ফরিদপুরে লকডাউনে চরম দুর্ভোগ, আরো কড়াকড়ির নির্দেশ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:৪৫ এএম, ২২ জুন,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ১১:১৯ এএম, ১৮ নভেম্বর,সোমবার,২০২৪
ফরিদপুরে ক্রমেই বাড়তে থাকা করােনা পরিস্থিতির সংক্রমন প্রতিরােধে আজ সোমবার থেকে সাতদিনের লকডাউন শুরু হয়েছে। জেলা সদরের ফরিদপুর পৌরসভা এলাকা ছাড়াও বোয়ালমারী ও ভাঙ্গা পৌর এলাকায় এ লকডাউন চলছে। প্রথমদিন দোকান খোলা রাখায় ফরিদপুর সদরে দু'জন দোকানীকে দুই হাজার টাকা জরিমানা ও একটি আবাসিক হোটেল মালিককে দশ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। চলমান লকডাউনে সবচেয়ে দুর্ভােগ পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ যারা দিন এনে দিন খেয়ে জীবনধারণ করেন। বিশেষ করে রিকশা ও অটোচালকেরা সহ সাধারণ দিনমুজরেরা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। এদের অনেকেই খাদ্য ও অর্থ সঙ্কটে ঝুঁকি নিয়েও বের হচ্ছেন।
লকডাউনেও খোলা রয়েছে বিভিন্ন সরকারী অফিস ও পৌরসভার দপ্তর। ফরিদপুর পৌরসভায় হােল্ডিং ট্যাক্স শুনানী হতে দেখা গেছে। তবে কর্তৃপক্ষ বলছেন, তারা সীমিত পরিসরে এই শুনানী করছেন। সরকারী অফিসের পাবলিক ফাংশন বন্ধ থাকলেও অফিস খোলা রয়েছে।
অন্যদিকে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী রবিবার হতে আদালতের কার্যক্রম পূর্ণদমে চালু হওয়ার একদিন পরই লকডাউনের কারণে আবার তা বন্ধ হয়ে গেছে। সোমবার হতে ফরিদপুরে আদালত চলছে ভার্চুয়ালী।
সরজমিনে দেখা গেছে, লকডাউনের প্রথম দিনেও অনেক মানুষ প্রয়োজনে ঘরের বাইরে বেরিয়েছেন। তবে যান চলাচল বন্ধ ও দোকানপাট খোলা ছিলোনা। লকডাউন কার্যকর করতে ব্যাপক তৎপরতা চালানো হচ্ছে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগের পক্ষ হতে। বিভিন স্থানের দোকানপাট এমনকি হাসপাতালের আশেপাশে ছাড়া অন্যান্য স্থানের ওষুধের দোকানও বন্ধ রয়েছে। হাজি শরিয়তুল্লাহ বাজারে সকালে কিছু কাঁচা বাজারের দোকান ছাড়া চালের আড়তও বন্ধ রয়েছে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে মোড়ে পুলিশ মোতায়ন রয়েছে। যেসব রিকশা ও আটাচালক নির্দশনা অমান্য করে বের হচ্ছেন তাদের রিকশার গদি ও চাবি নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ।
শহরের গোয়ালচামট লাক্সারি হােটেলের সামনে দেখা গেলো এক পা দিয়ে রিকশা চালান এমন একজন পঙ্গু রিকশা চালকরর গদি কেড়ে নেয়ার পর তাকে অনুনয় বিনয় করতে। পরে অবশ্য অন্যদের অনুরাধে তাঁর রিকশার গদি ফিরিয়ে দিয়ে তাকে বাড়ি ফিরে যেতে নির্দেশ দেয়া হয়।
কর্তব্যরত টিআই তুহিন বলেন, উপরের নির্দেশ রয়েছে। আমাদের কিছু করার নেই।
শহরের সরকারী ইয়াছিন কলেজের একজন ছাত্রী বলেন, সোমবারই ছিল তাঁর কলেজের অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেওয়ার দিন, তিনি একটি রিকশায় চড়ে কলেজে যাওয়ার সময় জনতা ব্যাংকের মোড় হতে তাঁর রিকশাটি থামিয়ে গদি নিয়ে যায় পুলিশ। এ ছাড়া অধিকাংশ ছাত্র-ছাত্রীদের পায় হেটেই কলেজে তাদের অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিয়েছে বলে জানা যায়।
এব্যাপারে ফরিদপুরের পুলিশ সুপার আলিমুজ্জামান বলেন, বিদ্যমান করােনা পরিস্থিতির অবনতির প্রেক্ষাপটে লকডাউন করা হয়েছে। আমাদের নিজেদের স্বার্থেই এই লকডাউন মেনে নিতে হবে। সকলকেই এব্যাপারে সচেতন হতে হবে। সবাই যদি আগামী সাতদিন ভালভাবে এই লকডাউন কার্যকর করি তবে পরিস্থিতির উন্নতি হলে আবার স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবো।
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, কেবিনেট ডিভিশনের সিদ্ধান্তে দেশের আরো কয়েকটি জেলায় সর্বাত্মক লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আমরা ফরিদপুর একটু মেজর জায়গায় আছি। এজন্য কিছু কষ্ট হলেও লকডাউন মেনে নিতে হবে। ফরিদপুরের পুলিশ সুপারকে বলেছি আরো কড়াকড়ি করতে। এসময় কর্মহীন হয়ে পড়া দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে মানবিক সহায়তা প্রদানের বিষয়টি আগের মতোই দেখা হবে বলেও তিনি জানান।
এদিকে, লকডাউনকে কেন্দ্র করে যাতে কোন প্রকার অপ্রীতিকর বা অনাকাঙ্খিত ঘটনা না ঘটে সেজন্য সকলকে সচেতন থাকার অনুরােধ জানানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ইতিপূর্বে গত ৫ এপ্রিল জেলার সালথা উপজেলার ফুকরা বাজারে লকডাউন কার্যকরি সংক্রান্ত এক অভিযানকে কেন্দ্র করে তুলকালাম কান্ড ঘটে গেছে। এতে সরকারী অফিস পাড়া ভস্মিভূত হওয়ায় কয়েক কোটি টাকার সরকারী সম্পদ বিনষ্ট হয়েছে। ঘটনার জের ধরে দায়েরকৃত মামলায় অনেকে জেল খাটছেন। রিমান্ডে মারা গেছেন একজন। অনেকে গ্রেফতার আতঙ্কে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। পুরুষ শূন্য গ্রামর ক্ষেতের ফসল বিনষ্ট হচ্ছে পরিচর্যার অভাবে।