ধলই নদীর ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ সংস্কার হয়নি ৮ বছরে, নদীগর্ভে বিলীনের পথে বসতবাড়ি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:০৮ পিএম, ২৭ সেপ্টেম্বর,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ১২:৫৩ পিএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
সীমান্তবর্তী ধলাই নদীর ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ ৮ বছরেও সংস্কার করা হয়নি বলে ভুক্তভোগী বাঁধবাসীরা অভিযোগ করেছেন। বৃষ্টি কিংবা বন্যা হলে ঝুঁকিপূর্ণ ও অর্ধভাঙ্গা বাঁধ ভেঙ্গে নদীগর্ভে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা বসতবাড়ি সহ প্রাচীন মসজিদ। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী ইসলামপুর ইউনিয়নের মোকাবিল গ্রামের ধলই নদীর ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ সংস্কার হয়নি ৮ বছরেও।
ভারতের সীমান্তবর্তী ধলই নদীর ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক সংস্কার না করায়, কয়েক বছর পৃর্বে স্থানীয়দের উদ্যোগে সংস্কার করার চেষ্টা করলে ভারতের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ) বাধার কারণে তা সম্ভব হয়নি, তারপর স্থানীয়রা পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে সংস্কার করার জন জনপ্রতিনিধি সহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করেন, সংস্কারের আশ্বাস পেয়েছেন কিন্তু আদৌ পরিপূর্ণ ভাবে সংস্কার করা হয়নি।
ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায় ধলই নদীর দুর্বল ও ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধের উপর পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক নিম্ন মানের বস্তায় বালি ভরাট করে বাঁধ সংস্কার করা হচ্ছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন ৩ মাস ধরে নিম্ন মানের বস্তায় বালি ভরে বেড়িবাঁধের ভাঙ্গা অংশ ভরাট করা হচ্ছে, কাজের গতি ও মান নিম্ন মানের হওয়ায় বৃষ্টি দিলে ভাঙ্গা অংশ আরো ভেঙ্গে যাচ্ছে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায় ইতিমধ্যে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ ভারতের ভাঙ্গা অংশে সিমেন্টের ব্লক ও বালি ভর্তি বস্তা দিয়ে ভাঙ্গা বাঁধ সংস্কার করেছে, কিন্তু বাংলাদেশ অংশে তুলনামূলক কিছুই হয়নি।
ইসলামপুর ইউনিয়নের সাবেক সদস্য ও মনিপুরী (পাঙ্গাল) সম্প্রদায়ের কয়েকজন অভিযোগ করে বলেন, ধলই নদীর ঝুঁকিপূর্ণ ভাঙ্গা বেড়িবাঁধ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক বস্তা ভরে বালি ফেলার সময় ১৫ দিন পৃর্বে সেপ্টেম্বর প্রথম দিকে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী, বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ) বাধা সৃষ্টি করে। এসময় বিএসএফ জওয়ানরা জানায় বাঁধ সংস্কারের ৩ মাস সময় দেওয়ার পরও সংস্কার করা হয়নি, বিএসএফ কর্তৃক অতিরিক্ত আর সময় না দেওয়ার কথা জানালে, মনিপুরী মুসলিম সম্প্রদায়ের কয়েকজন কাকুতি মিনতি করে বিএসএফকে অনুরোধ করলে, বিএসএফ জওয়ানরা চলে যায়।
ধলই নদীর মোকাবিলের এই ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ সম্পূর্ণ ভেঙ্গে গেলে নদীগর্ভে তলিয়ে যাবে ঐতিহ্যবাহী ১৫০ বছরের প্রাচীন মসজিদ সহ বসতবাড়ি এবং বন্যায় প্লাবিত হবে ইসলামপুর ও আদমপুর ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রাম। স্থানীয়রা বাঁধটি দ্রুত সংস্কারের দাবি জানান। ইসলামপুর ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের সদস্য মিনাল কান্তি সিংহ বলেন ৮ বছর পৃর্বে ধলই নদীর বাঁধটি ভেঙ্গে যায়, তখন সীমান্তবর্তী ধলই নদীর ভাঙ্গা ও ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ সংস্কার করার জন্য, আমি ও ইসলামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সহ পানি উন্নয়ন বোর্ড মৌলভীবাজার বরাবরে আবেদন করেছি।
এ বিষয়ে ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল হান্নান এর সাথে মোবাইল ফোনে আলাপকালে জানান, ছয় সাত বছর আগে ভারত ও বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মধ্যে ৩ বছরের চুক্তি হয়, যে উভয় দেশ তিন বছরের মধ্যে নো ম্যানস ল্যান্ড এর সকল ভাঙ্গা ও ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ সংস্কার করবে, ৩ বছরের মধ্যে ভারত সরকার তাদের সকল বেড়িবাঁধ সংস্কার করলেও, বাংলাদেশের পানি উন্নয়ন বোর্ড ৩ বছরেও তাদের ভাঙ্গা ও ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ সংস্কার করতে ব্যর্থ হয়।
তিনি আরো বলেন, চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ ৩ বছরে বাঁধ সংস্কার করতে না পারায় বিএসএফ কাজে বাধা সৃষ্টি করে, তখন টেন্ডার দেওয়া ব্লক এর অর্ধেক কাজ করে ফেলে চলে যায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ধলই নদীর ভাঙ্গা এবং ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ সংস্কার ও কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মৌলভীবাজার (পওর শাখা-৩, বাপাউবো) মোঃ সাকিব হোসেন এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন অস্থায়ী জিও বস্তায় বালি ভরাটের কাজে ২ বার ভারতের সীমান্ত রক্ষীবাহিনী বিএসএফ বাঁধা সৃষ্টি করে, তারপর আমরা মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ( বিজিবি) মাধ্যমে বিষয়টি মিমাংসা করে পুনরায় জিও বস্তায় বালি ভরাট করে বাঁধ সংস্কার করছি।
জিও বস্তায় বালি ভরাটের পর পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক ঢাকা থেকে একটি প্রতিনিধি দল এসে বস্তা গুলো গননা করার পর, বস্তাগুলো বেড়িবাঁধে দেওয়া হয়, এজন্য দেরি হচ্ছে। ২০১২ সালের ভারত ও বাংলাদেশের পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩ বছরের চুক্তির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এই সময় আমি ছিলাম না, তবে ভারত ও বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মধ্যে ৩ বছরের চুক্তি হয় যে, উভয় দেশ নিজেদের ঝুঁকিপূর্ণ ভাঙ্গা বাঁধ সংস্কার করবে, সেই সময় ভারত তাদের অংশের কাজ সম্পুর্ন করলেও বাংলাদেশ অংশ শেষ করতে না পারায় বিএসএফ বাঁধা সৃষ্টি করে, তখন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অর্ধেক ব্লকের কাজ করে চলে যায়।
তিনি আরো বলেন ইতিমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড সীমান্তবর্তী ধলই নদীর ৫০ টি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ ডিপিপি ব্লকের জন নির্বাচন করেছে, আগামী ১-২ বছরের মধ্যে বিল পাস হলে বিএসএফ সাথে সমন্বয় করে কাজটি করা হবে। মোকাবিলের গ্রামের অস্থায়ী কাজটি আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে শেষ করা হবে বলেন জানান।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো) মৌলভীবাজারের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (পওর সার্কেল) প্রকাশ কৃষ্ণ সরকার এর সাথে ফোনে আলাপকালে বলেন ধলই নদীর ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধে বর্তমানে জিও বস্তায় বালি ভরে অস্থায়ী কাজ করা হচ্ছে। স্থায়ী কাজের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃর্ক ডিপিপি করা হচ্ছে বলে জানান।