না’গঞ্জে আ’লীগ সন্ত্রাসীদের নির্যাতনে নিহত আলমগীরের মা ও স্ত্রী সন্তানদের কান্না থামছেনা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৫৫ পিএম, ৩১ মার্চ,বৃহস্পতিবার,২০২২ | আপডেট: ০৯:১৭ এএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
কথা বলতে পারছিলেন না সরকার দলীয় সন্ত্রাসীদের নির্মম নির্যাতনে নিহত হওয়া আলমগীরে স্ত্রী মিনু বেগম। বার বার চোঁখের পানি ওড়না দিয়ে মুছছিলেন তিনি। সন্ত্রাসীদের শারীরিক ও মানুষিক টর্চারে ঠিক মত দাঁড়াতেও পারছিলেন না মিনু।
আলমগীরের ভাই জাহানউল্লাহ্ সহ অনেকেই তাকে মিডিয়াকর্মীদের সাথে কথা বলার জন্য অনুরোধ করছিলেন। তিনি কি বলবেন, বুঝতে না পারায় সবাই তাকে বললেন, আপনার যা ইচ্ছা তা বলেন। তারা আপনার কথা মিডিয়াতে প্রচার করবে।
এরপর কেউ একজন তাকে বসার জন্য চেয়ার নিয়ে আসলেন। সাথে ছিলেন, আলমগীরের কন্যা সন্তান। ছোট শিশুটির চোঁখেও ছিলো অশ্রুজল। এরপর যখন মিডিয়াকর্মীরা তাদের ক্যামেরা চালু করলেন, সাথে সাথে আবারও কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন আলমগীরের স্ত্রী মিনু। তার পর কিছুটা শান্ত হওয়ার পর আবারও মিডিয়াকর্মীরা তাদের কাজ শুরু করলেন।
এসময় তিনি আলমগীর হত্যার এক লোমহর্সক বর্ণনা দেওয়া শুরু করলেন। তার এ বর্ণনায় সকলের চোঁখেই তখন অশ্রুজল গড়াতে লাগলো। তবুও সবাই নিজেদের সামলিয়ে তার কথা শুনতে লাগলেন।
তিনি বললেন, যখন আলমগীরকে লোহার রডসহ বিভিন্ন দেশিয় অস্ত্র দিয়ে পেটানো হচ্ছে তিনি তখন সকলের হাতে পাঁয়ে ধরে বার বার বলছিলেন, ‘ওকে আর মাইরেন না।’ ও মইরা যাইবো, আমি তিন মাসের অন্ত:সত্ত্বা। কিন্তু কেউ আমার কথা শুনলো না। উল্টো আমাকে ও আমার মেয়েটাও মারতে শুরু করলো। তবুও আমি ওর (আলমগীরের) প্যান্ট ধরে রাখতে চাইছিলাম, ওর প্যান্ট খুলে যাওয়ার মত অবস্থা হয়ে গেছিলো। আমি এক হাত দিয়ে ওর প্যান্ট আর আরেক হাত ধরে কাউসারের পাঁ ধরে চিৎকার করলে লাগি। এসময় আলমগীর আমারে কইছিলো, ‘আমারে বাঁচাও।’ কিন্তু আমি ওরে বাঁচাইতে পারলাম না। আমার চোঁখের সামনে একটা সিরিঞ্জ আইন্যা ওর গাঁড়ের ভিতরে ঢুকাইয়া দিলো। ওই সিরিঞ্জে কি ছিলো আমি জানিনা। তবেও ওই সিরিঞ্জ দেওয়ার পরই ওই যেন কেমন করলো।
এরপর আমি আবারও ওদের পাঁ ধরে চিকিৎকরে বলছি, আমার স্বামীরে তোমরা ভিক্ষা দাও, ও খারাপ হলে ওর বিচার হবে, আমারে তোমরা বিধাবা কইরো না, আমরা পেটে ওর সন্তান, এ সন্তানটাকে এতিম কইরো না। কিন্তু তবুও কেউ কোন কথা শুনেনি। ওরা আমাদের চোঁখের সামনে আলমগীরের পাঁয়ের রগ কাটছে।
মিনু আরও বলেন, আমি যখন চিৎকার করছিলাম তার কিছুক্ষন পর ঘটনাস্থলে আমার ভাসুর যায়। আমার ভাসুর গিয়ে বলে, ‘আপনারাতো ওকে মেরেই ফেলছে, লাশটা অন্ততো আমাকে দিয়া দেন।’ তখন আ’লীগ সন্ত্রাসী আব্দুল, কাউসার, সজিব বলে লাশও দিবো না, ওকে মেরে টাকা যা লাগে দিবো। তখনও আলমগীরের জ্ঞান ছিলো। তিনি আমারে কইলো, ‘৯৯৯’এ ফোন দাও। তারপর একটু দূরে গিয়্যা ‘৯৯৯’এ কল দেই। পরে পুলিশ আইস্যা আমাগো উদ্ধার করে।
তিনি বলেন, আমার স্বামীকে যেভাবে মারছে আমি ৭১ সালের যুদ্ধ দেখিনাই। তবে শুনছি, যুদ্ধে নাকি মায়ের কোল থেকে কেড়ে নিয়ে সন্তানকে আর স্ত্রীর বুক থেকে কেড়ে নিয়ে চোঁখের সামনে স্বামীকে মারছে। ঠিক একইভাবে আমার বুক থেকে আমার স্বামীকে কেড়ে নিয়ে ওর নির্মমভাবে হত্যা করছে। আমি এ হত্যার বিচার চাই, বিচার চাই বলেই আবারও কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন মিনু।
ওদিকে আলমগীরের ঘরের দরজার সামনে মাটিয়ে বসে আছে আছে আলমগীরের মা জড়িনা বেগম। বয়স আনুমানিক ষার্টোধ্ব হবে। সন্তান হারিয়ে পাগল প্রায় মা। কাঁদতে কাঁদতে চোঁখের জলও ফুরিয়ে গেছে। তিনি কান্নাজড়িত কন্ঠে শুধু একটি কথাই বললেন, যারা আমার পোলারে খুন করছে তাগো ফাঁসি চাই। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার পোলা হত্যার বিচার চাই।
প্রসঙ্গত, গত ২১ মার্চ (সোমবার) সকালে রাজাপুর এলাকায় হাজি আব্দুল আলীর মালিকানাধীন ঈশা ব্রিকফিল্ডের কাছে একটি মুদি দোকানে আলমগীর ও ফারুক মেম্বারের মধ্যে তর্ক হয়। তর্কের এক পর্যায়ে হাতহাতির ঘটনা ঘটে। কিন্তু সেই মহুর্তে ফারুক মেম্বার পুলিশকে খবর না দিয়ে নিজেই ঝগড়ায় লিপ্ত হন। এসময় আলমগীরের দারালো অস্ত্রের আঘাতে জখম হন ফারুক মেম্বার।
পরে ফারুক মেম্বার ও তার বাহিনী কাউসার ও সজিবরা মিলে আলমগীরকে বেধর পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। পরে রক্তাক্ত জখম হওয়া আলমগীরকে টেনে হেঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয় রাজপুর চৌরাস্তার দিকে।
পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে আলমগীরকে উদ্ধার করে প্রথমে নারায়ণগঞ্জ ১শ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু আলমগীরের অবস্থা গুরুত্বর দেখে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান কর্তব্যরত ডাক্তার। পরেরদিন সকালে তার মৃত্যু হয়।