সিলেটের দুই নদীতে প্রবল বেগে পানি ঢুকছে
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩:৩৬ পিএম, ২০ মে,শুক্রবার,২০২২ | আপডেট: ০৪:৪৫ পিএম, ১৮ নভেম্বর,সোমবার,২০২৪
সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার অমলশিদ এলাকায় সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর উৎসস্থলের একটি ডাইক (নদী প্রতিরক্ষা বাঁধ) ভেঙে গেছে। এতে প্রবল বেগে পানি ঢুকে জকিগঞ্জের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দিনগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে এ ভাঙনের ঘটনায় সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা রয়েছে।
স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের তীব্র স্রোতে ভারতের সীমান্তবর্তী বরাক নদের মোহনায় ডাইকটি ভেঙে গেছে। এর পর মুহূর্তেই জকিগঞ্জের ফিল্লাকান্দি, অমলশিদ, বারঠাকুরী, খাসিরচক, খাইরচক, বারোঘাট্টা, সোনাসারসহ বেশ কিছু এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। একই সঙ্গে জকিগঞ্জ উপজেলা সদরের সঙ্গে অমলশিদ যাতায়াতের রাস্তাটিও পানিতে ডুবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ফলে এ রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ আছে।
ডাইক ভেঙে পানি ঢুকতে থাকায় আগে থেকেই প্লাবিত উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভারতের বরাক নদ থেকে প্রবল বেগে পানি এখন সুরমা ও কুশিয়ারা নদীতে গিয়ে ঢুকছে।
অমলশিদ গ্রামের বাসিন্দা কৃষিজীবী আবুল হাসিম (৩৬) জানান, শুরুতে তীব্র পাহাড়ি ঢলের ধাক্কায় ডাইকের ২০ ফুট ভেঙে গিয়েছে। ধীরে ধীরে পানির তোড়ে ডাইকটি আরও ভাঙতে থাকে। আজ শুক্রবার সকাল পৌনে নয়টার দিকে ডাইকের কমপক্ষে ৬০ ফুট অংশ ভেঙে গিয়েছে। এ অবস্থায় ডাইকের ঠিক পাশেই অবস্থিত অমলশিদ ও ফিল্লাকান্দি গ্রামের বাসিন্দারা প্রচুর ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছেন। এ দুটি গ্রাম বেশি প্লাবিত হয়েছে।
এলাকাবাসী জানিয়েছেন, সিলেট থেকে প্রায় ৯২ কিলোমিটার দূরে জকিগঞ্জের অবস্থান। এটি জেলার সবচেয়ে দূরবর্তী উপজেলা। ভারতের করিমগঞ্জ জেলার বরাক নদের দুটি শাখা হচ্ছে সিলেটের সুরমা ও কুশিয়ারা নদী। এদের মিলনস্থল হচ্ছে সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার অমলশিদ এলাকা। এই অমলশিদে একটি ডাইক আছে। বরাক থেকে পানি এসে প্রথমে সরাসরি এ ডাইকে আঘাত করে। এরপর পানি ভাগ হয়ে সুরমা ও কুশিয়ারায় প্রবাহিত হয়।
সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর মাধ্যমেই মূলত সিলেট বিভাগের প্রায় ১০০টি নদ-নদীতে পানি প্রবাহিত হয়। এখন ডাইক ভেঙে যাওয়ায় পানি কোনো বাধা না পেয়ে তীব্র গতিতে সরাসরি সুরমা ও কুশিয়ারায় গিয়ে ঢুকছে। ফলে পুরো সিলেট জেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা রয়েছে।
জকিগঞ্জের ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পল্লব হোম দাস বলেন, ডাইকটি ভেঙে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীতে প্রবল বেগে পানি ঢুকছে। এতে নতুন করে উপজেলার কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এ ডাইক ভেঙে যাওয়ায় সিলেটের অন্যান্য উপজেলায়ও পানি বৃদ্ধির আশঙ্কা আছে।
আগের রাতের ভারী বৃষ্টিতে সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। বেশ কিছু স্থানে পানি বাড়ার খবর পাওয়া গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেট কার্যালয় জানিয়েছে, সিলেটের সুরমা নদীর দুটি পয়েন্টে পানি আজও বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বানভাসি মানুষেরা বলছেন, বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় দুর্ভোগও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। খাবার ও বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। গো-খাদ্যের সংকটও তীব্র আকার ধারণ করেছে। বাড়িঘরে পানি উঠে পড়ায় অনেকে মাচা বেঁধে থাকছেন। বেড়েছে পানিবাহিত রোগ-ব্যধিও। সাপ, জোঁক ও পোকামাকড়ের উপদ্রবও বেড়েছে বলে বানভাসি মানুষেরা জানিয়েছেন।