সিরাজগঞ্জে যমুনার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত, বন্যা পরিস্থিতির অবনতি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:৪৭ পিএম, ২ সেপ্টেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ০৮:০১ পিএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
গত ২৪ ঘন্টায় সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধের হার্ড পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি ৮ সেন্টিমিটার বেড়ে বৃহস্পতিবার সকাল ৬ টার সময় বিপদসীমার ৫৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
এ ছাড়া একই সময় বাঘাবাড়ী পয়েন্টেও যমুনা নদীর পানি ৮ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৫৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় এবং কাজিপুর পয়েন্টে ৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পয়ে বিপদসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের ( পাউবোর ) গেজ রিডার আব্দুল লতিফ ও খন্দকার সুলতান মাহমুদ এই সকল তথ্য জানান।
সিরাজগঞ্জ জেলায় যমুনা নদীর সবগুলো পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থেকে বিপদসীমার অনেক উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার এবং অভ্যন্তরীণ নদ-নদী চলনবিল, ইছামতি, করতোয়া, ফুলজোড় ও বড়াল নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সিরাজগঞ্জ সদর, কাজিপুর, বেলকুচি, শাহজাদপুর ও চৌহালী উপজেলার নদীতীরবর্তী নিমাঞ্চল ও চরাঞ্চল সহ জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি আরো অবনতি হয়েছে,পানিবন্দি হয়ে মানবেতন জীবন যাপন করেছে লক্ষাধিক মানুষ।
দীর্ঘ অর্ধ মাসের অধিক সময় ধরে বসতবাড়ীতে পানি উঠায় চরাঞ্চলের পানিবন্দি বন্যার্ত মানুষেরা নৌকায় ও ঘরের ভিতর মাচল করে বসবাস করায় জ্বালানির অভাবে রান্না করা খাবার, শিশু খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও গো খাদ্যের সংকটে দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে তাদের জীবন। বন্যা কবলিত নদী তীরবর্তী নিমাঞ্চল ও চরাঞ্চলের মানুষদের ডুবে গেছে বসতবাড়ী ঘর, রাস্তাঘাট, খেতের ফসল। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। বাঁধ ও উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিয়ে হাঁস মুরগি সহ গবাদিপশু, গৃহস্থালী জিনিসপত্র, থাকা খাওয়া নিয়ে চরম ভোগান্তিতে বানভাসি মানুষেরা।
অনেকেই আবার দুরে নিরাপদে থাকার আশায় নিকট আত্নীয়-স্বজনদের বাড়িতে যেয়ে উঠেছেন। একই সঙ্গে নদী তীরবর্তী এলাকায় নদী ভাঙ্গনের আতংকে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে নদী পাড়ের মানুষেরা। ইতোমধ্যে নদী ভাঙ্গনে অনেক পরিবারের ঘরবাড়ি, বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে সর্বশান্ত হয়ে গেছে। একটানা বন্যার কারণে অনেক পরিবার খেতের ফসল ও গবাদিপশু সহ সহায় সম্বল হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
অন্যদিকে সরকারী ত্রাণ অপ্রতুল হওয়ায় অনেক স্থানেই বানভাসিরা ত্রান পাচ্ছে না। সিরাজগঞ্জ জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কমবর্কর্তা আব্দুর রহিম জানিয়েছেন, বন্যাকালীন দুর্যোগ মোকাবেলা করার জন্য সাড়ে পাঁচশ টন চাল ও নগদ আড়াই লাখ টাকা মজুদ রয়েছে। এ ছাড়াও উপজেলা গুলোতে ১২৫ টন চাল মজুদ রাখা হয়েছে এবং এর পাশাপাশি প্রতিটি উপজেলায় এক লাখ টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
বন্যার পানিতে আউশ ধান ও পাট এবং সবজি খেত তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকরা ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। গো চারণভূমি তলিয়ে যাওয়ায় গো খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। সিরাজগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ আবু হানিফ জানান, গত কয়েক দিন যাবৎ পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নদী তীরবর্তী নিমাঞ্চল ও চরাঞ্চলের চারহাজার ৩৬২ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। পানিতে তলিয়ে যাওয়া ফসলের মধ্যে রয়েছে রোপা আমন, বোনা আমন, আগাম সবজি, আখ, বীজতল ও বাদাম।