রমজানে পানিশূন্যতা এড়াতে করণীয়
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০২:৩১ এএম, ১৪ এপ্রিল,বৃহস্পতিবার,২০২২ | আপডেট: ০৫:৩৫ পিএম, ২ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
এবারের রমজান মাস শুরু হয়েছে চৈত্রের দাবদাহে। প্রায় ১৪ ঘণ্টা পানাহার থেকে বিরত থাকার ফলে অনেকেরই শরীরে দেখা দিতে পারে পানিশূন্যতা বা ডিহাইড্রেশন। বিশেষ করে বয়স্ক, ডায়াবেটিস রোগী, রোদে পুড়ে কাজ করেন এমন ব্যক্তির এই সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে।
পানির ঘাটতি দেখা দিলে শরীরে ইলেকট্রোলাইট ইমব্যালান্স হয়। অর্থাৎ শরীরে তরলরূপে থাকা বিভিন্ন লবণ যেমন- সোডিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ক্লোরাইড, ক্যালসিয়াম, ফসফেট, পটাসিয়ামের মতো বিভিন্ন উপাদানের অসামঞ্জস্যতা দেখা দেয়। এই অসামঞ্জস্যতার মাত্রা বাড়লে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
রোজায় পানিশূন্যতা যেন না হয় সেদিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। নিয়মিত পরিমাণ মতো পানি ও পানি জাতীয় খাবার খেলে এ সমস্যা থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব। ইফতার থেকে সেহরি- এই সময়ের মধ্যে একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের গড়ে ২-২.৫ লিটার পানি পান করা উচিৎ।
ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত এমন খাবার বাছাই করতে হবে যেসব খাবারে পর্যাপ্ত পানি রয়েছে। অনেকেই ইফতারে অতিরিক্ত ভাজাভুজি খেয়ে রাতে আর কিছুই খান না, সেহরিতে শুধু পানি বা না খেয়েই রোজা রাখেন। যা একেবারেই ঠিক নয়। স্বাস্থ্যসম্মত ইফতারের পর পরিমিত পরিমাণে রাতের খাবার ও সেহরি খেতে হবে। সেইসঙ্গে নিয়মিত শরীরচর্চা বা শারীরিক ব্যায়াম বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
শিশুদের পানিশূন্যতা দূর করার জন্য ইফতারের পর বেশি পানি, ফলের জুস, ফল, ডাবের পানি খাওয়াতে হবে। কিছুক্ষণ পর পর খাওয়ানো ভালো। অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, শিশু যেন খুব বেশি ঠান্ডা পানি পান না করে। এতে গলাব্যথা, জ্বর, ঠান্ডা বা টনসিলের সমস্যা দেখা দিতে পারে। ইফতারে ভাজাপোড়া বা তেলজাতীয় খাবার শিশুরাও খুব আগ্রহ নিয়ে খায়। কিন্তু এগুলো কম খেতে দিয়ে ফল, সালাদ বেশি খাওয়াতে হবে।
পানিশূন্যতা কেন হয়?
১। দীর্ঘসময় পানি না খাওয়ার কারণে দেহ পানিশূন্য হয়ে পড়ে।
২। খাবার তালিকায় পানিসমৃদ্ধ সবজি, ফল ও খাবার না রাখলে দেহে পানির অভাব দেখা দেয়।
৩। অতিরিক্ত তেলে ভাজা খাবার, ইফতার সেহরিতে অতিরিক্ত চা কফি খেলেও পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে।
৪। ইফতার থেকে সেহরি এই সমইয়ের মধ্যে পর্যাপ্ত (৮-১০ গ্লাস) পানি পান না করলে দেহ পানিশূন্য হতে পারে।
৫। জ্বর, ডায়রিয়াসহ এ ধরনের অন্যান্য অসুখে আক্রান্ত হলে।
৬। কম পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট, উচ্চ পরিমানে প্রোটিন ও এনার্জি ড্রিংক, অতিরিক্ত পরিমাণে লেবুর রস খেলেও দেহে পানির ঘাটতি দেখা দিতে পারে।
পানিশূন্যতার লক্ষণ কী?
পানিশূন্যতার অন্যতম বড় লক্ষণ হচ্ছে গলা শুকিয়ে আসা, প্রস্রাব কমে যাওয়া ও প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া, প্রসাবের রঙ অতিরিক্ত হলুদ হওয়া, ক্লান্তি ও অবসাদগ্রস্ত হওয়া, মাথাঘোরা, বমিভাব, ত্বক ও জিহ্বা শুষ্ক হয়ে যাওয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, চোখে ঝাপসা দেখা। তবে জিহ্বা ও চোখ দেখে খুব সহজেই পানিশূন্যতা বোঝা যায়। পানিশূন্যতা হলে হার্ট রেট, প্রেসার কমে যেতে পারে। রোগী গুরুতর অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন।
রোজায় পানিশূন্যতা রোধে করণীয়
রোজায় পানিশূন্যতা থেকে মুক্ত থাকার জন্য করণীয় সম্পর্কে বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদরা। তা হলো-
ইফতার ও সেহরির মধ্যকার সময়ে পর্যাপ্ত পানি পান করা
সহজে হজম হয় এমন খাবার খাওয়া
ইফতারে ফলের রস ও ফলের পরিমাণ বেশি রাখা
সরাসরি রোদে না যাওয়া
অতিরিক্ত খাবার না খাওয়া
প্রয়োজনে ডাবের পানি বা খাবার স্যালাইন পান করা
হালকা শরীর চর্চা করা
অনেকেই পানি পান করতে গিয়ে ফ্রিজ থেকে বের করা ঠান্ডা পানি খেয়ে থাকেন যা মোটেও ঠিক নয়। অতিরিক্ত ঠান্ডা পানি থেকে বিরত থাকতে হবে। যাদের চা পানের অভ্যাস আছে তারা দুধ চায়ের বদলে রং চা পান করতে পারে পরিমিত মাত্রায়। আর পর্যাপ্ত পানির পাশাপাশি খাবারে লাউ, কুমড়ো বা পেঁপে জাতীয় খাবার বেশি রাখলে শরীর পানিশূন্যতা থেকে রক্ষা পাবে।