করোনায় কুষ্টিয়ার প্রায় ১৮ হাজার খামারির সিংহভাগ পশুই অবিক্রিত থেকে যাওয়ার আশংকা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০৭ পিএম, ৮ জুলাই,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ০৭:০৮ এএম, ১৯ নভেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
ঈদের সময় যত ঘনিয়ে আসছে কোরবানীর পশু বিক্রি নিয়ে কুষ্টিয়া জেলার খামারিদের মধ্যে দু:শ্চিন্তা ততোই বাড়ছে। কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে প্রতি বছরের মত দেশের বিভিন্ন হাটে বিক্রির জন্য এবার কুষ্টিয়া জেলায় দেড় লাখেরও বেশি গরু-ছাগল প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রাকৃতিক খাবার খাইয়ে গরু মোটাতাজাকরণ এবং ব্লাক বেঙ্গল গোট'র কারণে সারা দেশেই কুষ্টিয়া অঞ্চলের পশুর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
অন্যান্য বছর ঈদের এক-দেড় মাস বাকি থাকতেই দেশের দূর-দূরান্ত থেকে ব্যাপারিরা পছন্দ অনুযায়ি গরু-ছাগল ক্রয়ের জন্য কুষ্টিয়া জেলায় ভিড় করে থাকেন। কিন্তু করোনা মহামারীর কারণে এবারের চিত্র একেবারেই ভিন্ন। কোরবানীর ঈদের আর মাস খানেকও বাকি নেই। কিন্তু করোনা মহামারীর কারণে এখনও ব্যাপারিদের পা পড়েনি এ জেলায়। জেলা জুড়ে চলছে কঠোর লকডাউন। জেলার সব পশু হাটও বন্ধ। কবে লকডাউন উন্মুক্ত হবে সেটাও নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না।
এ অবস্থায় কোরবানীর ঈদের জন্য প্রস্তুতকৃত বিপুল সংখ্যক পশু নিয়ে চরম দু:শ্চিন্তায় ভুগছেন এখানকার প্রায় ১৮ হাজার খামারি। এছাড়াও গোদের উপর বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে করোনার কারণে গেল কোরবানীর ঈদের প্রায় ২০-২৫ ভাগ অবিক্রিত পশু। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনার কারণে এবারও যদি পশু বিক্রি করতে না পারেন তাহলে এ অঞ্চলের হাজার-হাজার খামারিরা একেবারেই পথে বসে যাবেন। সংশ্লিষ্টদের ধারণা করোনার কারণে শেষ পর্যন্ত পশু হাট চালু না হলে এ বছরও অর্ধেকেরও বেশি পশু অবিক্রিত থেকে যাবে।
কুষ্টিয়া জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ সিদ্দিকুর রহমান জানান, এ বছর কোরবানীর ঈদকে টার্গেট করে জেলায় প্রায় ১ লক্ষ ৫১ হাজার গরু ছাগল প্রস্তুত করা হয়েছে। এর মধ্যে গরু ৯০ হাজার। আর ছাগল ৬১ হাজার। গত বছরের তুলনায় এ বছর পশুর সংখ্যা একটু বেশি। গেল বছর এ সংখ্যা ছিল ১ লক্ষ ৪৮ হাজার। কোন প্রকার মেডিসিন ছাড়াই কৃত্রিম উপায়ে গরু মোটাতাজা করায় দেশব্যাপী এ অঞ্চলের গরুর চাহিদা সবচেয়ে বেশি। একই ভাবে দেশের বিখ্যাত ব্লাক বেঙ্গল গোট একমাত্র এ অঞ্চলেই পাওয়া যাওয়ায় গরুর পাশাপাশি ছাগলেরও ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। চাহিদার বিষয়টি মাথায় রেখে জেলার প্রায় ১৭ হাজার ৭৯৩ জন খামারির পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই গরু-ছাগল পালন করা হয়ে থাকে।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ঝাউদিয়া ইউনিয়নের হাতিয়া গ্রামের মৃত আরজ আলি বিশ্বাসের ছেলে আমিরুল কোরবানীর ঈদকে টার্গেট করে কয়েকটি গরু প্রস্তুত করেছেন। এর মধ্যে একটি গরু বিশাল আকৃতির। গায়ের রং কালো হওয়ায় ভালোবেসে গরুটির নাম রেখেছেন ব্লাক কাউ। দুই বছর আগে গরুটি কেনেন আমিরুল। কোন রকম মেডিসিন বা ক্ষতিকর কিছু ছাড়াই শুধু গমের ছাল ও বিচালি খাইয়ে গরুটিকে মোটাতাজা করেছেন। উদ্দেশ্য কোরবানির ঈদে ভালো দামে গরুটি বিক্রি করার।
গত কোরবানীর ঈদে সঠিক দাম না পাওয়ায় গরুটি তিনি বিক্রি না করে এবছর বিক্রির জন্য রেখে দিয়েছেন। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে শেষ পর্যন্ত কাঙ্খিত দামে গরুটি বিক্রি করতে পারবেন কিনা এ নিয়ে সব সময় দু:শ্চিন্তা কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে আমিরুলকে। আমিরুলের মত কোরবানীর পশু বিক্রি নিয়ে দু:শ্চিন্তায় ভুগছেন খাজানাগর এলাকার খামারি ওমর ফারুক, হাটশ হরিপুর ইউনিয়নের জাকিরুল ইসলামসহ এ অঞ্চলের হাজারো খামারি।
কুষ্টিয়া জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ সিদ্দিকুর রহমান বলেন, সার্বিক অবস্থা ভালোর দিকে যাচ্ছে না। করোনা মহামারীর কারণে লকডাউনে জেলার ১৫ টি হাটের সব কটি বন্ধ। জেলায় এবার কোরবানীর জন্য প্রায় ১ লাখ গরুকে মোটাতাজা করা হয়েছে। জেলার চাহিদা পুরণ করে প্রায় ৭০ শতাংশ গরু ঢাকা-চট্রগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন হাটে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু করোনার কারণে জীবন-জীবিকা এখন প্যারালাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। পশু বিক্রি করতে না পেরে জেলার খামারিরা এখন কাঁদছেন। সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে এই মুহূর্তে পশু হাট খুলে দেয়া না হলে জেলার খামারিদের পথে বসা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না। পশু হাট বন্ধ থাকায় জেলা প্রাণী সম্পদ অফিসের পক্ষ থেকে খামারিদের প্রশিক্ষণ প্রদান করে অনলাইনে পশু বিক্রি করার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। জেলায় ইতোমধ্যেই অনলাইনে পশু বিক্রি শুরু হলেও তা খুবই অপ্রতুল বলে জানা গেছে।