আগৈলঝাড়ায় হাজার হাজার জনগণের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা বাঁশের সাঁকোটি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৪৫ পিএম, ১১ সেপ্টেম্বর,শনিবার,২০২১ | আপডেট: ১১:৪৮ পিএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
আগৈলঝাড়ায় একটি সেতুর অভাবে হাজার হাজার জণগনের যাতায়াতে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। এব্যাপারে এলজিইডি বিভাগের কোন মাথাব্যাথা নেই। স্থানীয় জনগণ বার বার এলজিইডি অফিসে ধর্না দিয়েও কোন কাজ হচ্ছে না।
জানা গেছে, উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের বড় বাশাইল গ্রামে উপজেলা পরিষদের রাস্তার সাথে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংযোগ সড়কের স্থলে খালের উপরে একটি বাঁশের সাঁকো রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায়। বাঁশের সাঁকো দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার পথচারীসহ স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা যাতায়াত করছে। এই সাঁকোটি এলাকার জনগণ নিজেদের অর্থায়নে স্বেচ্ছাশ্রমে তৈরি করেছেন।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের বড় বাশাইল খালের ওপর স্থানীয় জনগণ নিজ উদ্যোগে প্রায় ৩০ বছর আগে একটি বাঁশের সাঁকো তৈরি করেন, যা দুই বছর পর পর নতুন করে নির্মাণ করতে হয়। এই সাঁকোটি তাঁরা নিজেদের উদ্যোগে সংস্কারও করে আসছেন।
এই ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো পাড় হয়ে প্রতিদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, হাটবাজারসহ উপজেলা সদরে কাজের জন্য যেতে হয় এই এলাকার মানুষের। কিন্তু তাঁদের চলাচলের সুবিধার্থে খালের ওপর নির্মিত এই বাঁশের সাঁকোটি বাধ্য হয়ে পাড় হতে হয়। স্থানীয় জনগণ নিজ উদ্যোগে তাঁদের যাতায়াতের জন্য প্রায় ১২০ ফুট দৈর্ঘ্য সাঁকোটি নির্মাণ করেছেন।
গতকাল শুক্রবার (১০ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে দেখা যায়, লোকজন সাইকেল কাঁধে নিয়ে হেঁটে সাঁকো পার হচ্ছেন। সাবধানে চলাচল করছেন সবাই। কারণ, সাঁকোর দুই পাশে ধরনা এতোটাই দুর্বল যেকোনো সময় পড়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। প্রতিবছরই এই সাঁকোটির রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। তবে দুই বছর পর বাঁশের খুঁটি পরিবর্তন করতে হয়। এর সবই চলে স্থানীয় জনগণের আর্থিক সহায়তায়।
এই সাঁকো দিয়ে চলাচলে এলাকার জনগণ নানা দুর্ভোগের কথা তুলে ধরেন। বড় বাশাইল গ্রামের ব্যবসায়ী জাকির সরদার বলেন, ‘বছরের পর বছর ধরে গ্রামের মানুষ এই বাঁশের সাঁকো উপর দিয়ে চলাচল করে আসছি।’ স্থানীয় মোহাম্মদ মোল্লা, সাইফুল ইসলাম রব বলেন, ‘নিজেদের প্রয়োজনে গ্রামের মানুষ এক হয়ে এই বাঁশের সাঁকোটি বছরের পর বছর ধরে নির্মাণ ও সংস্কার করে থাকে। বর্ষার সময় কত যে দুর্ভোগ তা না দেখলে বোঝানো যাবে না।’
৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী শফিকুল ইসলাম, তামান্না আক্তার বলেন, ‘আমরা প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়েই নড়বড়ে এই বাঁশের সেতু দিয়ে স্কুল কলেজে যাতায়াত করছি। সেতুটির কথা মনে হলে ভয় লাগে। কখন বই খাতা নিয়ে নিচে পরে যাই। আমরা চাই, এখানে দ্রুত একটি পাকা সেতু তৈরি করা হোক।’
অনেক সময় যাতায়াতকারী পথচারীরা সাঁকো ভেঙ্গে নীচে পড়ে আহত হয়। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বাঁশের সাঁকো তৈরি করতে কোন সাহায্য সহযোগিতা করা হয়নি কখনও। গুরুত্বপূর্ণ এই স্থানে এলজিইডি বিভাগ কোন সেতু নির্মান না করে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে এক বাড়ির জন্য একটি সেতু নির্মান করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় রুবেল সরদার জানান, এলজিইডি বিভাগে স্থানীয় লোকজন লিখিত ও মৌখিক ভাবে বার বার বলেও কোন কাজ হচ্ছে না।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের সড়ক নির্মানের পূর্বে উপজেলা সদর থেকে উত্তর অঞ্চলের লোকজনের একমাত্র যাতায়াত পথ ছিল উপজেলা পরিষদের টিএন্ডটি অফিসের পাশ দিয়ে যে সড়কটি বড় বাশাইলে সংযুক্ত হয়েছে। এসড়কটির বিভিন্ন স্থানে সেতু নির্মান হলেও একমাত্র পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংযোগস্থলে খালের উপর বড় বাশাইল গ্রামের সেতুটি নির্মান করা হয়নি।
এ ব্যাপারে রাজিহার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়াম্যান ইলিয়াস তালুকদার বলেন, সমস্যাটি দীর্ঘ দিনের হলেও সেতু তৈরি করার সরকারি ভাবে কোন উদ্যোগ না নেয়ায় বাধ্য হয়ে এই গ্রামের প্রায় কয়েক হাজার মানুষ জোড়াতালি দিয়ে বাঁশের সাঁকো তৈরি করছেন। এ ব্যাপারে আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সেতু করে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছি, তবে আশা করি খুব শীঘ্রই সেখানে একটি সেতু তৈরি করা হবে।
এব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলী রাজ কুমার গাইন জানান, ওই স্থানসহ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ১০/১২ টি সেতুর প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে ঢাকা অফিসে কাগজপত্র প্রেরণ করা হয়েছে। বরাদ্ধ পেলে সেতুটি নির্মান করা সম্ভব হবে।