না’গঞ্জের স্কুলের ছাত্রীকে আপত্তিকর প্রস্তাবের অডিও ফাঁস, অভিযুক্ত শিক্ষক বহিস্কার
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৪৩ পিএম, ৯ জুন,বৃহস্পতিবার,২০২২ | আপডেট: ০৬:০৯ এএম, ১৯ নভেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
নারায়ণগঞ্জের সদর উপজেলার পাগলা উচ্চ বিদ্যালয়ের গণিত শিক্ষক মাসুদ রানার সাথে একই স্কুলের এক ছাত্রী কে আপত্তিকর প্রস্তাব দেওয়ার অডিও ফাঁস হয়েছে।
এ ঘটনায় স্কুলের সামনে আজ বৃহস্পতিবার সকালে ছাত্র-ছাত্রীরা শিক্ষক মাসুদ রানাকে বহিষ্কার সহ শাস্তি দাবী করে বিক্ষোভ করে। ছাত্র-ছাত্রীদের দাবীর মুখে স্কুল কর্তৃপক্ষ শিক্ষক মাসুদ রানাকে সাময়িক বহিস্কার করেছে বলে জানা গেছে।
বহিষ্কারের বিষয়টি নিশ্চিত করে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক বজেন্দ্রনাথ জানায়, স্কল ছাত্রীর সাথে অডিও ফাসের ঘটনায় স্কুল শিক্ষক মাসুদ রানাকে সাময়িক ভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে তারা স্কুলে জরুরী মিটিংয়ে বসেছে। অডিও ফাসের ঘটনায় তদন্ত করা হবে। এবং তা প্রমানিত হলে তাকে পুরোপুরি ভাবে বহিষ্কার করা হবে।
জানা যায়, গতকাল বুধবার (৮ জুন) বিকেলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অডিওটি ফাঁস হওয়ার পর থেকে কুতুবপুরজুড়ে ব্যাপক তোলপাড় চলছে। ফাঁস হওয়া ছয় মিনিটেরও বেশি দৈর্ঘ্যের অডিওতে মাসুদ রানাকে পাগলা উচ্চ বিদ্যালয়ের একজন নারী শিক্ষার্থীকে আপত্তিকর প্রস্তাব দিতে শোনা যায়। সেখানে বহিস্কৃত শিক্ষক মাসুদ রানাকে বলতে শোনা যায়, ভিডিও কল দিলে একটু খুলে দেখিও। এ নিয়ে ছাত্রীটি নানা কথা বলে বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চাইলেও সে বারবার একই কথা বলে আসছিলো।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে স্কুলে আসা ছাত্র-ছাত্রীরা প্লেকার্ড হাতে নিয়ে স্কুলের সামনে রাস্তায় শিক্ষকের বহিষ্কার দাবী করে বিক্ষোভ করে।
শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে ওই শিক্ষককে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে মাসুদ রানার দৃষ্টান্তমূলক কঠোর শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ অব্যাহত রেখেছে বিদ্যালয়টির অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, মাসুদ রানার বিরুদ্ধে এর আগেও যৌন হয়রানির একাধিক অভিযোগ এনেছেন শিক্ষার্থীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ছাত্রী জানান, ক্লাসে, কোচিংয়ে ও মোবাইলে অনেককেই কুরুচিপুর্ণ প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি। এ ব্যাপারে স্কুলের এডহক কমিটির সদস্য রেজাউল করিমকে জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি। বরং রেজাউল করিমের সাথে সুসম্পর্কের দোহাই দিয়ে মাসুদ রানা দীর্ঘ বছর তার অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছিলেন। গতকাল বুধবার ফাঁস হওয়া অডিও ক্লিপ তারই উদাহরণ।
ক্লিপটি প্রকাশ্যে আসার পরে তা ধামাচাপা দিতে উঠে পড়ে লাগে রেজাউল করিমসহ অন্যান্যরা। কিন্তু বৃহস্পতিবার ছাত্র-ছাত্রীরা একজোট হয়ে মাসুদ রানার যথাযথ শাস্তিসহ স্কুলের শিক্ষার মান ফিরিয়ে আনা, অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধের দাবি তুললে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়। ফলে তড়িঘড়ি করে মাসুদকে সাময়িক বহিস্কার করে ছাত্রছাত্রীদের ঘরে ফিরে যেতে বলা হয়।
তবে 'গুরু পাপে লঘু শাস্তি'র এমন উদাহরণে আরো বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে শিক্ষার্থীরা। রাব্বি নামের নবম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী জানায়, পাগলা স্কুলকে কিছু লোক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে। ছাত্রীদের যৌন হয়রানি, একচ্ছত্র দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতায় এই স্কুল এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। রেজাউল করিম ও কয়েকজন শিক্ষক সিন্ডিকেট করে স্কুলকে লুটেপুটে খাচ্ছেন। কিছুদিন পরপরই তারা একেক অপকর্ম করে ধরা খায়, আমরা আন্দোলনে নামলেই আমাদের হুমকি-ধমকি দিয়ে বাড়ি যেতে বলে। এভাবে একটি স্কুল চলতে পারে না।
একই অভিমত অভিভাবকদেরও। তারা বলছেন, এইস্কুুলে ছেলেমেয়ে পড়ে, সেই পরিচয় দিতেও আমাদের এখন লজ্জা লাগে। ইচ্ছেমতো বেতন বৃদ্ধি, নানান অজুহাতে টাকা নেওয়া হলেও শিক্ষার মান তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। সেইসাথে ছাত্রীদের যৌন হয়রানির যে ঘটনাগুলো উঠে আসছে তাতে আমরা আতঙ্কিত।
অডিও ক্লিপের সত্যতা স্বীকার করে মুঠোফোনে শিক্ষক মাসুদ রানা বলেন, 'আমি ভুল করে ফেলেছি, খুব চাপে আছি।'