সিরাজগঞ্জে সবগুলো পয়েন্ট নদীর পানি বৃদ্ধি, নাটুয়াপাড়া বাঁধ ধ্বসে ৭০ মিটার নদীগর্ভে
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:২৩ পিএম, ৩ সেপ্টেম্বর,শুক্রবার,২০২১ | আপডেট: ০৩:৩৩ পিএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
সিরাজগঞ্জে সবগুলো পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি বেড়েই চলেছে, বইছে বিপদসীমার অনেক উপর দিয়ে। এতে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধের হার্ড পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি ৯ সেন্টিমিটার বেড়ে আজ শুক্রবার সকাল ৬ টার সময় বিপদসীমার ৬৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
একই সময় জেলার উত্তরে যমুনা নদীর উজানে কাজিপুর পয়েন্টে পানি ১০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় এবং নদীর ভাটি অঞ্চল শাহজাদপুরের বাঘাবাড়ি ঘাট পয়েন্টে পানি ৬ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৬০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবোর) গজ রিডার আব্দুল লতিফ ও খন্দকার সুলতান মাহমুদ এই সকল তথ্য জানান।
সিরাজগঞ্জে সবগুলো পয়েন্টে যমুুনা নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে বিপদ সীমার অনেক উপর বইয়ে যাওয়ার পাশাপাশি দেশের অন্যতম বৃহৎ জলাধার চলনবিল সহ ইছামতি, করতোয়া, ফুলজোড় ও বড়াল নদীর পানি বেড়েই চলেছে। এতে নদীতীরবর্তী ও চরাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। গত মাসের ১৩ তারিখ থেকে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে থাকে। গত ২১ দিনে কাজিপুর, সিরাজগঞ্জ সদর সদর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজেলার কমপক্ষে ৪০টি ইউনিয়নের এক লাখেরও বেশী মানুষ পানি বন্দি হয়ে নানা দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। দীর্ঘ সময় ধরে বসতবাড়ীতে পানি উঠায় চরাঞ্চলের পানিবন্দি বন্যার্ত মানুষেরা নৌকায় ও ঘরের ভিতর মাচল করে বসবাস করায় জ্বালানির অভারে রান্না করা খাবার, শিশু খাদ্য, বিশুদ্ধ পানির সংকটে দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে তাদের জীবন। গো-খাদ্যের অভাবে গবাদি পশু নিয়ে দুশ্চিন্তায় বন্যার্তরা। পানিবাহিত নানা রোগে ও সাপ পোকামাকড়ের ভয়ে অতিষ্ট হয়ে উঠেছে বানবাসি মানুষদের জীবন।
সিরাজগঞ্জ জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুর রহিম জানান, জেলার সদর,কাজিপুর,বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজেলায় ১০০ মেট্রিক টন চাল ও ১ লাখ করে টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ৭৬ মেট্রিক টন চাল ও আড়াই লাখ টাকা মজুদ রাখা হয়েছে। বরাদ্দকৃদ চাল ও নগদ অর্থ বিতরণ করা হচ্ছে এবং কোন এলাকায় ত্রানের প্রয়োজন রয়েছে কিনা তার খোঁজখবর রাখা হচ্ছে।
বন্যায় তলিয়ে গেছে আখ,পাট, কাঁচা মরিচ, তিল, বাদাম, শাকসবজিসহ রোপন করা আমন খেত ও বীজতলা। দীর্ঘদিন পানিতে তলিয়ে থাকায় এসকল ফসল নষ্ট হয়ে গেছে।
সিরাজগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ আবু হানিফ জানান, গত কয়েক দিনে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নিমাঞ্চলের ৪ হাজার ৯৬০ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। এসব ফসলের মধ্যে রয়েছে রোপা আমন, বাদাম, পাট, সবজি, আখ, তিল, মরিচ, বীজতলা সহ বিভিন্ন ফসল। পানি বৃদ্ধির সাথে নদী ভাঙ্গনে দিশেহারা নদীতীরবর্তী মানুষেরা। কাজিপুর উপজেলার নাটুয়াপাড়া বাঁধে ধ্বস দেখা দেওয়ায় চরাঞ্চলের শহর হিসেবে পরিচিত নাটুয়াপাড়া বাজার ভাঙ্গণের মুখে পড়েছে। ইতোমধ্যে নাটুয়াপাড়া বাজার রক্ষায় নির্মিত বাঁধের মাটির অংশের ৭০ ফুটের মতো অংশ ধ্বসে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে, এতে আতংকে রয়েছে চরের মানুষেরা। বাঁধ মেরামতের চেষ্টা করছে স্থানীয়রা।
নাটুয়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান জানান, নাটুয়াপাড়া বাজারটি কাজিপুর উপজেলার সাত ইউনিয়নসহ পার্শ্ববর্তী জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী ও বগুড়া জেলার ধনুট ও সারিয়াকান্দি উপজেলার যমুনা অববাহিকা অধ্যুষিত চরাঞ্চলের মানুষদের প্রধান ব্যবসা বানিজ্য, জিনিসপত্র কেনা বেচার প্রধান কেন্দ্র। এই গুরুত্ব বিবেচনায় কাজিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড নাটুয়াপাড়া বাজার যমুনার ভাঙ্গন থেকে রক্ষা করার জন্য মাটির বাঁধটি নির্মান করে। গত বুধবার রাত থেকে বাঁধে ধ্বস দেখা দেয়। বাঁধটি সম্পৃর্ন ধ্বসে গেলে বাজার, ইউনিয়ন পরিষদ অফিস, কলেজসহ নানা স্থাপনা ও ১৫টি গ্রাম হুমকীর মুখে পড়বে।
কাজিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাহিদ হাসান সিদ্দিকী জানান, উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে ২০১৬ সালে নাটুয়াপাড়া মাটির বাঁধটি নির্মান করা হয়। পরে পানি উন্নয়ন বোর্ড বাঁধটি রক্ষনাবেক্ষণ ও মেরামত করে। বাঁধ ধ্বসে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে, পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানানো হয়েছে, মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ সহকারী প্রকৌশলী হায়দার আলী জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে নাটুয়াপাড়া বাঁধের ধ্বসের স্থানে দুই হাজার জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে।