উপকূলের কাছাকাছি ঝড়, দুর্বল বেড়িবাঁধ নিয়ে উৎকণ্ঠায় মানুষ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:১০ পিএম, ২৩ অক্টোবর,
বুধবার,২০২৪ | আপডেট: ০৩:৩৪ পিএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি আরও পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড় ‘ডানা’য় পরিণত হয়েছে। বাতাসের গতিবেগ বাড়িয়ে উপকূলের আরও কাছাকাছি অবস্থান করছে ‘ডানা’। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে। সাগর উত্তাল হওয়ায় খুলনার উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বুধবার দুপুর থেকে খুলণাঞ্চলে বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে ।
আজ বৃহস্পতিবার ও আগামীকাল শুক্রবার সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় ‘ডানা’র আঘাত হানার আশঙ্কা রয়েছে। অথচ ঘূর্ণিঝড় ‘রেমালে’ ক্ষতিগ্রস্থ প্রায় ২৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ এখনও মেরামত করা হয়নি। জোয়ারের পানির চাপে বেড়িবাঁধটি আরও দুর্বল হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ‘ডানা’র আঘাতের আগে বাঁধ মেরামত না হওয়ায় দুর্বল বেড়িবাঁধ নিয়েু উৎকণ্ঠায় রয়েছেন উপকূলীয় এলাকার মানুষ।
বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি আরও পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড় ‘ডানা’য় পরিণত হয়েছে। বাতাসের গতিবেগ বাড়িয়ে উপকূলের আরও কাছাকাছি অবস্থান করছে ‘ডানা’। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে। এরই মধ্যে দেশের সমুদ্রবন্দরগুলোতে বাড়ানো হয়েছে সতর্কতা। বুধবার (২৩ অক্টোবর) আবহাওয়াবিদ মোহাম্মদ আবদুর রহমান খান স্বাক্ষরিত আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে (৫) এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, পূর্ব মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ আরও পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। বুধবার দুপুর ১২টায় ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৬০০ কিলোমিটার দক্ষিণ- দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্বে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্বে অবস্থান করছিল। এটি আরও পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ঘণ্টায় ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে বলেও জানিয়েছে অধিদপ্তর।
উল্লেখ,গত ২৬ ও ২৭ মে ঘূর্ণিঝড় রেমালের সময় অস্বাভাবিক জোয়ারের পানির চাপ ও বাতাসে খুলনার উপকূলীয় এলাকার অনেক স্থানে বেড়িবাঁধের নদীর দিকের অংশ ক্ষয়ে প্রায় অর্ধেক হয়ে যায়। কোথাও কোথাও ওপরের মাটি ধুয়ে বাঁধ নিচু হয়ে যায়। এরপর গত পাঁচ মাসেও তা সংস্কার না করায় সুন্দরবন উপকূলীয় এলাকার অধিকাংশ বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় রেমালে ক্ষতিগ্রস্থ পাউবো ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধের মেরামতের কাজ শুরু করলেও তা সমপপ্তির আগে এলো ঘূর্ণিঝড় ‘ডানা’।
স্থানীয় বাসিন্দা ও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, কয়রা উপজেলার দশহালিয়া, শিকারিবাড়ি, হোগলা, কালীবাড়ি, গুরিয়াবাড়ি, ৪, ৫ ও ৬ নম্বর কয়রা, মঠবাড়ি এবং কাটমারচর এলাকার প্রায় ৭ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। দাকোপ উপজেলার কাকড়াবুনিয়া, বানিশান্তা, নিশানখালী, আন্ধারমানিক, আড়াখালী, কালিবাড়ী, খলিসা, মৌখালী, রায়বাড়ি, তাঁতখালী ও তিলডাঙ্গা এলাকায় ৪ দশমিক ২৯ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিতে রয়েছে। পাইকগাছা উপজেলার জামাইপাড়া, বাসাখালী, হারিখালী, বাইনতলা খেয়াঘাট, পশ্চিম কানাইমুখী, ননিয়াপাড়া, পাইশমারী, কুড়ুলিয়া, সেলেমানপুর, পুরাইকাটি এলাকার ৭ দশমিক ৪৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। বটিয়াঘাটা উপজেলার বারোভূঁইয়া, কড়িয়া, কড়িয়া জব্বারখালী, ঠাকুরানবাড়ি, বুজবুনিয়া, দ্বীপ বরণপাড়া, কল্যাণশ্রীপুর, বটিয়াঘাটা বাজার এলাকার ৩ দশমিক ২২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের অবস্থাও জরাজীর্ণ।