ভিজিএফ বিতরণ ও চেয়ারম্যানের অপসারণ দাবীতে রাজারহাটে মানববন্ধন
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:০১ এএম, ১ আগস্ট,রবিবার,২০২১ | আপডেট: ১১:৫০ পিএম, ৫ নভেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ কর্মকারের অপসারণ এবং ইদ পূর্ব ভিজিএফসহ অন্যান্য মালামাল বিতরণের দাবীতে মানবন্ধন করা হয়েছে।
আজ শনিবার (৩১ জুলাই) সকাল সাড়ে ১১টায় ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন রাজারহাট-তিস্তা সড়কে ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন করে ইউপি মেম্বার ও উপকারভোগীরা।
ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ কর্মকারের বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির ১৫টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এনে পরিষদের ৯জন মেম্বার গত ১৮জুলাই অনাস্থা প্রস্তাব ও অপসারণের জন্য রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন জানায়। আবেদনের পর বিভিন্ন উপকারভোগীরা তাদের বরাদ্দের উপকরণ না পেয়ে শনিবার সকালে মানববন্ধনে অংশ নেয়। তারা দ্রুত চেয়ারম্যানের অপসারণ ও নির্বাচিত উপকারভোগীদের মালামাল প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে দাবী জানায়।
অভিযোগে জানা যায়, বর্তমান চেয়ারম্যান ৬মাস যাবৎ ইউনিয়ন পরিষদের সাধারণ ও বিশেষ সভা আহবান করেন না। তিনি ট্যাক্স, রেট, জন্ম নিবন্ধন ও বিভিন্ন প্রাপ্তির প্রায় ১৫ থেকে ২০ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তার বিরুদ্ধে সরকারি গাছ কর্তনের অভিযোগে মামলা রয়েছে। ইদুল আজহা উপলক্ষে অসহায় দু:স্থ ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের নামে বরাদ্দকৃত ভিজিএফ চালের তালিকায় মৃত ব্যক্তি, ডাবল ব্যক্তিসহ জাল টিপ দিয়ে চাল আত্মসাৎ এবং সনাতন ধর্মাবলম্বিদের নামও তালিকায় অন্তভূর্ক্ত করেছেন।
এছাড়াও এলজিএসপি, কাবিটা, টিআর প্রকল্পে ওয়ার্ডসভা ও ইউপি সভা ছাড়াই দুর্নীতি করে একই প্রকেল্পে বার বার প্রকল্প নির্ধারণ করে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। তিনি ভিজিএফ এর কার্ড নিজের কাছে রেখে ইচ্ছেমত চাল বিতরণ করেন। কিছু কার্ডদারীকে তিনি চাল দেয়া বন্ধ করায় ভুক্তভোগীরা তার বিরুদ্ধে ঝাড়ু মিছিল বের করে। তিনি খোয়ারা ইজারা বরাদ্দের টাকা সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে বা কার্যবিবরণি না করেই নিজেই আত্মসাৎ করেন।
এছাড়াও বাড়িতে বসে সরকারি চিঠিপত্র লেনদেন করা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘর বরাদ্দে ভূমিহীনদের কাছে ৩০ হাজার টাকা করে উৎকোচ গ্রহন এবং দু:স্থ ও বিধবা মহিলোদের কাছ থেকে এলজিইডি কর্তৃক আরএমপি প্রকল্পে ১০ হাজার টাকা করে ঘুষ নেয়ার অভিযোগ করা হয়েছে। তিনি দুই প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন ও সম্মানী ভাতা উত্তোলন করছেন মর্মে অভিযোগ তোলা হয়েছে।
তিনি প্যানেল চেয়ারম্যান না করেই বিদেশ ভ্রমণ করেন। এছাড়াও বয়স্ক, প্রতিবন্ধী, মাতৃত্বকালিন ও বিধবা ভাতা প্রদানে তার ব্যক্তিগত লোক দিয়ে ২ থেকে আড়াই হাজার টাকা করে ঘুষ গ্রহন করেছেন। এমন বিস্তর অভিযোগ এনে ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান শ্রী রবীন্দ্রনাথ কর্মকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা ও অপসারণ প্রস্তাব স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন ও বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।
স্বাক্ষরকারী নির্বাচিত ইউনিয়ন সদস্যগণ হলেন, আফজাল হোসেন, সাদেকুর রহমান সাদেক, হারুন অর রশিদ, মহুবর রহমান, শহিদুল ইসলাম, মোর্শেদা বেগম, জাহাঙ্গীর আলম মঞ্জু, হোসনে আরা এবং আবু বক্কর সিদ্দিক।
অনাস্থা পত্র পাওয়ার কথা নিশ্চিত করে রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরে তাসনিম জানান, অভিযোগ খতিয়ে দেখতে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। এছাড়াও যারা মালামাল পাননি তাদের মালামাল বিতরণের জন্য উপজেলা প্রশাসন থেকে একজন প্রতিনিধিকে দায়িত্ব প্রধান করা হয়েছে। এ ব্যাপারে জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। প্রতিদিন আমাদের লোক ইউনিয়ন পরিষদে মাল বিতরণের জন্য অপেক্ষা করছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, শনিবার দুপুরে জেলা প্রশাসনে এ ধরণের একটি অভিযোগপত্র জমা দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ সাপেক্ষ স্থানীয় সরকার আইন ও বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।