এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যানের মৌন দ্বন্দ্ব টিকা পাননি দুর্গম চরাঞ্চলের সহস্রাধিক মানুষ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:২৯ পিএম, ৬ অক্টোবর,
বুধবার,২০২১ | আপডেট: ০৫:৩৩ পিএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর টিকা না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে গেলেন কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী দুর্গম চরাঞ্চল সাহেবের আলগা ইউনিয়নের সহস্রাধিক মানুষ। অভিযোগ উঠেছে, টিকা মজুদ থাকার পরও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার গাফিলতির কারণে করোনা ভ্যাকসিন পাননি তারা। এ নিয়ে টিকা গ্রহিতাদের মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পক্ষ থেকে করোনা ভ্যাকসিন প্রদান করা হবে জানিয়ে মাইকিং সহ ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয়।
আজ বুধবার সকাল থেকে ব্রহ্মপুত্র নদ বেষ্টিত বিভিন্ন চর ও দ্বীপ চরের বাসিন্দারা সাহেবের আলগার ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের সামনে জমায়েত হন। ভ্যাকসিন প্রদানে স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক এম এ মতিন, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা গোলাম হোসেন মন্টু, ভাইস চেয়ারম্যান আবু সাঈদ সরকার, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সুভাষ চন্দ্র সরকার উপস্থিত থাকার কথা। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন মন্টু, ভাইস চেয়ারম্যান আবু সাঈদ সরকার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রঞ্জন মজুমদার ভোলা, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক এনামুল হকসহ স্বাস্থ্য কর্মীরা যথারীতি সাহেবের আলগার আনন্দ বাজারে উপস্থিত হন। কিন্তু রহস্যজনক কারণে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ভ্যাকসিন সরবরাহ না করায় ওই দিন টিকা প্রদান করা সম্ভব হয়নি।
ভূক্তভোগি জাহাজের আলগা এলাকার এরশাদুল হক ও রাশেদা দম্পতি জানান,মাইকিং হুইনা (শুনে) ছোট সাওয়াল (ছেলে) নিয়া সকালে আইছি (এসেছি) টিকা নিবার নিগা (নিতে)।এহোন (এখন) হুনি (শুনি) আজক্যা টিকা দিব না। টিকা দিব না তাহাইলে মাংকিং কইরা লোকগোনার (লোকগুলোর) হাতে (সাথে) এমন করল ক্যান। মেকুরের আলগার ছানোয়ার হোসেন, প্রবাসী জহুরুল ইসলাম, দৈ খাওয়ার চরের নুরুজ্জামান মিয়া, শোলেকা বেগম, রিনা বেগম, কাজিয়ার চরের নুর জামান, আব্দুল কুদ্দুস, আব্দুর রহমান, জাহানারা বেগম ও আম্বিয়া বেগমসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, সকাল ৮ থিকা (থেকে) জন প্রতি ২০০ থেকে ৫০০ টেকা (টাকা) খরচ কইরা (করে) নাও (নৌকা) ভাড়া কইরা (করে) আইছি (এসেছি)। এহোন (এখন) স্যারেরা কয় টিকা দিব না। প্যাটে (পেটে) খায় কাম করলি হ্যারে (কাজ করলে) ৩’শ টেকা পাইতাম। আজকে মোটের উপর ৫ 'শ টেকা লস। বারেবারে (বারবার) টেকা খরচ কইরা টিকা নিবার আসমু (আসবো)। আজ যারা ঘুরে গেলেন এর অর্ধেক লোক পরের তারিখে টিকা নিতে আসবে না বলেও জানান তারা।
তবে একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, এমপি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের মৌন দ্বন্দ্বের কারণে টিকা প্রদান করা সম্ভব হয়নি। তবে এমপি অধ্যাপক এম এ মতিন ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন মন্টু মৌন দ্বন্দ্বের বিষয়টি অস্বীকার করেন।
দায়িত্বরত স্বাস্থ্য সহকারী জয়নুল আবেদিন ও বাবুল হোসেন জানান, টিএইচও (প.প কর্মকর্তা)স্যারের নির্দেশে এসেছি। আজ এখানে হাজার হাজার লোক টিকা নেয়ার জন্য এসেছে, যথারীতি তারা রেজিষ্ট্রেশনও করছেন। কিন্তু কি কারণে টিকা দেয়া হল না সেটা বুঝলাম না।
টিকা নিতে সহস্রাধিক লোক আসলেও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.সূভাষ চন্দ্র সরকার বলেন, লোক কম থাকায় টিকা সরবারহ করা হয়নি।
জেলা সিভিল সার্জন কর্মকর্তা ডা. হাবিবুর রহমান এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ভাল বলতে পারবেন বলে জানান তিনি।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম হোসেন মন্টু বলেন, আজ টিএইচও আমাকে জানিয়েছেন সাহেবের আলগা ইউনিয়নে টিকা প্রদান করা হবে। আমি নিদিষ্ট সময়ে উপস্থিত হই। কিন্তু হঠাৎ করে টিএইচও জানান এমপি স্যার আসতে পারছেন না। কেন পারছেন না তা জানি না। এদিকে টিকা নিতে বিভিন্ন চর থেকে এসে বহু মানুষ হয়রানির শিকার হয়েছেন। এতে আমি মনে করি সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে। কেন, কার ইঙ্গিতে টিএইচও আজকের প্রোগ্রাম বাতিল করলেন, বিষয়টি আমি সিভিল সার্জন মহোদয়কে জানিয়েছি। টিকা না পাওয়ায় এখানকার মানুষ অনেক ক্ষুব্ধ বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে অধ্যাপক এম এ মতিন এমপি বলেন, ভ্যাকসিন নিতে তাদেরকে উদ্ধুদ্ধ করা হয়েছে। আজ তাদের রেজিষ্ট্রেশন করা হল, পরবর্তীতে ভ্যাকসিন প্রদান করা হবে।