কুমিল্লায় হোটেল রেস্তোরায় ভেজাল খাবার, স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে মানুষের
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:৪৬ পিএম, ১৫ ফেব্রুয়ারী,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ০৩:৪৫ এএম, ১৮ নভেম্বর,সোমবার,২০২৪
বর্তমান করোনাকালে কুমিল্লা দক্ষিনাঞ্চলের উপজেলাগুলোর হাট-বাজারজুড়ে হোটেল রেস্তোরাসহ নানান জাতীয় খাবার দোকানগুলোতে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ, বাসী-পঁচা খাবার বিক্রি এখন যেন ওপেন সিক্রেট।
ওইসব খাবার দোকানগুলোতে ভেজাল খাবার বিক্রি ঘিরে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে এ অঞ্চলের কয়েক লাখ মানুষের।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, আমাদের দৈনন্দিন কর্মজীবনের ব্যস্ততায় খাবারের প্রতি তেমন নজর দেওয়ার সময় হয় না। কোথায় খাচ্ছি, কি খাচ্ছি সেটাতেও আমরা গুরুত্ব দেই না। হোটেল রেস্তোরাসহ খাবার দোকানগুলোতে রং বেরং এর চটকদার পণ্যের প্রতি লোভ আমাদের বেশি। বিশেষ করে যাদের বাসায় রান্না করার সময় নেই কিংবা কর্মব্যস্ততার জন্য অনেক সময় হোটেল রেস্তোরায় খাবার খেতে হয়। আবার ফাষ্টফুড থেকে নানা কারনে স্থানীয় চিকিৎসকগণ নিষেধ করা স্বত্তেও আমরা তা খাচ্ছি।
তবে চলমান করোনাকালে নানান খাবার দোকানগুলোর ক্ষেত্রে ভয়টা কিন্তু খাবারে নয় বরং ভয়টা হচ্ছে খাবার প্রস্তুত, পার্সেল প্যাকেজিং কিংবা সরবরাহ ক্ষেত্রে যথাযথ নীতিমালা মানা হচ্ছে কিনা? হোটেল বয়দের পোশাক, খাবার ডেলিভারী ও প্রস্তুত কারখানায় পরিচ্ছন্ন পরিবেশসহ অভিজ্ঞ রন্ধন সামগ্রীসহ নানান সরঞ্জামে সর্তকতা নেই বললেই চলে। যে যার মত করে খাবার দোকান গুলোতে সরকারী কোন নিয়মনীতির বালাই নেই।
মাঝামাঝি স্থানীয় প্রশাসন হোটেল রেস্তোরাসহ নানান খাবার দোকানগুলোতে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে অর্থদন্ড করলেও ওই ব্যবসায়ীদের দমানো যায়নি। যদিও এখন পর্যন্ত খাবারের মাধ্যমে করোনা ভাইরাস সংক্রমনের কোন প্রমান পাওয়া যায়নি। কারন ভালভাবে রান্না করা হলে খাবারে করোনা ভাইরাস বেঁচে থাকার কথা নয়। তবে ফুড প্যাকেজিং কিংবা পার্সেল অর্ডারে ডেলিভারী করতে যিনি নিয়োজিত তার মাধ্যমে করোনা ভাইরাস ছড়ানোর যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।
জেলা দক্ষিনাঞ্চলের বে-সরকারি হাসপাতালে একাধিক চিকিৎসক জানায়, আমরা প্রতিনিয়ত হোটেল রেস্তোরা কিংবা নানা খাবার দোকানে খাবার খাওয়ায় মানুষের শরীরে নানা প্রদাহ দেখা দিতে পারে। কারন ওইসব খাবারে ব্যবহার করা হয় মনোসোডিয়াম, গ্লুটামেট, পলিথিন, কালার রং সহ নানা রাসায়নিক দ্রব্য। ফলে মানবদেহে ডেকে আনতে পারে জটিল মারাত্মক রোগ। প্রসস্থ্য করতে পারে স্বাস্থ্য ঝুঁকির পথ।
যদিও আমাদের দেশে নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩ এর ২৩ নং ধারা অনুযায়ী কোন খাবার দোকানের মালিক প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ ভাবে মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এমন বিষক্রিয়া সৃষ্টিকারী রাসায়নিক দ্রব্য কিংবা তার কোন উপকরণ যেমন-ক্যাডিয়াম, সেগারিন, ইউরিয়া, ঘন চিনি, ক্যালসিয়াম কারবাইড দ্রব্যের ফ্লেবার, ফরমালিন, সোডিয়াম, সাইপ্লামেট, কিটনাশক বা বালাইনাশক, পিসিভি তৈলসহ খাদ্যের রং ও স্বাদে আকর্ষন সৃষ্টিকারী কোন বিষাক্ত সংযোজন দ্রব্য বা পক্রিয়া সহায়ক কোন খাবারে এবং খাদ্য উপকরনে ব্যবহার আইনগত অপরাধ।
প্রতিবছর বিশ্বে প্রায় ৬০ কোটি মানুষ ওইসব খাবার প্রতিষ্ঠানে ভেজাল ও দূষিত খাবার খেয়ে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছে। এর মধ্যে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ মানুষের মৃত্যু ঘটে। এছাড়া ওই দ্রব্যের খাবার গ্রহন জনিত কারনে ৫ বছর কম বয়সের আক্রান্ত হওয়া ৪৩ শতাংশ শিশু- কিশোরদের মধ্যে প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার প্রানহানী ঘটে কিন্তু এ অঞ্চলের হোটেল রেস্তোরার মালিকরা সরকারি কোন নিয়মনীতি মানেন না। কারন সংশ্লিষ্ট স্থাণীয় প্রশাসনের কঠোর কোন প্রদক্ষেপ না থাকায় যে যার মত করে খাবার দোকানগুলো চালাচ্ছে।
সূত্রগুলো আরও জানায়, ওইসব খাবার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে ক্ষতিকর নানা রাসায়নিক দ্রব্য মিশ্রনের ফলে মানবদেহে চুলকানি, জন্ডিস, ডায়রিয়াসহ নানা জটিল রোগের পাশাপাশি শরীরের যকৃত, বক্ষ, বায়ুনালী, রক্তনালী ও গলব্লাডারসহ শরীরের নানান অংশে ক্ষতি সাধন করতে পারে। এমনকি কিডনী, হার্টসহ ক্যান্সার রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
এছাড়া ইট ও কাঠেরগুড়া মিশানো খাবারের মসল্লা, ভৌজ্যতৈল, আটা, ময়দা, মুড়ি, চাল, চিনি, মিষ্টি, চাপ, গ্রিল, হালিম, চটপটি, কেক ও বিস্কুটসহ নানান জাতীয় খাবারগুলো ভেজাল মুক্ত নয়। ৮৫শতাংশ মাছে ফরমালিন, শাক সবজিতে বিষাক্ত ষ্প্রে, ফল-ফলাদিতে কার্বাইড, ইথোপেন, ফ্রিজারভেটিভসহ ক্ষতিকর নানা বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্য মিশানো হচ্ছে। এতে ধীরে ধীরে মানবদেহে স্বাস্থ্যঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।
কিন্তু এসব দেখার মতো এ অঞ্চলে কেউ কি আছে? এ ব্যাপারে জেলা দক্ষিনাঞ্চলের ৫টি উপজেলা ও পৌরসভার সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর কর্মকর্তাদের মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও তদের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।