ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের কাজ চলছে শম্ভুক গতিতে : লাখ লাখ মানুষের চরম ভোগান্তি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:২৭ পিএম, ২৪ জুন,শুক্রবার,২০২২ | আপডেট: ০৯:১৯ এএম, ২২ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংকরোড ৬ লেনে উন্নতীকরণ প্রকল্পের কার্যক্রম শেষ হওয়ার কথা ছিল ১৭ মাসের মধ্যে। কিন্তু নির্ধারিত সময় প্রায় ফুরিয়ে এলেও শেষ হয়নি সড়ক সম্প্রসারন। এদিকে বিগত এক বছর যাবৎ চলমান কাজের কারণে সড়কে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে পড়ছেন যাত্রী ও যানবাহনের চালকেরা। কাজের শম্ভুক গতিতে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন জেলার লাখ মানুষ। সকলের একটি প্রশ্ন, এই সড়কের কাজের এমন কচ্ছপগতির কারণ কি? কবে কমবে মানুষের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ।
নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপদ বিভাগের সূত্রমতে, সড়ক ৬ লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৪৪৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। সড়ক উন্নতীকরণ পরবর্তী সড়কটি প্রায় প্রশস্থ হবে ১২৯ ফুট। এই প্রকল্পের আওতায় সড়কের ৩টি পয়েন্টে হবে আন্ডারপাস ও দুটি পয়েন্টে ফুটওভারব্রিজ হবে।
সাইনবোর্ড ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ করা হবে ও শিবু মার্কেট, জালকুড়ি ও ভুইগড়ে আন্ডারপাস নির্মাণ করা হবে।
জানা যায়, যানযট নিরসনের উদ্দেশ্যে ২০১৯ সালের ৮ জুলাই ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংকরোড ৬ লেনে উন্নতীকরণ প্রকল্পের প্রসস্তাব পরবর্তী প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় উপস্থাপন করা হলে প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়।
২০২১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি প্রকল্প বাস্তবায়নে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর এনডিই-টিবিএল-এইচটিবিএল-জেভি নামক যৌথ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করে। প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ নির্ধারন হয় ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত।
কিন্তু মেয়াদ পূর্তির শেষ সময়েও প্রকল্পের বৃহদাংশ কাজ অবশিষ্ট রয়েছে। কার্য সম্পাদনে প্রকল্পের নতুন মেয়াদ ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত নির্ধারিত হয়েছে। এদিকে সড়কে দীর্ঘ সময়ের দৃশ্যমান কার্যক্রমের ফলে অধিক যানযট হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। বিগত কয়েকমাসে এই ভোগান্তি চরমে দাড়িয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ভূইগড়, ঝালকুড়ি সহ শিবুমার্কেট এলাকায় সড়ক প্রশস্তকরণের কার্যক্রম চলছে। সাইনবোর্ড থেকে শিবুমার্কেট পর্যন্ত একাধিক স্থানে আংশিক কাজ করা হয়েছে। সড়কের একাধিক স্থানে এক লেন দিয়েই গাড়ি যাওয়া-আসা করায় সময় অন্তর অন্তর দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। আধ ঘন্টার সড়ক পাড়ি দিতে দেড় থেকে দুই ঘন্টা সময় পেরিয়ে যায়।
মৌমিতা পরিবহনের যাত্রী ভুক্তভোগী আহসানুল্লাহ নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, অল্প একটু রাস্তার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা আমাদের জ্যামে বসে থাকতে হচ্ছে। সড়কে কাজ হলে সাময়িক অসুবিধা হবে এটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু মাস পেরিয়ে বছর ঘুরে অন্য বছর চলে আসছে।
প্রতিদিন যানজটে পড়তে হচ্ছে। রাস্তার অবস্থা দেখে কাজ এখনো অর্ধেকও হয়েছে বলে মনে হয়না। সরকার কাজের জন্য টাকা খরচ করার পরেও কাজে এত ধীর গতি কেন?।
বন্দরের বাসিন্ধা সুমাইয়া। লিংক রোড হয়ে নিয়মিত ঢাকায় য়াতায়াত করেন। এই সড়কে নিজের ভোগান্তির কথা জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, ঢাকা শহরের জ্যামে যতটা না নাকাল হই তার চেয়ে বেশি আমার জীবনে আতঙ্কের নাম হয়ে দাড়াইছে নারায়নগঞ্জের "জালকুড়ি"!
লাস্ট কয়েক মাসে জাস্ট এই একটা রাস্তাতে আমি কতক্ষণ টাইম কাটাচ্ছি তার হিসাব নাই আসলেই!। জালকুড়ির জ্যাম দেখে ঘুমায় যাই আর উঠে দেখি জালকুড়িতেই আছি! রোজার মাসে জাস্ট এই রোডে আটকে থাকার জন্য প্রতিদিন রাস্তায় ইফতারি করা লাগছে। দিন দিন এই জায়গাটা অসহ্য হয়ে উঠছে আমার কাছে।
নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপদের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের ৬ লেন উন্নতীকরণ প্রকল্পের কাজ শুরু করার পরবর্তীতে আমাদের একাধিক বিপাকে পড়তে হয়েছে। লিংক রোডের দুইপাশে একাধিকবার বর্জ্য সড়ানো হয়েছে।
রোডের দুইপাশের অবৈধ স্থাপনা সড়াতে সময় লেগেছে। সড়কের নিচে বৈদ্যুতিক খুঁটি, গ্যাস লাইন থাকায় সড়কের কিছু কিছু অংশ বাদ দিয়ে কাজ করতে হয়েছে। আমরা এসকল কর্তৃপক্ষকে নোটিশ দিয়েছি তাদের কার্যক্রম সম্পাদনে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য। তবে আমাদের কাজ এখন চলছে। শীগ্রই এই প্রকল্পের কাজ সম্পূর্ণ হবে।