চট্টগ্রামে বৃষ্টি, জলাবদ্ধতা দুর্ভোগ এখন নিত্যসঙ্গী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:১৯ পিএম, ২৫ আগস্ট,
বুধবার,২০২১ | আপডেট: ০৩:৪২ এএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে জলাবদ্ধতা নিরসনে চারটি প্রকল্পের কাজ চলমান থাকলেও বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা এখন নিত্যসঙ্গী চট্টগ্রাম নগরবাসীর। তারই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার সকালের টানা বৃষ্টির কারণে হাটু থেকে কোমর পানি পর্যন্ত ডুবেছে বন্দর নগর চট্টগ্রামের অধিকাংশ নিচু এলাকা।
পানিতে ডুবুছে স্বয়ং মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর বাড়িও। জলাবদ্ধতার কারণে ভোগান্তিতে পড়েন অফিসগামী লোকজন। পানিতে আটকে থাকতে হয় শত শত যানবাহনকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। বাড়তি টাকায় গন্তব্যে যেতে হয় সড়কে বের হওয়া লোকজনকে।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ শেখ ফরিদ আহমদ বলেন, পতেঙ্গা অংশে বৃষ্টি কম হয়েছে তবে নগরের মূল অংশে বৃষ্টি বেশি হয়েছে। সেই হিসাবে চট্টগ্রাম নগরে মঙ্গলবার বেলা ১২টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ১১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে রেকর্ড করা হয়েছে। মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে এই ধারা আগামী দুই দিন অব্যাহত থাকবে। তবে কোনো সতর্কসংকেত নেই।
গতকাল মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত বৃষ্টির কারণে চট্টগ্রাম নগরের বহদ্দারহাট, ষোলকবহর, মুরাদপুর, ২ নম্বর গেট, প্রবর্ত্তক মোড়, চকবাজার, কাপাসগোলা, ডিসি রোড, ষোলশহর, জামালখান, বাকলিয়া, হালিশহর, আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় কোথায় হাঁটু, কোথাও কোমরপানি জমেছে। এ কারণে সকালে ভোগান্তিতে পড়তে হয় অফিসগামী মানুষের।
মো: ইব্রাহীম নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা বলেন, স্মরণকালের রেকর্ড পরিমাণ পানি জমেছে রাস্তায়। আমি তিন ঘণ্টা মুরাদপুর ফ্লাইওভারের কাছে আটকে থেকে জিইসি আসতে পেরেছি। পানি একদম ফ্লাইওভারের গোড়া পর্যন্ত উঠেছে। ফ্লাইওভারের নিচে পানিতে শত শত গাড়ি আটকে থাকায় অনেকে উপরে উঠলে ফ্লাইওভারেও যানজট তৈরী হয়। চট্টগ্রামবাসীর অভিশাপ থেকে কখনো মুক্তি মিলবে না।
ব্যাংক কর্মকর্তা দিল মোহাম্মদ বলেন, আন্দরকিল্লা থেকে অক্সজেনে ব্যাংকে যাওয়ার জন্য ঘর থেকে বের হয়ে দুই নম্বর গেটে এসে দেখি কোমর পানি। অতিরিক্ত গাড়ি ভাড়া দিয়ে ব্যাংকে আসি।
খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী ইলিয়াস বলেন, টানা বৃষ্টি কারনে দেওয়ানবাজার জয়নব কলোনি থেকে সকালে বাসা থেকে বের হতে পারিনি। পানি কমলে বাসা থেকে বের হয়ে খাতুনগঞ্জ এসে দেখি দোকানের ভেতর পানি ঢুকে পড়েছে। কোথায় যাবো বাসার নিচে পানি আবার দোকানের ভেতর হাঁটু সমান পানি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সিডিএর জলবদ্ধতা বিষয়ক প্রকল্প পরিকালক আহমেদ মাঈনউদ্দীন বলেন, আমি ঢাকা থেকে সকালে আসছি। সকালে এসে দেখি রাস্তায় হাটু ও কোমর পানি। পূর্ণিমার কারণে কর্ণফুলী নদীতে জোয়ার আসায় নগরের রাস্তায় পানি বেড়ে গেছে। আশা করি দুপুরের মধ্যে পানি নেমে যাবে। জলবদ্ধতা প্রকল্পের কাজ শেষ হলে এই দুর্ভোগ থাকবেনা।
চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে ১০ হাজার ৯২১ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪টি প্রকল্পের কাজ চলছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) দুটি, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন একটি এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। সিডিএর একটি প্রকল্প সরাসরি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রকৌশল বিভাগ। বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয়ে প্রকল্পের কাজ চললেও তার কোনো সুফল পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ জনপ্রতিনিধি, নগর পরিকল্পনাবিদদের।