মহেশপুরে বিল পরিশোধ না করায় ৪ কোটি টাকার পানির প্ল্যান্ট অকেজো
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:৪১ এএম, ১৩ সেপ্টেম্বর,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ০৮:৪৭ পিএম, ২২ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
দুই কোটি টাকার বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ না করায় চার কোটি টাকার ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট পড়ে আছে। ফলে দুই বছর আগে নির্মাণ করা করা হলেও বিশুদ্ধ পানি পাচ্ছে না দেশের সবচেয়ে পুরনো মহেশপুর পৌর এলাকার বাসিন্দারা।
কর্তৃপক্ষ বলছেন, বর্তমান পৌর পরিষদের পূর্বে যারা দায়িত্ব পালন করেছেন তারা টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া করে গেছেন। বর্তমান পরিষদ চলমান বিল পরিশোধের পাশাপাশি বকেয়া বিলও দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু কম আয়ের পৌরসভা হওয়ায় এক সঙ্গে বকেয়া পরিশোধ করতে পারছেন না। আর এই অপরাধে বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ তাদের এই প্রকল্পে সংযোগ দিচ্ছেন না। ফলে নির্মাণ শেষ হলেও পড়ে থেকে প্ল্যান্টটি নষ্ট হতে চলেছে। অবশ্য তারা বিকল্প ব্যবস্থায় চালানো যায় কি না সেই চেষ্টা করছেন বলে জানান পৌরসভার মেয়র আব্দুর রশিদ খান।
স্থানীয় জনস্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মহেশপুর পৌর এলাকার ৯৬ শতাংশ টিউবওয়েলের পানিতে আর্সেনিকের মাত্রা বেশি। দীর্ঘদিন এ পানি পান করলে মারাত্মক রোগ-ব্যাধি দেখা দিতে পারে। তাছাড়া পৌরসভার সাপ্লাই পানিতে অতি মাত্রায় আয়রন থাকায় পানি পানের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ফলে পৌরসভার পাইপ লাইনের মাধ্যমে সুপেয় পানি সরবরাহের লক্ষ্যে আর্সেনিক ও আয়রন রিমুভাল প্ল্যান্ট স্থাপনের জন্য একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়।
এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ৪ কোটি ২৯ লাখ ৬৪ হাজার ৭৭৫ টাকা ব্যয় করা হরেয়ছে। কিন্তু এখনো আলোর মুখ দেখেনি। মহেশপুর পৌরসভার মেয়র আব্দুর রশিদ খান জানান, ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হওয়ায় ঠিকাদার ৮০ শতাংশ কাজের বিল উত্তোলন করেছেন। কিন্তু বিদ্যুৎ সংযোগ না পাওয়ায় তারা প্ল্যান্টটি চালু করতে পারছেন না। ফলে সাড়ে ৩৫ হাজার পৌরবাসী আয়রন ও আর্সেনিকমুক্ত সুপেয় পানির অভাবে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন।
মেয়র আরো জানান, বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ না করায় ওয়েস্ট পাওয়ার জোন ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি মহেশপুর পৌরসভার সব ধরনের নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান বন্ধ রেখেছে। ফলে তিনটি পাম্প হাউজ ও ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে বিদ্যুৎ সংযোগ তারা দিচ্ছেন না। বিদ্যুৎ সংযোগ না পাওয়ার কারণে ঠিকাদার বিদ্যুৎ সংক্রান্ত অবশিষ্ট কাজ শেষ করতে পারছেন না। ফলে প্ল্যান্টটিও চালু করতে পারছেন না।
এ বিষয়ে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির মহেশপুর অফিসের আবাসিক প্রকৌশলী সেকেন্দার হাসান জাহাঙ্গীর জানান, ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট ও পাম্প হাউজে বিদ্যুৎ সংযোগ নেয়ার জন্য মহেশপুর পৌরসভা থেকে আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু পৌরসভার নিকট ২ কোটির অধিক টাকা বকেয়া রয়েছে। এতো বিপুল অংকের টাকা বকেয়া রেখে কোনো ধরনের সংযোগ না দেয়ার জন্য তাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ রয়েছে। ফলে বিল পরিশোধ অথবা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা ছাড়া পৌরসভায় নতুন সংযোগ প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না।
এ বিষয়ে মহেশপুর পৌরসভার মেয়র আব্দুর রশিদ খান আরো বলেন, পৌরসভার পূর্বের চেয়ারম্যান ও মেয়র কোটি টাকার বিদ্যুৎ বিল না দিয়ে বকেয়া রেখে গেছেন, যা সুদ বেড়ে ২ কোটির অধিক হয়েছে। তিনি আরো বলেন, বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকার কারণে সোয়া ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত প্রকল্প চালু না হওয়ায় তার যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
যে কারণে তারা বিকল্প ব্যবস্থায় পরীক্ষামূলক চালুর চেষ্টা করছেন। তবে তিনি শর্তসাপেক্ষে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট চালু করার দাবি জানিয়েছেন। তাহলে পৌরসভা এলাকার সাড়ে ৩৫ হাজার মানুষ আর্সেনিক ও আয়রনমুক্ত পানি পাবেন। তারা পানিবাহিত স্বাস্থ্যঝুঁকি মুক্ত থাকবেন।