারায় আহত হচ্ছেন অনেকে। শুধু পাথর নয়, চলন্ত ট্রেনে মলমূত্র ও ময়লা-আবর্জনাও নিক্ষেপ করা হচ্ছে। পাথরের আঘাতে ট্রেনের জানালা, দরজা, কাচ এবং লাইট-ফ্যানসহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটছে বগুড়া থেকে বোনারপাড়া ও তিস্তা থেকে রংপুর স্টেশন পর্যন্ত।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বুধবার রাত ৮টার দিকে লালমনিরহাট-সান্তাহার রুটে সর্বশেষ পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে।
যাত্রীরা জানান, ওই দিন লালমনিরহাটমুখী বগুড়া কমিউটার ট্রেন হাসানগঞ্জ স্টেশন থেকে চৌধুরাণী স্টেশনে পৌঁছানোর সময় পাথর নিক্ষেপ করা হয়। এতে ট্রেনের জানালার কাচ ভেঙে ভেতরে পাথর ঢুকে যায়। এ সময় তিন যাত্রী অল্পের জন্য রক্ষা পেলেও কামরার ভেতর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে যাত্রীরা কামরার সব জানালা বন্ধ করে দেন। খবর পেয়ে ট্রেনের ভেতর দায়িত্বরত রেল কর্মকর্তারা এসে ভাঙা জানালার ছবি তুলে যাত্রীদের সান্ত্বনা দিয়ে চলে যান।
এর ঠিক ৭ দিন আগে বুধবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় লালমনিরহাট-রংপুর রুটের তিস্তা এলাকায় চলন্ত ট্রেনে দুবৃত্তদের পাথর নিক্ষেপে নিমু চন্দ্র (৪০) নামে ট্রেনের এক পরিচালক গুরুতর আহত হন।
ওই দিন বিকেলে একটি শার্টল ট্রেন লালমনিরহাট স্টেশন ছেড়ে আসে। রংপুরের কাউনিয়া পার হয়ে তিস্তা ব্রিজ অতিক্রম করার পর ওৎ পেতে থাকা দুর্বৃত্তরা ট্রেনকে লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপ করে। এতে ট্রেনটির পরিচালক নিমু চন্দ্রের নাক ও মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হন। পরে তার সহকর্মীরা তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন।
কাউনিয়া রেল স্টেশনে কথা হয় আশরাফুল আলম ও হুমায়ন শাহিন নামের দুই যাত্রীর সাথে। তারা বলেন, চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় আতঙ্কের মধ্যে ট্রেনে যাতায়াত করতে হচ্ছে। এ পরিস্থিতির দ্রুত নিরসন হওয়া প্রয়োজন।
রংপুর সদরের রাজু মিয়া ও মোখলেছুর রহমান বলেন, মানুষজন ট্রেনকে নিরাপদ ভেবে যাতায়াত করে থাকে। কিন্তুু একদল দুবৃত্ত সাধারণ মানুষের সেই নিরাপদ যোগাযোগ মাধ্যমকে আতংকে পরিনত করেছে। কারণ প্রতিনিয়তই ঘটছে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা। এতে করে ট্রেন হারাচ্ছে রাজস্ব আয়, অন্যদিকে সাধারণ মানুষজন ট্রেন ভ্রমণে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে।
বেসরকারি ট্রেন পরিচালনা প্রতিষ্ঠানের টিকেট যাচাইকারী মতিউর রহমান জানান, এই রুটে বেসরকারিভাবে পরিচালিত ট্রেনগুলোর জানালা-দরজা দেখলেই বোঝা যায় কি রকম পাথর নিক্ষেপ করা হয়েছে। এটা এখন নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। পাথরের আঘাতে জানালার গ্লাস ভেঙে আমাদের শরীরে আঘাত করছে।
লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগীয় সংস্থাপন অফিসার সাজ্জাত হোসেন বলেন, ইদানিং চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা বেড়েই চলছে। কোন ভাবেই রোধ করা যাচ্ছে না। এর ফলে যাত্রী ও রেলের কর্মচারী উভয়েরই জীবন হুমকির মুখে পড়েছে। আমরা আরও কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করছি।