সুনামগঞ্জে বালি উত্তোলন নিয়ে পাল্টাপাল্টি ঝাড়ু মিছিল, এলাকায় উত্তেজনা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:৪৯ পিএম, ২০ নভেম্বর,শনিবার,২০২১ | আপডেট: ০৮:৫৬ পিএম, ২২ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
সুনামগঞ্জ সীমান্তে অবস্থিত মাহারাম ও যাদুকাটা নদীর বালি উত্তোলন নিয়ে গতকাল শুক্রবার (১৯ নভেম্বর) দিনব্যাপী দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ঝাড়ু মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এঘটনাকে কেন্দ্র করে দেখা দিয়েছে উত্তেজনা। যেকোন মূহতে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগী এলাকাবাসী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে- আইনগত জটিলতার কারণে দীর্ঘদিন যাবত জেলার সীমান্ত নদী মাহারাম ও যাদুকাটা থেকে বালি উত্তোলন বন্ধ ছিল। সম্প্রতি উচ্চ আদালতে নির্দেশে জেলা প্রশাসন নদীর সীমানা নির্ধারণ করে দেয় বালি উত্তোলনের জন্য। কিন্তু এলাকার প্রভাবশালীরা আইন অমান্য করে সেইভ মেশিনসহ বিভিন্ন যন্ত্র নিয়ে দুই নদীর তীর কেটে ও গভীর কোয়ারী (মৃত্যু কূপ) তৈরি করে অবাধে বালি ও পাথর উত্তোলন করছে।
প্রশাসনের চোখে ফাঁকি দিয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা দীর্ঘদিন যাবত তীর কেটে ও কোয়ারী তৈরি করে অবৈধ ভাবে বালি-পাথর বিক্রি করে হয়ে গেছে কোটিপতি। কিন্তু তাদের কারণে জেলার তাহিরপুর উপজেলা সীমান্তের লাউড়গড় বিজিবি ক্যাম্প হতে শুরু করে পর্যটনস্পট শিমুল বাগান, বারেকটিলা ও লাউড়গড় বাজার, মানিগাঁও, ঘাগটিয়া, ডালারপাড়, জাঙ্গালহাটি, রাজারগাঁও, গুচ্ছগ্রাম, বিন্নাকুলি, লামাশ্রম, ঘাগড়া, গরকাটিসহ যাদুকাটা ও মাহারাম নদীর দুই তীরে অবস্থায় আরো একাধিক গ্রামের শতশত একর ফসলি জমি, বাঁশ বাগান ও পাকা সড়কসহ কয়েক হাজার বসতবাড়ি ইতিমধ্যে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
দুই নদীর বালি ও পাথর খেঁকো সন্ত্রাসীদের অবৈধ কর্মকান্ড তুলে ধরার কারণে দৈনিক সংবাদ প্রতিনিধি ও তাহিরপুর উপজেলা প্রেসক্লাব সহ-সভাপতি কামাল হোসেনকে গাছে বেঁধে নির্যাতন করা হয়। আর এনিয়ে সারাদেশে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
অপরিকল্পিত ভাবে বালি ও পাথর উত্তোলনের কারণে প্রকৃতি ও জীববৈচিত্রসহ জনজীবন মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হতে দেখে গত ৩ নভেম্বর জেলা প্রশাসকের নিকট একটি চিটি দেন উপজেলা চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল। পরে এবিষয়ে তদন্ত করে সত্যতা পায় প্রশাসন। এবং গত মঙ্গলবার (১৭ নভেম্বর) দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত টাস্কফোর্সের মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে ১০টি মামলায় ২জনকে ৩মাসের কারাদন্ডসহ ১৮জনকে ১০লক্ষ ৫০হাজার টাকা অর্থদন্ড করা হয়।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রায়হান কবিরের নেতৃত্বে পরিবেশ অধিদপ্তর, পুলিশ, বিজিবি ও আনসার বাহিনীর সমন্বয়ে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়।
এজন্য গতকাল শুক্রবার (১৯ নভেম্বর) বেলা ১১টায় শতশত শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু চৌধুরী বাবুলের বিরুদ্ধে ঝাড়ু মিছিল নিয়ে তাহিরপুর উপজেলার প্রধান প্রধান সড়ক পদক্ষিণ শেষে দুপুর ১২টায় উপজেলার শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামে মানববন্ধন করে। প্রায় ঘন্টাব্যাপী অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন- যাদুকাটা নদীর বালি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সাহিদ মিয়া, সাধারণ সম্পাদক হাকিকুল ইসলাম রাজা, শ্রমিক সংঘের শ্রমিক সর্দার মাসুক মিয়া, শফিক মিয়া, রুবেল মিয়া, ইসমাইল মিয়া, শৈলন বাবু, আক্তার মিয়া, ইকরাম হোসেন, হযরত আলী, কাজিম উদ্দিন, আব্দুস সাত্তার, আব্দুল জলিল, মনাই মিয়া, আলী হোসেন প্রমুখ।
অপরদিকে এঘটনার প্রেক্ষিতে সন্ধ্যায় ও বিকেলে তাহিরপুর উপজেলা সদর ও বাদাঘাট বাজারসহ একাধিক স্থানে পৃথক ভাবে উপজেলা চেয়ারম্যানের পক্ষে মিছিল ও প্রতিবাদ সভা করে বক্তব্য রাখেন- উপজেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি আলী মর্তুজা, কৃষি ও সমবায় সম্পাদক হাবিবুর রহমান খেলু মিয়া, সহ-দপ্তর সম্পাদক শাহীন রেজা, তাহিরপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বোরহান উদ্দিন, বাদাঘাট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আফতাব উদ্দিন প্রমুখ।
এব্যাপারে তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল বলেন- আইন অমান্যকারী একটি মহল দীর্ঘদিন যাবত অবৈধ ভাবে মাহারাম ও যাদুকাটা নদীর তীর কেটে বালি ও পাথর উত্তোলন করে পর্যটন স্পট শিমুল বাগানসহ নদী তীরবর্তী নিরীহ অসহায় মানুষদের বিরাট ক্ষতি সাধন করছে। আমি জনস্বার্থে ওদের অন্যায় কাজের বিরুদ্ধে কথা বলার কারণে ভাড়াটে লোক দিয়ে মিছিল, মিটিং করে স্বার্থ উদ্ধার করতে চাইছে। কিন্তু আমি ষড়যন্ত্র কারীদের অন্যায়ের সাথে আপস করব না।