সাতক্ষীরায় অক্সিজেনসহ ছেলেকে আটকে রাখলেন পুলিশ, মুমূর্ষু বাবার মৃত্যু
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:৪১ পিএম, ৯ জুলাই,শুক্রবার,২০২১ | আপডেট: ০৯:৩৮ পিএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
করোনার উপসর্গ নিয়ে বাড়িতে তীব্র শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন বৃদ্ধ বাবা। এ কষ্ট সইতে না পেরে অক্সিজেন সিলিন্ডার আনতে ছুটে গেলেন ছেলে। একটা অক্সিজেন সিলিন্ডারও পেয়ে গেলেন। খুশি মনে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে দ্রুতগতিতে মোটরসাইকেল চালিয়ে ফিরছিলেন বাড়ি। কিন্তু পথিমধ্যে তাকে আটক করে পুলিশ। মোটরসাইকেলের কাগজপত্র দেখার নামে ঘণ্টা দুয়েক আটকে রাখার পর ছেড়ে দেওয়া হয়। ততক্ষণে যা হওয়ার তাই হলো। বাড়িতে ফিরে ছেলে দেখলেন অক্সিজেনের অভাবে মারা গেছেন বাবা।
গতকাল বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) মর্মান্তিক এ ঘটনাটি সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বৈচনা গ্রামে ঘটেছে। করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত ওই বৃদ্ধের নাম মো. রজব আলী মোড়ল (৬৫)। তিনি সদর উপজেলার বৈচনা গ্রামের বাসিন্দা।
বৃদ্ধের ছেলে ওলিউল ইসলাম জানান, বাড়িতে চিকিৎসাধীন অসুস্থ বাবার জন্য জরুরি অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়। তিনি সাতক্ষীরা শহরের পলাশপোল এলাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আল ফেরদৌস আলফার কাছ থেকে একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে বাড়িতে ফিরছিলেন। পথিমধ্যে ইটাগাছা হাটের মোড়ে পৌঁছালে তাকে আটক করেন ইটাগাছা ফাঁড়ির এএসআই সুভাষ চন্দ্র। মোটরসাইকেলের কাগজপত্র কাছে না থাকায় সেখানে ২ ঘণ্টা আটকে রাখা হয়। অনেক অনুরোধের পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর বাড়িতে গিয়ে দেখেন অক্সিজেনের অভাবে তার বাবা মারা গেছেন।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি আরও বলেন, যদি সময় মতো অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে বাড়িতে ফিরতে পারতাম, তাহলে হয়তো বাবাকে বাঁচানো যেত। আমি এ অমানবিক ঘটনার বিচার চাই।
এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশ সুপারের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) সুভাষ চন্দ্র সরদারকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ ঘটনায় শুক্রবার তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান, পিপিএম (বার)।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইটাগাছা পুলিশ ফাঁড়ির একাধিক পুলিশ সদস্য জানান, সুভাষের কারণে পুলিশের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এলাকার যত জমির ঝামেলা আছে সেগুলোর মধ্যে সে মাথা দেয়। অনেকে তাকে ল্যান্ড সুভাষ নামে চেনেন।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ইটাগাছা পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই সুভাষ চন্দ্র বলেন, বেপরোয়া গতিতে আসছিল মোটরসাইকেলটি। কাগজপত্রও ছিল না। পরে ঘটনা শুনে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। মাত্র ২/৩ মিনিট মোটরসাইকেলটি থামিয়ে রাখা হয়েছিল।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেলোয়ার হুসেন জানান, বিষয়টি শুনেছি। তবে এ সম্পর্কে আরও খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে।