ভোলায় নৌকার সমর্থকদের হামলায় স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ আহত ৩৫
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:৫৫ পিএম, ২৪ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২১ | আপডেট: ০৯:০৬ এএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
পঞ্চম ধাপে ভোলা সদর উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ঘিরে ভোলার দুই ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের হামলায় স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ অন্তত ৩০ জন আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। আহতদের ভোলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আজ শুক্রবার (২৪ ডিসেম্বর) সকাল থেকে পালাক্রমে ভোলা সদর উপজেলার পশ্চিম ইলিশা ইউনিয়ন ও রাজাপুর ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পশ্চিম ইলিশা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী জহিরুল ইসলামের সমর্থকরা স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী গিয়াস উদ্দিনের বাড়িতে ডুকে হামলা ও ভাংচুর করে। এতে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী গিয়াস উদ্দিনসহ প্রায় ২০ জন গুরুতর আহত হয়েছে।
এ ছাড়াও রাজাপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মিজানুর রহমানের সমর্থকরা জনতাবাজার এলাকায় মোটরসাইকেল প্রতীকের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী রেজাউল হক মিঠু চৌধুরীর দুই কর্মীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। এ সময় হামলাকারীরা ওই দুই কর্মীর পায়ের রগ কেটে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী।
পশ্চিম ইলিশা ইউনিয়নে আহতরা হলেন, স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী গিয়াস উদ্দিন, তার মেয়ে জান্নাত, ভাই ইব্রাহিম, মানিক, নাজমা, সুজন, মোস্তফা, রাকিব, জাহিদ, সিদ্দিকসহ ২০ জন ভোলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
অন্য দিকে রাজাপুর ইউনিয়ননের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের হাসান আলী চকিদারের ছেলে মো: গিয়াস উদ্দিন ও একই ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ছিদ্দিক হাওলাদারের ছেলে আব্দুছ ছালাম হাওলাদারসহ ৫ জনকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। তারা ভোলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এদের মধ্যে গিয়াস উদ্দিনের দুই পায়ের রগ কেটে ফেলা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী।
পশ্চিম ইলিশা ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী গিয়াস উদ্দিনের মেয়ে জান্নাত বেগম বলেন, শুক্রবার সকালে আমার বাবা এলাকায় এক জানাজায় গিয়েছিলেন সেখানে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী জহিরের সমর্থকরা নানাভাবে জামেলা সৃষ্টি করে। আমরা বাড়ির সবাই নির্বাচনী প্রচারণায় ছিলাম। এই সুযোগে নৌকার প্রার্থী জহিরের ৫০ থেকে ৬০ জনের ক্যাডার বাহিনী আমাদের বাড়িতে ভাংচুর করে এবং আমাদের কর্মীদের উপর হামলা চালায়। তখন আমার বাবা তার কর্মীদের বাঁচাতে বাধা দিলে তারা তার বৈঠা দিয়ে তার উপর হামলা চালায়। খবর পেয়ে আমরা বাড়িতে গেলে আমাদের উপরও তারা হামলা চালায়।
এদিকে পশ্চিম ইলিশা ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী জহিরুল ইসলামের সাথে তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায় তাই তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
অন্য দিকে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী রেজাউল হক মিঠু চৌধুরী অভিযোগে করে বলেন, সকালে আমার কর্মী গিয়াস উদ্দিন জনতা বাজার তার ওষুধের ফার্মেসিতে বসা ছিল এবং অপরকর্মী ছালাম হাওলাদার ওই বাজারের একটি চায়ের দোকানে বসা ছিল। এ সময় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মো: মিজানুর রহমানের উপস্থিতিতে তার কর্মী নাছির সরদার, আলতু ফরাজী, ডিস জামাল, ইকবাল চকিদারসহ ২০ থেকে ২৫ জনের একটি গ্রুপ ধারালো অস্ত্র নিয়ে আমার এ দুই কর্মীর ওপর হামলা চালায়।
এ সময় হামলাকারীরা গিয়াস উদ্দিন ও ছালামকে কুপিয়ে জখম করে এবং পায়ের রগ কেটে দেয়। হামলাকারীদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তাদের মাথা, ঘাড় ও পায়ে গুরুতর জখম হয়। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় তাদের উদ্ধার করে ভোলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে গিয়াস উদ্দিনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলেও জানান তিনি।
নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মো: মিজানুর রহমান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি হামলার বিষয়ে কিছুই জানি না। আমি আমার কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে সকাল থেকেই নির্বাচনী প্রচারণায় আছি। আমি খবর শুনে ঘটনাস্থলে গিয়ে কিছুই দেখতে পাইনি।
ভোলা সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এনায়েত হোসেন জানান, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভোলার রাজাপুর ও পশ্চিম ইলিশা ইউনিয়নে সমর্থকদের মাঝে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। আমার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন হয়েছে।
উল্লেখ্য, আগামী ৫ জানুয়ারি পঞ্চম ধাপে ভোলা সদর উপজেলা ১২ ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।