কাঙ্খিত রুপালী ইলিশ নিয়ে ঘাটে ফিরছে হাতিয়ার জেলেরা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:১৫ পিএম, ৫ সেপ্টেম্বর,রবিবার,২০২১ | আপডেট: ০৮:০০ পিএম, ২২ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
টানা ৬৫ দিন সাগরে মাছ ধরার সরকারী নিষেধাজ্ঞা ছিলো। সরকারী এ আদেশ জেলেরা মেনে নিয়ে অনেক কষ্টে দিন কাটিয়ে ইলিশের মৌসুমে মনে আশা বুনেছিলো ভালো কিছুর। নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পর জেলেরা সাগরে মাছ ধরার জন্য নেমে পড়ে। কিন্তু বৈরী আবহাওয়ার কারণে জেলেরা প্রত্যাশিত ইলিশ না পেয়ে অনেকটা শূণ্য হাতে তীরে ফিরে আসতো।
মহাজন ও ফিশিং বোট মালিকদের কাছ থেকে অগ্রিম নেয়া টাকা কিভাবে শোধ করবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ে। কিস্তু চলতি সপ্তাহে জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে রুপালী ইলিশ ধরা পড়ায় চিন্তা কমতে শুরু করেছে। কাঙ্খিত রুপালী ইলিশ নিয়ে ঘাটে ফিরছে জেলেরা। নোয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার উপকূলে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ নিয়ে ফিরছে মাছ ধরার ট্রলারগুলো। ট্রলার ভর্তি বড় বড় রুপালী ইলিশ নিয়ে হাতিয়ার চেয়ারম্যান ঘাটে ফিরছেন তারা।
জেলেরা জানান, সাগরে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার দেড় মাস পর চলতি সপ্তাহে জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ছে রুপালী ইলিশ। প্রতিটি ট্রলারে ৮০০ গ্রাম থেকে প্রায় দুই কেজি ওজনের প্রচুর ইলিশ ধরা পড়েছ। যার কারণে দামও ভাল পাচ্ছেন তারা। কর্মব্যস্ততা বাড়ায় খুশি জেলে, ট্রলার মালিক ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা। দিন যতই এগুচ্ছে বাড়ছে সাগরে ইলিশ আহরণ। মাছগুলোর আকারও অনেক বড়।
হাতিয়ার চেয়ারম্যানঘাট ঘুরে দেখা গেছে, ঘাটে এখন উৎসবের আমেজ। চলতি সপ্তাহে জেলে ও ব্যবসায়ীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে ঘাট এলাকা। ৬৫ দিন নিষেধাজ্ঞা শেষে সাগরে গেলেও বৈরী আবহাওয়ার কারণে জালে ওঠেনি ইলিশ। এতে হতাশ ছিলেন জেলে ও ব্যবসায়ীরা। কিন্তু চলতি সপ্তাহে পাল্টে গেছে এখানকার চিত্র। সাগর থেকে ট্রলার ভর্তি ইলিশ নিয়ে ঘাটে ফিরছেন জেলেরা।
ঘাট থেকে মোকামে তোলা হচ্ছে ছোট-বড় ইলিশ। ব্যবসায়ীদের হাঁকডাক ও বেচা-বিক্রিতে সরগরম হয়ে ওঠে চেয়ারম্যান ঘাট নামে পরিচিত এই মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রটি। অনেক ব্যবসায়ী কাঙ্খিত দাম পেয়ে ট্রাকে ট্রাকে দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠাচ্ছেন ইলিশের চালান।
বঙ্গোপসাগর থেকে ১৪ দিন পর ঘাটে ফিরেছে আল্লাহর দান নামে একটি ফিশিং বোট। বড় মাছ পেয়ে খুশি বোটের জেলেরা। বড় ইলিশ মাছ পাচ্ছে উল্লেখ করে বোটের আমিন মাঝি বলেন, আমরা এখন যে ইলিশ মাছ পাইতেছি তা দেড় কেজির উপরে। ছোট ইলিশ কম পাই। বড় পাছ পাওয়ায় দামও ভাল পাওয়া যাবে।
