তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশায় কাঁপছে হাওরবাসী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:১০ পিএম, ১৩ জানুয়ারী,শুক্রবার,২০২৩ | আপডেট: ০১:৪৫ এএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
কনকনে শীতে কাঁপছে হাওরবাসী। বেশ কয়েক দিন যাবত হিমেল হাওয়া আর ঘন কুয়াশায় সুনামগঞ্জের হাওর এলাকার জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে এসেছে। এতে স্বাভাবিক জীবন যাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। কুয়াশার কারণে বছরের একমাত্র আবাদ বোরো ফসল রোপনে ব্যাহত হচ্ছেন কৃষকরা।
হাওর এলাকায় প্রচণ্ড শীতের সবচেয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন দুঃস্থ, ছিন্নমূল, বয়স্ক ও শিশুরা। বিকেল থেকে পরের দিন সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত ঘন কুয়াশায় ঢাকা থাকে পুরো হাওর এলাকা।
স্থানীয়ভাবে অনেকে গরম কাপড়ের অভাবে অনেকেই খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। শ্রমজীবী অনেক মানুষ কাজে বের হতে না পারায় পরিবার নিয়ে কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। বিশেষ করে হাওর এলাকার বোরো ফসল রোপনের ভরা মৌসুমে কৃষকেরা ক্ষেতে কাজ করতে পারছেন না। শীতের তীব্রতায় শিশু ও বৃদ্ধরা বিভিন্ন ধরণের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
বাজার ঘুরে দেকা গেছে, শীতের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় গরম কাপড়ের চাহিদা বেড়েছেঅ এর সাথে দামও বেড়েছে এসব কাপড়ের। শীতের কাপড়ের দোকানে মানুষের ভীড় লক্ষ্য করা গেলেও দাম বেশি হওয়ায় নিম্ন আয়ের মানুষজন তা কিনতে পারছেন না। জেলা ও বিভিন্ন উপজেলা সদরে অস্থায়ী পুরনো কাপড়ের দোকানগুলোতে নিম্ন আয়ের মানুষের ভিড় দেখা গেছে।
স্থানীয়রা জানান, দিনের বেলা কুয়াশার আড়ালে ঢেকে থাকে সূর্য। গত কয়েক দিন ধরে তাপমাত্রা অনেক কম। বিকেল থেকে হালকা কুয়াশা এবং রাত বাড়ার সাথে সাথে কুয়াশাও বেড়ে যায়। এর সাথে যোগ হচ্ছে হিমেল হাওয়া ও কনকনে শীত।
সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘কৃষিকাজ কইরা বেক্কল সাজজি। বাপ দাদার বুনিয়াদি কাজ না করলে বৈশাখে খালি হাতে ঘুরতে অইবো। বেশ কয়েক দিন ধরে সকালে থেকে ঠান্ডা বাতাসে, কুয়াশার মাঝে হাওরে যাই। নিজের জমিতে কিছুক্ষণ কাজ করে শীতের কারণে তাড়াতাড়ি বাড়িতে চইলা যাই। বিকালে যেভাবে বাতাস আর কুয়াশা পড়ে তাতে কোনো কাম-কাজ করতে মন চায় না। কয়েক দিন ধইরা খুব বেশি শীত। সকাল থাইকা দুপুর পর্যন্ত ক্ষেতে বোরো জমিতে চারা রোয়ানির কাজে যাইতে পারি না’।
রিকশাচালক আইয়ুব আলী বলেন,‘ঠান্ডা বাতাসে শীতের মধ্যেও গাড়ি লইয়া বাইর হয়ছি কিন্তু যাত্রী নাই। খুব কম যাত্রী উঠে। রিক্সা না চালাইলে বাচ্চাকাচ্ছা নিয়া কেমনে চলমু। যে টেকা পাই রিকশার মালিকরে দিয়া আমার তেমন কিছুই থাকে না। কোনো রকম বউ বাচ্চা লইয়া আছি আল্লাহর উপর ভরসা কইরা‘।
জামালগঞ্জ লামা পাড়ার শ্রমজীবী মো: জুনায়েদ (মোল্লা মিয়া) বলেন, ‘এবার এখনো কোনো কম্বল বা কাপড় কিছুই পাইনি। খুব কষ্টে কোনোমতে রাইত কাটাই। সকালেও কুয়াশা থাকে সুর্য দেখা যায় না। রোদ উঠলেই ঘর থাইক্কা বাইরে যাই বাচ্চারারে নিয়া এই ভাবেই চলছি।’
জামালগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মঈন উদ্দিন আলমগীর বলেন, পৌষের তীব্র শীতে ঠান্ডাজনিত কারণে কিছুটা রোগ ব্যাধি বাড়ছে। তার মধ্য সর্দি, কাশি, সাধারণ জ্বর, চর্ম রোগ, ডাইরিয়া জাতীয় রোগ কিছুটা বেড়েছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কিছু জনবল সঙ্কট রয়েছে। আমরা সাধ্যমতো চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছি।
জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিশ্বজিত দেব বলেন, বেশ কয়েক দিন ধরে শীতের প্রকোপ একটু বেশি। জামালগঞ্জে সরকারিভাবে ইউুনয়নের মাধ্যমে তিন হাজার বিতরণ করা হয়েছে। জেলায় আরো কম্বলের চাহিদা পাঠানো হয়েছে। এগুলো পেলে আরো কিছু বিতরণ করা হবে।
জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ৪৫ হাজার ১০০ পিস শীতবস্ত্র পেয়েছি। যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। জেলার সব উপজেলায় বিতরণ করা হয়েছে। বাস্তবতা বিবেচনা করে আরো শীতবস্ত্র পাঠানোর জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে। শীতবস্ত্র হাতে পাওয়ার সাথে সাথে সেগুলো বিতরণ করা হবে।
সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন বলেন, ‘জুনের ভয়াবহ বন্যার ঢলের পানিতে অনেক বাড়িঘর নষ্ট হয়েছে। অনেকের ঘরের কাঁথা-বালিশ ভেসে গেছে, নষ্ট হয়েছে। মানুষ এখনো বসতঘর মেরামত করতে পারেনি। শীতের কনকনে বাতাস ঘরে ঢুকছে। কাঁথা-কম্বলও নেই।
তিনি আরো বলেন, এই অবস্থায় এই জেলার জন্য কম্বলের বিশেষ বরাদ্দ প্রয়োজন। এখন পর্যন্ত যা পাওয়া গেছে তা বিতরণ করা হয়েছে। অনেক মানুষের উপকার হয়েছে। সরকারিভাবে আরো কম্বল ও গরম কাপড় আনার চেষ্টা চলছে।’
তীব্র শীতে সরকারের পাশাপাশি দুস্থ ও হতদরিদ্র মানুষের পাশে কম্বল ও গরম কাপড় নিয়ে বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।