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত শনিবার দাকোপ উপজেলার লক্ষ্মীখোলা গ্রামে প্রায় ৪০ মিটার বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। পানি উন্নয়ন বোর্ড দ্রুত জিও টিউব দিয়ে কোনোমতে তা মেরামত করেছে। তবে জায়গাটি এখনও পুরোপুরি ঝুঁকিমুক্ত হয়নি।
কয়রা উপজেলার দশহালিয়া গ্রামের লোকমান শেখ ও জয়নাল শেখ বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমালের সময় ক্ষতিগ্রস্থ প্রায় ১ দশমিক ৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ মেরামত কাজ এখনও শুরু হয়নি। প্রতিবছর এক-দুবার ঘূর্ণিঝড়ের সময় জলোচ্ছ্বাস কিংবা উঁচু জোয়ারের পানির চাপে অন্য কোথাও বেড়িবাঁধ না ভাঙলেও দশহালিয়া এলাকায় বাঁধ ভেঙে যায়। কিন্তু এখানকার বাঁধ মেরামত না হওয়ায় তারা আতঙ্কের মধ্যে আছেন। তারা বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমালে বেড়িবাঁধ ভেঙে তাদের চিংড়িঘের, ফসলের জমি ও ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছিল। সেই ধকল তারা এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেননি। আবার ঝড় আসছে, এবার যে কী হয় বুঝতে পারছেন না। দাকোপ উপজেলার তিলডাঙ্গা গ্রামের দীপংকর মিস্ত্রি বলেন, রেমালের সময় ক্ষতিগ্রস্থ এক কিলোমিটার বাঁধের অবস্থা এখনও জরাজীর্ণ। গত মাসে টানা ভারী বৃষ্টিতে নদীতে জোয়ারের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় ওই বাঁধ আরও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এখন আবার আরেকটি ঘূর্ণিঝড় ‘ডানা’র প্রভাব ইতিমধ্যে শুরু হলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড বাঁধ মেরামত সম্পন্ন করতে পারেনি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড খুলনা-১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর রহমান তাযকিয়া জানান, ঘূর্ণিঝড় ‘ডানা’র প্রভাব মোকাবেলায় পাউবোর পক্ষ থেকে একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে । পাশাপাশী ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে আমাদের পর্যাপ্ত পরিমান জিওব্যাগ এবং সিনথেটিক মজুত রয়েছে । এছাড়া আমাদের মাঠ পর্যায়ের বিভিন্ন পোল্ডারের দায়িত্ব থাকা কর্মকর্তা কর্মচারীদের সার্বক্ষনিক পাল্ডারের দায়িত রয়েছে।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড খুলনা-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আশরাফুল আলম জানান, ঘূর্ণিঝড় রেমালে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ ১৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ইতোমধ্যে পুরোপুরি মেরামত সম্পন্ন হয়েছে। এতে ব্যয় হয়েছে ১০ কোটি টাকা। কয়রা, দাকোপ, পাইকগাছা ও বটিয়াঘাটার প্রায় ২৩ কিলোমিটার বাঁধ মেরামতের জন্য সম্প্রতি দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮ কোটি টাকা। দরপত্র প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে এই ২৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ মেরামতের কার্যাদেশ দিতে মাসখানেক লাগবে। এক মাস পর কাজ শুরু হবে। সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় ‘ডানা’র আগে ক্ষতিগ্রস্থ ওই বাঁধ মেরামত করা সম্ভব হবে না। তবে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ কয়েকটি স্থানে এরই মধ্যে মেরামত কাজ শুরু হয়েছে এবং ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে পর্যাপ্ত পরিমান জিওব্যাগ এবং সিনথেটিক মজুত রাখা রয়েছে।
দিনকাল/এসএস