হালদা পাড়ে পাউবোর ১৫৭ কোটি টাকার প্রকল্প নির্মাণের ১৫ দিনের মাথায় ধস
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:৪০ পিএম, ৭ আগস্ট,শনিবার,২০২১ | আপডেট: ০৩:০৯ পিএম, ১৯ নভেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
হালদা পাড়ে নির্মাণের ১৫ দিনের মাথায় ধসে গেছে বাঁধ। জেলার ফটিকছড়ি ও হাটহাজারীর হালদা ও ধুরং নদীর ভাঙন রক্ষায় তীর সংরক্ষণ, বাঁধ পুনরাকৃতিকরণসহ প্রায় ৫৫ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ কাজে এ ঘটনা ঘটেছে। প্রায় তিন বছর ধরে চলমান ১৫৭ কোটি টাকার প্রকল্পটিতে এর আগেও এ ধরণের ধসের ঘটনা ঘটেছে।
সরেজমিনে দেখতে গেলে হালদা নদীর নাথপাড়া সংলগ্ন খালের পাড় এলাকা বাসী বলেন ‘দুই আড়াই মাস আগে বাঁধটি নির্মাণ করা হয়। ১৫দিনও ঠিক ছিল না। ধসে গেছে।’
পাউবো সূত্রে জানা গেছে, খাগড়াছড়ির গভীর বনাঞ্চল থেকে বিভিন্ন পাহাড়ি ছড়ার মিলিত স্রোত হালদা নদী হয়ে ফটিকছড়ি ও হাটহাজারী উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন অতিক্রম করে কর্ণফুলীতে মিশেছে। পাহাড়ি খরস্রোতা হওয়ায় বর্ষাকালে হালদা আগ্রাসী রূপ নেয়। নদীর গতিপথে আঁকা-বাঁকা স্থানগুলো ভাঙনপ্রবণ। তাছাড়া বিগত বছরগুলোতে পার্বত্য জেলাগুলোর অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের ফলে সৃষ্ট পাহাড়ি ঢলের প্রভাবে ফটিকছড়ি ও হাটহাজারী উপজেলায় হালদা নদীর উভয় তীরের বেড়িবাঁধ উপচে পানি ঢুকে প্লাবিত হয় তৎসংলগ্ন এলাকা। আবার নামে খাল হলেও ধুরং নদী ফটিকছড়ি উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন হয়ে হালদা নদীতে মিলেছে।
হালদার মতো ধুরং ও বর্ষা মৌসুমে ভয়ঙ্কর রূপ নেয়। যে কারণে এ দুই উপজেলায় হালদা ও ধুরং খালের ভাঙন রোধে স্থায়ী প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। ২০১৮ সালের ২ অক্টোবর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ১৫৬ কোটি ৭৬ লাখ ৯০ হাজার টাকার “চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি ও হাটহাজারী উপজেলায় হালদা নদী ও ধুরং খালের তীর সংরক্ষণ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ” প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়। ৮টি প্যাকেজের মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হচ্ছে।
প্রকল্পের আওতায় হালদা নদী ও ধুরং খালে ৯ দশমিক ১৫০ কিলোমিটার তীর সংরক্ষণ, ৩৪ দশমিক ৬৩০ কিলোমিটার তীরের বাঁধ পুনরাকৃতিকরণ এবং ১১ দশমিক ৫৭০ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ফটিকছড়ি ও নাজিরহাট পৌরসভা ছাড়াও ফটিকছড়ির সমিতির হাট, রোসাংগিরি, সুয়াবিল, হারুয়ালছড়ি, সুন্দরপুর, পাইন্দং, ভুজপুর, নারায়ণহাট ও কাঞ্চননগর এবং হাটহাজারীর ফরহাদাবাদ ইউনিয়ন হালদা ও ধুরংয়ের ভাঙন থেকে রক্ষা পাবে এবং বন্যামুক্ত হবে। ইতোমধ্যে প্রায় ৮৩ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
সূত্রে জানা গেছে, মৎস্য প্রজনন মৌসুমে হালদা নদী দিয়ে বার্জ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকায় নির্ধারিত সময়ে বাঁধের কাজ করা সম্ভব হয়নি। যে কারণে পূর্ব ফরহাদাবাদসহ কয়েকটি অংশে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। পূর্ব ফরহাদাবাদ অংশের কাজটি করছেন রহমান ইঞ্জিনিয়ারিং নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানের কাজে গত বছররে আরেক অংশে একই কায়দায় ধসের ঘটনা ঘটে। ইতোমধ্যে ধস হওয়া ওই অংশটি পুনরায় করা হলেও নতুন করে পূর্ব ফরহাদাবাদ নাথপাড়া সংলগ্ন অংশে ধসের ঘটনা ঘটে।
গত ৪ আগস্ট সরেজমিনে দেখা গেছে, নতুন নির্মিত বাঁধটি দেবে নদীর গর্ভে তলিয়ে যাচ্ছে। নির্মিত বাঁধে লাগানো সিসি ব্লকগুলো গত নভেম্বর ডিসেম্বর মাসে বানানো। একইভাবে কাছের আরেকটি অংশেও ভেঙে বিলীন হয়ে গেছে নতুন নির্মিত বাঁধ।
৪ আগস্ট বুধবার দুপুর ১২টা। বাঁধের ধসে যাওয়া অংশের পাশে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন কৃষক মো. আলাউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘মাস কয়েক আগে বাঁধের কাজ হয়েছে। কাজ শেষের কয়েকদিনের মধ্যেই দেবে গেছে। বাঁধটি করার পরে উপরে সুন্দর ছিল। কিন্তু বাঁধের নীচের নতুন মাটিগুলো চাপে নাই। যে কারণে বৃষ্টির পর ধীরে ধীরে নতুন বাঁধটি খালে দেবে গেছে।’
পূর্ব ফরহাদাবাদ গ্রামের আরেক কৃষক মফিজুর রহমান বলেন একই কথা। তিনি বলেন, ‘পুরো বাঁধের কাজ প্রায় দুই বছর ধরে চলে আসছে। গত দুই তিনমাস আগে বাঁধটির কাজ করা হয়েছে। ব্লকগুলো দেওয়ার আগে বাঁধে দেওয়া নতুন মাটিগুলো চাপা দেওয়া হয়নি। যে কারণে নরম মাটিতে পানি ঢুকে নতুন নির্মাণ করা বাঁধটি ধসে গেছে।’
চট্টগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী (ডিভিশন-১) তয়ন কুমার ত্রিপুরা বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ডে নিম্নমানের কোনো কাজ এলাউ করা হয় না। পুরো কাজটি চলমান রয়েছে। আমরা এখনো ওই কাজের বিলও পরিশোধ করিনি।’