গভীর সমুদ্র থেকে ফিশিং বোট নিয়ে আসা হোসেন মাঝি বলেন, গভীর সমুদ্রে গেলে বড় বড় মাছ পাওয়া যায় এবং সেগুলো দেড় থেকে দুই কেজির। মাছ গুলোর বয়স দেড় থেকে দুই বছরের। খুব ভাল দাম পাবো। চেয়ারম্যান ঘাটের ইলিশের ব্যবসায়ী মাসুম বলেন, বর্তমানে ইলিশ মাছের চাহিদা বেশি আছে। দেড় দুই বছরের বড় বড় ইলিশ মাছ আছে। এই ঘাটে আমরা মাছ কিনে শান্তি পাই। এখানে জেলা আর বেপারীরা ভাল দামে মাছ বেঁচা কেনা করতে পারেন। গভীর সমুদ্রে বড় বড় মাছ পাওয়া যাচ্ছে।
চেয়ারম্যান ঘাটের মেসার্স মামুন এন্টারপ্রাইজের সত্বাধিকারী মো. মাইন উদ্দিন বলেন, এখন অনেক বড় বড় মাছ ধরা পড়ছে। মৌসুমের শুরুর দিকে এত মাছ ছিলো না। বর্তমানে অনেক মাছ জালে আসছে। মাছ গুলোর ওজন ৮০০ গ্রাম থেকে প্রায় দুই কেজির।
চেয়ারম্যান ঘাটের ইলিশের ব্যবসায়ী মো. আজাদ বলেন, হাতিয়া দ্বীপ মেঘনা নদী বেষ্ঠিত। এখানে ছয় মাস লবন পানি থাকে এবং ছয় মাস মিষ্টি পানি থাকে। তাই হাতিয়ার ইলিশ অনেক সুস্বাদু। মেঘনার ইলিশের চাহিদা বাংলাদেশের সব জায়গায় বেশি।
জেলা শহর থেকে ইলিশ কিনতে চেয়ারম্যান ঘাটে এসেছেন মোজাম্মেল নামের একজন। এতদূর এসেছেন কেন প্রশ্ন করতেই বলেন, শহরে তো তাজা পাবোনা। তাই অটো রিজার্ভ করে চলে এলাম। এখানে ইলিশ মাছের দামও সস্তা এবং সাইজেও বড়।
হাতিয়ার হরনী ইউনিয়নের বাসিন্দা আশরাফ হোসেন বলেন, হাতিয়া উপজেলায় প্রায় ১ লাখ থেকে দেড় লাখ জেলে ইলিশ মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে। এখন জমজমাট মাছের মৌসুম। যখন নিষেধাজ্ঞা থাকে তখন সরকার জেলেদের যে সুযোগ সুবিধা দেয় তাতে জেলেদের মোটামুটি চলে। তবে তুলনামূলকভাবে কম সংখ্যক জেলে সরকারি সুযোগ সুবিধা পায়। নিবন্ধন নাই এমন জেলের সংখ্যাই বেশি।
হাতিয়া মৎস্য সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইসমাইল বলেন, হাতিয়া উপকূলের ৫০০ ফিশিং বোট সাগরে মাছ আহরণ করে। প্রায় ১ সপ্তাহ ধরে নদীতে অনেক মাছ ধরা পড়ছে। আগে এই উপকূলে মাছ শিকারে গেলে ডাকাতের কবলে পড়তো জেলেরা। কিন্তু সাগরে কোষ্টগার্ডের তৎপরতায় বর্তমানে ডাকাত নেই। জেলেরা নির্বিঘ্নে মাছ ধরতে পারছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ডা. মোতালেব হোসেন বলেন, জেলায় নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৪০ হাজার ৮২ জন। এছাড়াও বিভিন্ন এলাকা থেকে আমাদের মোহনায় মাছ ধরতে জেলেরা আসে। আমরা জেলেদের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির জন্য তথ্যের হালনাগাদ শুরু করেছি। যেসব জেলেরা পেশা পরিবর্তন করেছে অথবা মারা গেছেন তাদের স্থানে নতুনদের নাম যুক্ত করা হবে।
তিনি আরও বলেন, শুধু ইলিশ মাছ না যেকোনো মাছ তার পরিবেশ অনুযায়ী স্বাদ ভিন্ন হয়। আমরা খুব ভাগ্যবান যে এই মোহনার পানি সাদু ও সামুদ্রিক পানি মিশ্রিত। যা ইলিশের জন্য খুব ভাল। এতে করে মাছ অনেক স্বাদের হয়। এটা আমাদের জন্য আল্লাহর রহমত।