টানা বৃষ্টিতে সাতক্ষীরার ৬০ ভাগ ঘের ও পুকুর ভেসে গেছে
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:০০ এএম, ৩০ জুলাই,শুক্রবার,২০২১ | আপডেট: ০৯:০৪ পিএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
টানা তিনদিন ধরে বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ায় সাতক্ষীরার জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। জেলার তিনটি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে অধিকাংশ মানুষের বাড়ির আঙ্গিনায় পানি থইথই করছে। একাকার হয়ে গেছে জেলার অন্তত ৬০ ভাগ মাছের ঘের ও পুকুর। তলিয়ে গেছে আমন ফসল, বীজতলা ও সবজি খেত। ভারী বৃষ্টিতে সাতক্ষীরা শহরের কয়েকটি এলাকা তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার মানুষ।
আজ বৃহস্পতিবার সাতক্ষীরার আবহাওয়া অফিসে দায়িত্বরত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী জানান, গত মঙ্গলবার জেলায় ৭০ মিলিমিটার, বুধবার ১৫ মিলিমিটার ও আজ বৃহস্পতিবার সকাল নয়টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৬৮ মিলিমিটার ভারী বৃষ্টি হয়েছে জেলায়।
যোগাযোগ করা হলে শ্যামনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউল হক জানান, উপজেলার ১৬ হাজার মাছের ঘেরের ৮০ ভাগ ঘের একাকার হয়ে গেছে। নিম্নাঞ্চলের মানুষের বাড়ির আঙিনায় পানি থইথই করছে। আমন ধান, বীজতলা ও সবজি খেত সব তলিয়ে গেছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রবণ এ উপজেলায় বৃষ্টির সঙ্গে ঝড়ো হাওয়া মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী গ্রামের আব্দুল হাই সরদার, আদম আলী গাজী, আমিনুল গাজী ও হালিম গাজী জানান, তাদেরসহ আশেপাশের সব বাড়ির আঙ্গিনায় পানিতে ঢুকে গেছে। বৃষ্টির পানিতে পুরো গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। নীলডুমুর গ্রামের রহমত আলী গাজী জানান, তার ২০ বিঘার চিংড়ি ঘের অন্য ঘেরের সঙ্গে একাকার হয়ে গেছে। এতে তার পাঁচ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। একই কথা জানান দাতিনাখালি গ্রামের আবুল খায়ের গাজী।
তিনি বলেন, আম্পান আর ইয়াসের পর ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য সমিতি আর ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ২০ বিঘা জমিতে চিংড়ি ঘের করেছিলেন। তিন দিনের অতিবৃষ্টিতে তার ঘের তলিয়ে মাছ সব ভেসে গেছে। মুন্সিগঞ্জ গ্রামের ধ্রুবজ্যোতি সরদার জানান, তার দুই বিঘা জমির আমন ধান তলিয়ে গেছে। আরেক কৃষক মৃণাল সরদার জানান, তার দশ কাঠা জমির সবজি নষ্ট হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাঈদ মেহেদি জানান, পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় তিন দিনের ভারী বৃষ্টিতে উপজেলার ৬০ ভাগ মানুষের বাড়ির আঙিনায় পানি ঢুকেছে। রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। উপজেলার সাড়ে ১৮ হাজার মাছের ঘেরের ৮০ ভাগ একাকার হয়ে গেছে। এছাড়া, ঝড়ো হাওয়ায় মথুরেশপুর ইউনিয়নের ২৫-৩০টি কাঁচা ও আধাপাকা ঘর পড়ে গেছে বলেও জানান তিনি। কালীগঞ্জ উপজেলার কৃষ্ণনগর গ্রামের সফিউল আলম জানান, তাদের বাড়ির আঙ্গিনায় পানি থইথই করছে বুধবার থেকে। তাদের মাছের ঘের তলিয়ে গেছে। আমন ধানের বীজতলাও ডুবে গেছে। সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আ ব ম মোস্তাকিম জানান, তার ইউনিয়নের ১১টি ইউনিয়ন জলমগ্ন হয়ে মাছের ঘের তলিয়ে গেছে। অধিকাংশ মানুষের বাড়ির আঙিনায় এক থেকে দুই ফুট পানি। কুল্যা গ্রামের রহমত আলী জানান, তার ৩২ বিঘার চিংড়ি ঘের তলিয়ে গেছে। তলিয়ে গেছে তার আমন ধানের বীজতলা। সাতক্ষীরা নাগরিক আন্দোলন মঞ্চের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সুভাষ সরকার জানান, পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় সাতক্ষীরা পৌরসভার বদ্দিপুর কলোনি, কামালনগর, মধুমল্লারডাঙ্গী, ইটেগাছা, বাঁকাল নিম্নাঞ্চলের পানি আটকে গেছে। এসব এলাকার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বলে জানান তিনি।
এদিকে, আগামীকাল সকাল ১১টা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত সাতক্ষীরা জেলায় বিদ্যুৎ নেই। কখন বিদ্যুৎ আসবে তা জানাতে পারেনি বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ। সাতক্ষীরার বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ ওজোপাডিকোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জিয়াউল হক জানান, প্রবল বৃষ্টির সঙ্গে ঝড়ো হাওয়া থাকায়, বিদ্যুৎ লাইনের ওপর গাছের ডাল ভেঙে পড়ায় লাইন বন্ধ হয়ে গেছে। বিদ্যুতের লাইনের কাজ চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত বলা যাবে না কখন বিদ্যুৎ আসবে।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি বিভাগের উপপরিচালক মো. নূরুল ইসলাম জানান, জেলায় ৫০০ হেক্টর আমন ধান, এক হাজার ১২০ হেক্টর বীজতলা ও ৩৫০ হেক্টর সবজি অতিবৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে। সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মশিয়ুর রহমান জানান, জেলায় ৬৩ হাজার হেক্টর জমিতে ৬৮ হাজার ছোটবড় মাছের ঘের আছে। এর মধ্যে শ্যামনগর, কালীগঞ্জ ও আশাশুনি উপজেলার ৭০-৮০ ভাগ মাছের ঘেরের বাঁধ উপচে পানিতে একাকার হয়ে গেছে। দেবহাটা, সাতক্ষীরা সদর, কলারোয়া ও তালা উপজেলার মাছের ঘেরের ৪০-৫০ ঘের পানিতে একাকার হয়ে গেছে। জেলার ৫০ ভাগ পুকুরও তলিয়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আরও বৃষ্টি হলে সব ঘেরই তলিয়ে যাবে। সাতক্ষীরা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুল বাসেত জানান, কালীগঞ্জ ও শ্যামনগর উপজেলায় অতিবৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ায় ক্ষতির খবর তারা জেনেছেন। উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তাদের ক্ষতির পরিমাণ হিসাব করে পাঠাতে বলা হয়েছে।
ইতিমধ্যে কালীগঞ্জ উপজেলায় জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।