৪২ বছর ধরে অবহেলায় শায়েস্তাগঞ্জের নুরপুর খাদ্য গুদাম
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:১৩ পিএম, ১২ জুলাই,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ০৫:১৬ পিএম, ১৭ নভেম্বর,রবিবার,২০২৪
ধুসর শেওলা জমে আছে বিল্ডিং এর চারপাশে। কোথাও লজ্জাবতি গাছ আবার কোথাও বা জন্মেছে সাইকাস। সাইকাস গাছে ‘শীতনিদ্রা’ কাটিয়ে দিচ্ছে বছরের পর বছর কোনো কোনো কুনোব্যাঙ। দেয়ালে কেউ বা লাগিয়েছেন মেসি-রোনালদোদের স্টিকার, আবার কেউ লিখেছেন কাউকে উদ্দেশ্য করে চিরকুট।
দীর্ঘ ৪২ বছর ধরে অবহেলায় পড়ে থাকা শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার নুরপুর ইউনিয়নের বর্তমান পরিষদের পাশেই অবহেলায় পড়ে থাকা খাদ্য গুদামের চিত্র এটি।
জানা যায়, ১৯৭৯ সালে তৎকালীন ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সৈয়দ গাজিউর রহমানের আমলে নির্মিত হয়েছিল বিশালাকৃতির একটি খাদ্য গুদাম। প্রায় ৭ শতক জায়গার উপরে গড়ে উঠেছিল খাদ্য গুদামটি। নির্মাণের পর কয়েকবছর চালু ছিল এই গুদাম। পরে অযাচিত কারণে এটি বন্ধ হয়ে যায়। অবহেলায় পড়ে থাকতে থাকতে আশেপাশের কেউ কেউ এই গুদামকে সাটারিংয়ের ঘর, কখনো বা ধানের বীজ ঘর হিসেবে ব্যবহার করে আসছেন। এরই মাঝে অরক্ষিত এই ভবনটি রাতের বেলা হয়ে ওঠে ‘ভূতের ঘর’। অন্যদিকে দীর্ঘদিন থেকে অরক্ষিত পড়ে থাকায় খাদ্যগুদামের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ।
কথা বলে জানা গেছে, এই এলাকার মানুষদেরকে সরকারিভাবে ধান চাল বিক্রি করতে হলে যেতে হয় সুদূর শায়েস্তাগঞ্জ খাদ্যগুদামে। দূরত্ব বেশি হওয়ায় এবং যাতায়াত খরচ বেশি লাগায় অনেকেই শায়েস্তাগঞ্জ খাদ্যগুদামে যেতে বিমুখ হয়ে পড়েন। অথচ নুরপুর ইউনিয়নের এই খাদ্যগুদামটি দেখভাল করার জন্য বা চালু করার জন্য নেই কোনো উদ্যোগ।
সুরাবই গ্রামের প্রবীণ মুরব্বি মো. ইকবাল মিয়া বলেন, আমরা ছোট বেলা দেখেছিলাম এই গুদামটি তৈরি করতে। কিন্তু ঠিক কি কারণে এটি বন্ধ রয়েছে আমার জানা নেই। তবে খাস জায়গায় নির্মিত এই গুদামটি চালু করা হলে অনেক মানুষই উপকৃত হত।
সুরাবই গ্রামের মুরব্বি সৈয়দ জিয়াউর রহমান বিল্পব বলেন, তখনকার সময়ে নির্মাণ করা এই খাদ্যগুদামটি এখন ভূতুড়ে ঘর হিসেবেই পড়ে আছে। বর্তমানে এরকম একটি গুদাম নির্মাণ করতে হলে কয়েক কোটি টাকার প্রয়োজন হবে। আমার মনে হয়, এই বিল্ডিংটিকে কিছুটা মেরামত করলেই পুনরায় চালু করা যেতে পারে। এতে করে এলাকার হাজারো মানুষ এর সেবা নিতে পারবে।
এ ব্যাপারে নুরপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট মুরব্বি সৈয়দ গাজিউর রহমান জানান, সিলেট জেলা কাউন্সিলের অধীনে এই খাদ্য গোডাউনটি নির্মাণ করা হয়েছিল। কয়েকবছর এটি চালুও ছিল। পরে ভবনের ত্রুটি থাকায় আর ব্যবহার করা হয়নি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ চাইলে পুনঃসংস্কার করে এটি চালু করা যেতে পারে।
এ বিষয়ে হবিগঞ্জ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দিলদার মাহমুদ বলেন, ‘এই ভবনটি আমাদের অধীনস্থ নয়। আপনি বিএডিসিতে যোগাযোগ করতে পারেন।’
এ বিষয়ে হবিগঞ্জ বিএডিসির সহকারী পরিচালক (বীজ বিপনন) আনোয়ার হোসেন ভুইয়া বলেন, ‘আমার জানামতে এটি আমাদের আওতাভুক্ত নয়। তারপরও আমি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব।’