ঝিনাইদহের শৈলকুপায় শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে মাদ্রাসা বন্ধের হুমকির অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:১০ এএম, ৬ জুন,রবিবার,২০২১ | আপডেট: ০৫:২৯ পিএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
ঝিনাইদহের শৈলকুপায় মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শামীম আহম্মেদস খানের বিরুদ্ধে এবার শিক্ষকদের নিরাপত্তাহীন করার অভিযোগ উঠেছে। জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে ৭ শিক্ষকের লিখিত অভিযোগে তোলপাড় শুরু হয়েছে পুরো শিক্ষা অফিসপাড়ায়। সম্প্রতি মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের নানা অনিয়ম-দূর্নীতির খবর প্রকাশের পর থেকেই অভিযোগকারীদের উপর চলছে বিভিন্ন হুমকি-ধামকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন।
লিখিত অভিযোগে জানা যায়, পুরাতন বাখরবা স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক মুমিনুর রহমানসহ ৫ শিক্ষক গত ১০ মে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও জেলা প্রশাসক ঝিনাইদহ ছাড়াও সরকারের বেশকিছু দপ্তরে অনিয়ম দূর্নীতির অভিযোগ করেন। শিক্ষা অফিসার শামীম আহম্মেদ খানের বিরুদ্ধে লাগামহীন অনিয়ম দূর্ণীতির খবরটি বিভিন্ন আঞ্চলিক, অনলাইন এবং জাতীয় দৈনিকে পত্রিকায় ফলাও করে প্রকাশ পায়। এ নিয়ে মুহুর্তের মধ্যে শিক্ষা অফিসপাড়াসহ শৈলকুপা জুড়ে আলোচনার ঝড় ছড়িয়ে পরে। পরবর্তিতে শিক্ষা অফিসার তাঁর হিসাব রক্ষক নেছার উদ্দিনের মাধ্যমে শিক্ষকদের অভিযোগ প্রত্যাহারের জন্য হুমকি ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছে বলে আবারও লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বিভিন্ন দপ্তরে। ২ জুন তারিখে শিক্ষক মুমিনুর রহমান, সবুজ হোসেন, আবু তৌহিদ, কামরুন্নানাহার, সুমি খাতুন, মিজানুর রহমান ও হাফিজা খাতুন অভিযোগে জানান, তাদেরকে বলা হয়েছে 'সরকারি প্রনোদনতাতো পাবেনিনা বরং মাদ্রাসাও বন্ধ হয়ে যাবে যদি অভিযোগ প্রত্যাহার না করেন' 'এমনকি অভিযোগ কিভাবে প্রত্যাহার করাতে হয় তাহা আমার জানা আছে' সে কারনেই অভিযোগকারী ৭ শিক্ষক নিরাপত্তাহীনতা ভুগছেন বলে প্রশাসনের নিকট তাদের জীবন ও পরিবারের নিরাপত্তা কামনা করেছেন। এর আগে শিক্ষা অফিসার শামীম আহম্মেদ খানের বিরুদ্ধে টাকা ছাড়া এমপিও ভুক্ত, করোনাকালীন নন এমপিও শিক্ষকদের তালিকা তৈরী ও সরকারী বই দেন না বলে অভিযোগে ছিল। শিক্ষা অফিসার শামীম আহম্মেদ খান তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করেন। অভিযোগকারীদের দাবী, নন এমপিও শিক্ষকদের করোনা প্রণোদনার ভাতা প্রকৃত শিক্ষকদের না দিয়ে ভুয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের দেওয়া হয়েছে। শৈলকুপার ১৪ নং দুধসর ইউনিয়নের রাবেয়া খাতুন নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সালমা খাতুন নামে এক ভুয়া শিক্ষকের নাম দেখিয়ে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শামীম আহম্মেদ খান এবং ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক নাহিদুজ্জামান নাহিদ ওরফে নাজমুল আত্মসাৎ করেছেন। শৈলকুপার বেড়বাড়ি ও পুরাতন বাখরবা গ্রামে এবতেদায়ী স্বতন্ত্র মাদ্রাসা কাগজ কলমে না থাকলেও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শামীম আহম্মেদ খান দুইটি মাদ্রাসার নামে করোনার টাকা তুলে নিয়েছেন। শৈলকুপা উপজেলায় ৬টি এবতেদায়ী মাদ্রাসা রয়েছে, এসব মাদ্রাসা শিক্ষকদের করোনার প্রণোদনার টাকা প্রদান করা হবে বলে মোবাইলে নিজ দপ্তরে ডেকে নিয়ে ঘুষ দাবী করেন শামীম খান। ঘুষ না দেওয়ায় কারোর টাকা প্রদান করা হয়নি। অভিযোগ সূত্রে আরো জানা গেছে, যে সকল মাদ্রাসার নামে জমি রেজিষ্ট্রি নাই ও ব্যানবেইজ তালিকায়ও নাম নাই, ভূয়া শিক্ষক, তাদেরকে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক করোনা প্রনোদনার চেক উত্তোলন করেন ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে। যেখানে প্রকৃত শিক্ষকেরা ঘুষ না দেওয়া বাদ পড়েছে বলে উল্লেখ রয়েছে।
তবে অনুসন্ধানে জানা গেছে, বেশিরভাগ এবতেদায়ী মাদ্রাসাগুলো শুরু থেকেই শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্য থাকলেও প্রতিষ্ঠানগুলো অবকাঠামো উন্নয়ন নেই, লেখাপড়ার বালাই নেই, নামমাত্র পকেট কমিটি দিয়েই চলে গুন-মানহীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এক্ষেত্রে প্রধান শিক্ষকেরা একচেটিয়া আধিপত্য বিস্তারসহ ধরাকে স্বরাজ্ঞান করে বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রধান শিক্ষকদের কথামত না চললেই অকারনে অপকৌশলে প্রকৃত শিক্ষকের বাদ দেয়া হয়। যা নিয়ে আদালতের দারস্তও হয়েছেন সারুটিয়া দোহারো স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রসার একাধিক শিক্ষক। বড়বাড়ি বগুড়া গ্রামে রয়েছে আরো একটি স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসা সেখানেও শিক্ষক নিয়োগে ভয়ঙ্কর জালিয়াতির অভিযোগ আছে।
অভিযোগকারী শিক্ষকদের নিরাপত্তাহীন করার বিষয়ে শিক্ষা অফিসার শামীম আহম্মেদ খান জানান, তিনি তাদেরকে হুমকি দেননি এমনকি দেখাও হয়নি তবে অন্য কেউ কিছু বলে থাকলে সে বিষয়ে তার কিছু করার নেই। এছাড়াও অনিয়ম দূর্ণীতির বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান।