৭০ শিশুর জীবন বদলে দিলেন বিচারক
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:১৪ এএম, ২২ মার্চ,মঙ্গলবার,২০২২ | আপডেট: ০৭:১৭ এএম, ১৮ নভেম্বর,সোমবার,২০২৪
কারাগারে না পাঠিয়ে জাতীয় পতাকা, ফুল আর ডায়েরি দিয়ে অভিযুক্ত শিশুদের সংশোধনের জন্য বাবা-মায়ের কাছে ফেরত পাঠিয়েছেন সুনামগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল এবং শিশু আদালতের বিচারক মো. জাকির হোসেন।
আজ সোমবার দুপুরে ৯ শর্তে ৫০ মামলায় এসব শিশুর বাবা-মায়ের জিম্মায় দেয়া হয়।
জানা যায়, কোমলমতি এসব শিশুর পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে ও ছোটখাট চুরির অভিযোগে মামলায় জড়ানো হয়েছিল। এসব মামলায় শিশুদের আদালতে হাজিরা দিতে হতো। এতে শিশুদের ভবিষ্যৎ ছিল অনিশ্চয়তার মধ্যে।
অভিযুক্ত শিশু কামরুল ইসলাম বলে, আমরা কোনো দোষ করিনি। আমাদের নামে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। আজ আদালত আমাদের বাবা-মায়ের জিম্মায় দিয়েছেন। এতে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারব আমরা। শিশুদের দেয়া শর্তগুলো হলো- নিয়মিত পড়াশুনার পাশাপাশি প্রতিদিন কিছু ভালো কাজ করা এবং ডায়েরিতে তা লিখে রাখা, মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানা, সবার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা, বাবা-মাসহ গুরুজনদের আদেশ মেনে চলা এবং বাবা-মায়ের সেবাযত্ন ও কাজে সাহায্য করা, নিয়মিত ধর্মগ্রন্থ পাঠ করা এবং নামাজ আদায় করা, প্রত্যেককে কমপক্ষে ২০টি করে গাছ লাগানো এবং গাছের পরিচর্যা করা, অসৎ সঙ্গ ত্যাগ করা, মাদক থেকে দূরে থাকাসহ ভবিষ্যতে কোনো অপরাধের সঙ্গে নিজেকে না জড়ানো।
অভিভাবক মো. খোকন মিয়া বলেন, আদালত আমার সন্তানকে কারাগারে না পাঠিয়ে আমার জিম্মায় দিয়েছেন। এজন্য কৃতজ্ঞ আমরা। ৯টি শর্ত যেন আমার সন্তান পালন করে সেদিকে লক্ষ্য রাখব। ৯টি শর্ত পালন করা হচ্ছে কি না তা প্রবেশন কর্মকর্তা মো. শফিউর রহমান পর্যবেক্ষণ করবেন এবং প্রতি তিন মাস পরপর আদালতকে জানাবেন।
সুনামগঞ্জের প্রবেশন কর্মকর্তা মো. শফিউর রহমান বলেন, ৯ শর্তে আদালত ৭০ শিশুকে পরিবারের কাছে পাঠিয়েছেন। শিশুরা শর্তগুলো পালন করছেন কি না তা আমি দেখাশোনা করব।
নারী ও শিশু আদালতের পিপি হাসান মাহবুব সাদী বলেন, আদালত যুগান্তকারী রায় দিয়েছেন। এই রায়ের মাধ্যমে শিশুরা তাদের আপন ঠিকানা ফিরে পেয়েছে। এর আগেও কয়েকটি মামলায় ১৩৩ জন শিশুকে প্রবেশনের মাধ্যমে পরিবারের জিম্মায় পাঠিয়েছিলেন।
প্রসঙ্গত, এর আগে তিন দফায় ৯৫ মামলায় ১৩৩ জন শিশুকে একইভাবে প্রবেশন দিয়ে মামলা থেকে মুক্তি দিয়ে সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফেরার সুযোগ করে দিয়েছিলেন সুনামগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল এবং শিশু আদালতের বিচারক মো. জাকির হোসেন।