চেয়ারম্যান মেম্বার বলে বয়স্ক ভাতার বয়স হয়নি, তাই ভিক্ষা করে সংসার চালাই- নরী শব্দকর
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:২৭ পিএম, ১৫ জুলাই,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ১২:৫৯ পিএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
নরী শব্দকর, শরীরের দিকে তাকালেই বয়সের ছাপ দেখা যায়। ষাট বছর পার করেছেন অনেক আগেই। বয়সের ভারে এখন লাঠি ভর দিয়েই তাঁকে হাঁটতে হয়। যেখানে স্বাভাবিক চলাচল কষ্টকর সেখানে লাঠি ভর দিয়ে গ্রামে হেটে হেটে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করছেন নরী শব্দকর।
একটি বয়স্ক ভাতার কার্ড পেতে লাঠি ভর দিয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যান ও মেম্বারের ধারে ধারে ঘুরেছেন কিন্তু ভাগ্যের লিখন জাতীয় পরিচয় পত্রে জন্ম তারিখের ভুলের জন্য নরী শব্দকরের ভাগ্যে জোটেনি বয়স্ক ভাতার কার্ড।
নরী শব্দকর মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী শব্দকর সম্প্রদায় লোক। তার বাড়ি সদর ইউনিয়নের উত্তর তিলকপুর গ্রামে। এ গ্রামের মৃত ধনাই শব্দকর ও মৃত সৈয়খ শব্দকরের সন্তান তিনি। ছোট কুঁড়ে ঘরে স্ত্রী, ছেলে, ছেলের বউ, নাতি, নাতনি সহ ৬ জনের সংসার।
তার চাচাতো ছোট ভাইয়ের বয়স ৭৪বছর। অথচ জাতীয় পরিচয়পত্রে জন্মসাল (১৯৬২) অনুযায়ী নরী শব্দকরের বর্তমান বয়স ৬০ বছর। বড় হয়েও জাতীয় পরিচয় পত্রে জন্ম তারিখ ভুলের কারনে ছোট ভাই থেকে তিনি এখন ১৪ বছরের ছোট।
স্থানীয় কয়েকজনের সাথে আলাপকালে জানা যায়, নরী শব্দকরের বয়স আরও বেশি হবে। ভোটার আইডি কার্ডে বয়স ভূল করেছে। তাঁর ছোট ভাই বয়স্ক ভাতা উপকারভোগী। কিন্তু তিনি বড় হয়েও এখনও ভাতার আওতায় আসেন নি। খুব কষ্টে তিনি দিনযাপন করছেন। কমলগঞ্জকে ভিক্ষুকমুক্ত উপজেলা ঘোষনা করা হলেও সংসার চালানোর দায়ে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভিক্ষা করেন তিনি। আর ভিক্ষা করে যা পান তাই দিয়ে তাঁর সংসার চলে। নরী শব্দকরের দাবি, তাঁর বয়স ৮৫ বছর। এই বৃদ্ধ বয়সে তাঁর আক্ষেপ, এখনো তিনি বয়স্ক ভাতার কার্ড পাননি।
আলাপকালে অশ্রুসিক্ত নয়নে নরী শব্দকর বলেন, তিনি কয়েকবার স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যের কাছে বয়স্ক ভাতার জন্য গিয়েছেন। ইউপি সদস্যের কাছে নিজের ভোটার আইডি কার্ডের কপি ও ছবিও দিয়েছেন একাধিকবার। তাঁকে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেননি কেউই। বয়স হয়নি বলে ফিরিয়ে দিয়েছেন বার বার। এত ঘুরেও ভাতার কার্ড না পেয়ে শেষ বয়সে তিনি হতাশ। তাই এখন আর তাদের (ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বার) কাছে যান না, পেটের জ্বালায় বাধ্য হয়ে গ্রামে হাঁটতে হাঁটতে ভিক্ষা করে যা চাল, টাকা যা পান তা দিয়ে সংসার চালান।
নরী শব্দকরের ভিক্ষাবৃত্তি ও ছেলে দিনমজুর নিপেন্দ্র শব্দকরের আয় দিয়ে কোনরকম দুঃখে কষ্টে সংসার চলতো। কিন্তু এখন করোনা ভাইরাসের জন্য কঠোর লকডাউন থাকায় ছেলে নিয়মিত কাজকর্ম করতে পারে না, বিধায় ভিক্ষাবৃত্তির আয়ের উপর ৬ জনের পেটের ক্ষুধা মেটাতে হয়। তিনি সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে ভাতার কার্ডের দাবি জানান।
এ বিষয়ে আলাপ করলে কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য রুপেন্দ্র সিংহ বলেন, নরী শব্দকরের জাতীয় পরিচয়পত্রে বয়সে ভূল থাকায় বয়স্ক ভাতার জন্য তাঁর নাম দেওয়া যায় নি। এখানে আমাদের কিছু করার নেই। তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে ইউনিয়নের ভিক্ষাবৃত্তি পেশার মানুষদের একটি তালিকা দেওয়া হয়েছে। তালিকা অনুমোধন হয়ে আসলে হয়ত তাঁর ভাতার ব্যবস্থা করে দেওয়া যাবে।
এ বিষয়ে কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল হান্নান জানান, নরী শব্দকরের জাতীয় পরিচয়পত্রে বয়সে সমস্যা ছিল। এ জন্য তাঁর ভাতার কার্ডে নাম দেওয়া যায় নি।