মুরাদনগরে ভেঙে পড়ছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:৫৯ পিএম, ১১ জুলাই,রবিবার,২০২১ | আপডেট: ০৭:৪৯ পিএম, ১৬ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪
নির্মাণ কাজ শেষ না হতেই কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায় মুজিব বর্ষ উপলক্ষে আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধীনে নির্মিত ৯টি ঘরের বারান্দার অংশ ভেঙ্গে পড়েছে। তবে, ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে আরও কয়েকটি ঘর। এ অবস্থায় কাজের গুনগত মান নিয়ে স্থানীয়দের অভিযোগ রয়েছে। আর যারা স্বপ্নের ঘর পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন, তাদের মধ্যে ভীতি সঞ্চার হয়েছে।
অভিযোগ ওঠেছে, উপজেলার চাপিতলা এলাকায় গত সপ্তাহে যে ৯টি ঘর ধসে পড়েছে। সেখানে ৩০টি আধাপাঁকা ঘর তৈরী করা হয়েছে। সহসাই আরো ১০টি ঘর নির্মাণ করা হবে। তড়িঘরি করে ড্রেজার দিয়ে জমির মাঝ অংশটি ভরাট করে। আশ-পাশ থেকে চারদিক মাটি ভরাট করা হয়েছে। যার ফলে ড্রেজারের মাটির সাথে জমির চারদিকের মাটির সমন্বয় ঘটেনি, তাই মাটি ধসে পড়েছে।
তাছাড়া নিম্নমানের ইট, রড ও নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে বলেও স্থানীয়দের অভিযোগ। একই সঙ্গে পরিমানে কম সিমেন্ট ও বালুর পরিমান বেশী থাকায় পলেস্তরা খসে পড়ছে। ইটের গাঁথুনি কম থাকায় দেয়ালে ফাটল ধরেছে। যে কোনো সময় আবারো বড় ধরণের দুর্ঘটনার আশংকা রয়েছে।
জানা যায়, মুজিববর্ষ উপলক্ষে মুরাদনগর উপজেলায় গৃহহীন ও ভূমিহীনদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহারের প্রথম পর্যায়ে ৫৬টি ঘর দেয়া হয়। এছাড়া উপজেলায় আশ্রয়ণ-২ এর দ্বিতীয় পর্যায়ে ২৫০টি ঘরের নির্মাণের কাজ চলছে। প্রকল্পের ঘরগুলো সরকারি খাস জমির উপর তৈরি করা হচ্ছে। প্রতিটি ঘরে আছে দুটি কামরা, রান্নাঘর, বারান্দা ও টয়লেট।
সেমিপাকা এই ঘরগুলোর প্রতিটি তৈরি করতে প্রথম পর্যায়ে খরচ হয়েছে এক লাখ ৭১ হাজার টাকা। দ্বিতীয় পর্যায়ে খরচ হয়েছে এক লাখ ৯০ হাজার টাকা। প্রতিটি পরিবারকে দুই শতাংশ জমিসহ এই ঘর দেওয়া হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক স্থানীয় ব্যক্তি বলেন, টাকা বাঁচাতে তড়িঘড়ি করে ড্রেজার দিয়ে মাটি ফেলা হয়েছে। তাই ড্রেজারের মাটি ও জমির সাইট থেকে যে মাটি তুলেছে তা চেপে বসার আগেই ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে আলগা মাটি সরে যাওয়ায় ঘরগুলোর এই হাল হয়েছে।
এ দিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাটি ভরাটের কাজে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয়রা। মাত্র ৮০ শতক জায়গা ভরাট করতে ১৯/২০ লাখ টাকা কিভাবে খরচ হয় তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। প্রকল্পের স্থানে মাটি ভরাট ও মাটি রক্ষার গাইট ওয়ালটি সময় মতো হলে এ ঘটনা ঘটতো না বলে তারা দাবি করেন।
চাপিতলা ইউপি পরিষদের চেয়ারম্যান কাইয়ুম ভুইয়া বলেন, ড্রেজারের বালু দিয়ে জমি ভরাট করে তড়িঘড়ি করে ঘর নির্মাণের কাজ করায় কয়েকটি ঘরের আংশিক ধসে পড়েছে। আগামী ৩/৪ দিনের মধ্যে ধসে পড়া ঘরের কাজ শেষ হবে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আব্দুল হাই বলেন, ঘর ধসে পড়েনি। বর্ষণে আংশিক ক্ষতি হয়েছে। মেরামতের কাজ শুরু করেছি, কয়েক দিনের মধ্যে শেষ হবে।
মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অভিষেক দাশ বলেন, আমরা এখনো ঘরগুলো সুবিধা ভোগিদের বুঝিয়ে দেই নাই। মাটি ধসে পড়ার সাথে সাথেই আমরা নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিয়েছি। ঘর বুঝিয়ে দেওয়ার আগে যত বার সংস্কার করা লাগে আমরা কবর।