কুমিল্লায় সরকারি খাল-নদী জবর দখল দূষণে অস্তিত্ব হুমকিতে
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:২২ পিএম, ১১ অক্টোবর,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ০১:৫২ পিএম, ২২ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
কুমিল্লা দক্ষিনাঞ্চলের লাকসাম, বরুড়া, লালমাই, নাঙ্গলকোট ও মনোহরগঞ্জ উপজেলাসহ পৌর শহরের চর্তুদিকে জবর দখল ও দূষণে বিপন্ন হয়ে পড়েছে সরকারি খাল, পুকুর, ডোবা ও নদীগুলো। বর্ষাকালের শেষ মূহূর্তেও কোন কোন স্থানে জলাবদ্ধতায় এলাকার খাল-পুকুর ও ডাকাতিয়া নদীর পানি পঁচে গেছে। ফলে অবনর্নীয় দূভোর্গ পোহাতে হচ্ছে এ অঞ্চলের কয়েক লাখ মানুষকে।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, এ অঞ্চলের একমাত্র ডাকাতিয়া নদীসহ প্রায় অর্ধশতাধিক খাল জবর দখলসহ ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি নামার কোন জায়গা নেই। ফলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে পৌরশহরসহ উপজেলা গুলো বর্ষাকাল আসলেই যান চলাচল এবং সার্বিক যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেকটাই ঝুঁকির মধ্যে থাকতে হয়। প্রায় এলাকার মানুষ বর্ষাকালে জলাবদ্ধতার কারনে হাটে-বাজারে যেতে পারে না।
পৌর শহরের একাধিক গ্রামের কাঁচা সড়ক ছাড়াও উপজেলা গুলোর নিম্নাঞ্চলের একাধিক কাঁচা-পাকা সড়কগুলো এখনও খানা-খন্দে ভরা। লালমাই-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কে এবং চাঁদপুর রেলগেইটের উত্তরে সংযোগ সড়কের পাশে ময়লা-আবর্জনায় যেন শহরের পরিবেশকে বেসামাল করে তুলেছে। সরকারি খালগুলো জবর দখল করে স্থানীয় প্রভাবশালীরা আবাসিক ভবন ও বিপনী বিতান গড়ে তুলেছে। অথচ স্থানীয় ভূমি অফিস, পৌরসভা, উপজেলা, জেলা পরিষদ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা রহস্যজনক কারনে যেন নিরব দর্শক।
এ দিকে বর্তমান সরকার এলাকার সার্বিক উন্নয়নের কথা চিন্তা করে জেলা দক্ষিনাঞ্চলের বেশকিছু খাল পূনঃখননের কাজ শুরু করেছে। এতেও ওইসব খাল খননে কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এলাকার লোকজন। উপজেলা গুলোতে কয়েক’শ কোটি টাকার নানা অবকাঠামো উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়ন করার পাশাপাশি প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা বরাদ্দে এ অঞ্চলে নানা প্রকল্প বাস্তবায়ন করে চলেছে। লাকসাম, নাঙ্গলকোট ও বরুড়া পৌরশহরে উন্নয়ন কর্মকান্ডে এখন স্মার্ট সিটিতে এগিয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রগুলো আরো জানায়, ডাকাতিয়া নদীসহ সংযোগ খালগুলো এ উপজেলার পানি নিষ্কাশনের একমাত্র মাধ্যম। সরকারী খালগুলোর মধ্যে চাইলতাতলী, ফতেপুর, ঘাগৈর, বেরুলা, কার্জন, মেল্লা, কুচাইতলী ও ছিলনিয়া খালের অবস্থা বর্তমানে অস্তিত্ব সংকটে। এছাড়া লালমাই-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কটি চারলেনে রূপান্তরিত করতে পশ্চিম পাশে সরকারি সম্পদ ব্যবহার না করে পূর্ব পাশে বেরুলা খালটি ভরাট করে সড়কের কাজ করায় বেরুলা খালটির অস্তিত্ব বিলীন হয়ে পড়েছে। ওইসব খালগুলো জবর দখল ও ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি প্রবাহ গতিহীন। তার উপর ময়লা আবর্জনাসহ মিল-কারখানার বিষাক্ত পানি জলাবদ্ধ হয়ে এ অঞ্চলের বিশুদ্ধ পানির ব্যবহার মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়ে নানা রোগের আতংকে রয়েছে সকল পেশার মানুষ।
ইতিমধ্যে খালের উপর ব্রীজ ও কালভার্ট গুলোর প্রবেশ পথ বন্ধ হয়ে গেছে। পৌর এলাকাসহ উপজেলা গুলোর নিম্নাঞ্চলের ওইসব গ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে অতীতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন তেমন কোন প্রদক্ষেপ না নেওয়ায় প্রতিনিয়ত বর্ষাকাল আসলেই এলাকার জনজীবন মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সূত্রগুলো আরও জানায়, জেলার দক্ষিনাঞ্চল জলাখ্যাত এ অঞ্চলের মধ্যে লাকসাম শহরে ১ম শ্রেণীর একটি পৌরসভা। প্রায় লক্ষাধিক লোকের বসবাস। প্রতিনিয়ত জনসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি এলাকার এ সমস্যা মারাত্মক দূর্ভোগ বয়ে আনছে। প্রত্যেক বছর বর্ষাকাল আসলেই এলাকার মানুষ জলাবদ্ধতার সম্মুখিন হতে হয়। স্থানীয় প্রশাসন জবর দখলকারী ও নদী-খালের ভরাট নিরসনে কার্যকরী কোন প্রদক্ষেপ না নিলে আগামী দিনগুলোতে মানুষের দূর্ভোগ আরো চরম আকার ধারন করবে।
খাল-নদী, পুকুর-ডোবা ও জলাশয়ে অবৈধ ডেইজার বানিজ্যে বালু উত্তোলনের ফলে এবং অবৈধ মৎস্য বেড়ীর কারনে জলাবদ্ধতায় উপছে পড়া পানিতে এলাকার বাড়ী-ঘরে পানি ঢুকে এলাকার পরিবেশ মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়বে। এছাড়া জলাবদ্ধতায় কাঁচা-পাকা সড়কের অবস্থা অত্যান্ত নাজুক। শহর এলাকার নদী, খাল ও ড্রেনেজ দিয়ে পানি নামতে না পারলে এলাকার জন দূর্ভোগ আরো কঠিন হয়ে দাঁড়াবে অভিমত স্থানীয় পরিবেশবিদদের।
লাকসাম পৌরসভার জনৈক কর্মকর্তা জানায়, পৌর শহর এলাকার জলাবদ্ধতা দূরীকরনে লাকসাম পৌর কর্তৃপক্ষ চলমান অর্থবছরে শত কোটি টাকা ব্যয়ে নানামুখী উন্নয়ন কর্মকান্ড এবং শহরের প্রধান প্রধান স্থানে ডাকাতিয়া নদী সংযুক্ত ড্রেনেজ প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করছেন এবং এ ছাড়া নাগরিক সুবিধা বাড়াতে আগামী কিছুদিনের মধ্যে আরো ব্যাপক নতুন নতুন উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে।
এ ব্যাপারে জেলা-উপজেলাসহ সংশ্লিষ্ট একাধিক বিভাগ কর্মকর্তাদের মুঠোফোনে বার বার চেষ্টা করেও তাদের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।