এ কে এম রুহুল সঙ্গী অনুসারীদের নিয়ে গঠন করেন তল্পিবাহক করেন ম্যানেজিং কমিটি
নিয়োগ বাণিজ্য ও দুর্নীতির আখড়া ভাজনা মাদ্রাসা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:২০ এএম, ৩১ অক্টোবর,রবিবার,২০২১ | আপডেট: ১০:২২ এএম, ২১ সেপ্টেম্বর,শনিবার,২০২৪
নিয়োগ বাণিজ্য, অবৈধ ম্যানেজিং কমিটিসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতিতে নিমজ্জিত ভাজনা কদমতলা নূরিয়া আলিম মাদ্রাসা। ১৯৭১ সালে স্থানীয় বাসিন্দা মাওলানা এ কে এম আবদুল লতিফ পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলায় ভাজনা কদমতলা গ্রামে প্রতিষ্ঠা করেন ভাজনা নূরিয়া মাদ্রাসা। ১৯৭২ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ১১ তারিখ সরকারি মঞ্জুরিপ্রাপ্ত হয় মাদ্রাসাটি। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সুনামের সাথে চলছিল প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠাতা-সভাপতির মৃত্যুর পর এ কে এম রুহুল আমিন অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই দুর্নীতি-অনিয়ম পরিণত হয়ে নিয়মে। এ কে এম রুহুল সঙ্গী অনুসারীদের নিয়ে গঠন করেন তল্পিবাহক করেন ম্যানেজিং কমিটি। এই কমিটির প্রধান কাজই হলো মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে নিয়োগ বাণিজ্যসহ সকল অনিয়ম করা। মাদ্রাসার বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতার ছেলে মো. আফজাল হোসেন মির্জাগঞ্জ সহকারী জজ আদালতে একটি মামলা (দেং মোং নং- ৪১/২০১৭) দায়ের করেন। মামলাটি বর্তমানে চলমান। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের অনুকূলে অনিয়ম-স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগ ও মামলা সূত্রে জানা যায়, আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হতে হলে প্রথম শ্রেণির কামিলসহ প্রতিটি পরীক্ষায় দ্বিতীয় শ্রেণি এবং কমপক্ষে দাখিল মাদ্রাসায় ৮ বছরের প্রভাষক হিসেবে চাকরি করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। অথচ রুহুল আমিন তার জীবনের সকল পরীক্ষায়ই তৃতীয় শ্রেণিপ্রাপ্ত। কিন্তু সরকারি নিয়মনীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ১৯৯৬ সালের অক্টোবরের ১০ তারিখ তৎকালীন ম্যানেজিং কমিটির ‘বিশেষ’ তৎপরতায় সকল তথ্য গোপন করে অবৈধভাবে তাকে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদানের পর তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের চাকরির মেয়াদ ২০০৩ সালে আগস্টে শেষ হওয়া সত্ত্বেও অন্যায়ভাবে তাকে বেশ কয়েক মাস সরকারি বেতন-ভাতা প্রদান করেছেন এতে সরকারের লাখ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে দাবি করেন মাদ্রাসা সংশ্লিষ্টরা। সহকারী শিক্ষক মাওলানা ইউনুসের শিক্ষা সনদে জন্ম তারিখ ১০-০১-১৯৪৭-এর পরিবর্তে অধ্যক্ষ অবৈধ পন্থায় ০১-০৬-১৯৫৩ দেখিয়ে চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধি করে অতিরিক্ত ৩ বছর বেতন-ভাতা তোলার সুযোগ করে দিয়েছেন। ইতিপূর্বে সরকারি বিধি ভঙ্গ করে এডহক কমিটি চলাকালীন পাঁচটি পদে নিয়োগ সম্পন্ন করেন। সরকারি বিধি মোতাবেক অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করাকালীন অপর কোনো প্রতিষ্ঠানে কোনো অবস্থায় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হতে পারবেন না। কিন্তু এ বিধি উপেক্ষা করে ২০১৫ সালের জুলাই মাসে উপজেলার আন্দুয়া আমিনিয়া দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক মো. গোলাম মোস্তফাকে মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নিয়োগ দেন। বর্তমানেও গোলাম মোস্তফা সভাপতি হিসেবে আছেন। আলিম মাদ্রাসার সভাপতির বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলার সুবিদখালী মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ ড. আবদুর রহমান বলেন, দাখিল মাদ্রাসার চাকরিরত অবস্থা একজন সহকারী শিক্ষক কোনোমতেই আলিম মাদ্রাসার সভাপতি হতে পারেন না। এটা নিয়মবহির্ভূত। ইচ্ছেমতো সভাপতিকে নিয়ে নিয়োগ বাণিজ্যসহ মাদ্রাসার বিভিন্ন উন্নয়নের নামে করছে লুটপাট।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০০৭ সালে সিডরে ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা সরকারি বরাদ্দ পায় ভাজনা নূরিয়া মাদ্রাসা। বরাদ্দের মাত্র ৭০ হাজার টাকার কাজ করে বাকি টাকা আত্মসাৎ করেন দুর্নীতিবাজ এই অধ্যক্ষ। বর্তমানে নেই মাদ্রাসার মঞ্জুরি, রয়েছে মামলা ও নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা। তদুপরি এ অবস্থায় মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে কিছু মাস আগে অফিস সহকারী, আয়া ও নিরাপদকর্মীসহ তিনজনকে নিয়োগ দেন অধ্যক্ষ ও অবৈধ সভাপতি। বর্তমানে হিসাবরক্ষক পদে আর একটি নিয়োগ নিয়ে চলছে দরকষাকষি। কাউকে না জানিয়ে দিয়েছে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি। ওই মাদ্রাসা এক শিক্ষক বলেন, অধ্যক্ষের সাথে কথা হয়েছিল আমার একজন লোক ওই পদে নেবেন। কিন্তু তিনি গোপনে অন্য এক শিক্ষকের বোনকে মোটা অংকের বিনিময়ে পদটিতে নিচ্ছেন। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ একেএম রুহুল আমিন বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে এসব ষড়যন্ত্র হচ্ছে। নিয়োগে কারও কাছ থেকে টাকা নেয়া হয়নি। সবকিছু মিথ্যা।’
সভাপতি মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘সহকারী শিক্ষক হয়ে আলিম মাদ্রাসার সভাপতি হতে কোনো বাধা নেই। আমরা কোনো নিয়োগ বাণিজ্য করিনি।’
উপজেলা মাধ্যমিক একাডেমিক সুপারভাইজার মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ওই প্রতিষ্ঠানে কোনো প্রকার অনিয়ম থাকলে তা তদন্ত করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার সাথে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোসা. তানিয়া ফেরদৌস জানান, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলে বিষয়টি দেখা হবে। অথবা অনিয়মের বিরুদ্ধে মামলাও করতে পারে।