শীতে হার্টের সমস্যা দূর করার উপায়
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০২:৫২ এএম, ২৩ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ১০:০৩ পিএম, ২ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
শীতকালে অতিরিক্ত ঠান্ডায় মানুষের শরীরে বিভিন্ন পরিবর্তন হওয়ার ফলে সব অঙ্গ ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। তাই এ সময় নিয়মিত হার্ট চেকআপ এবং খাওয়াদাওয়াতে পরিবর্তন আনা দরকার। শুধু তাই নয়, ৪০ পেরলেই অবশ্যই হার্টের কিছু পরীক্ষা করানো উচিত। আর যদি পরিবারে কারোর হার্টের সমস্যা থাকে তাহলে অতি অবশ্যই হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শীতকালে বুকে সংক্রমণ, কফ বসে যাওয়া, হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি, শ্বাসকষ্ট, রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার মত সমস্যা লেগেই থাকে। সেই সঙ্গে পরিবেশের তাপমাত্রা কম থাকায় রক্তনালীগুলো সংকুচিত হয়ে থাকে। যে কারণে রক্ত প্রবাহ বাধা পায় এবং হার্টের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। হার্টের ওপর চাপ পড়লেই তখন দেখা দেবে নানা রকম সমস্যা।
সঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু হলে অনেক ক্ষেত্রেই রোগীর প্রাণ বাঁচানো যায়। ফলে হেলদি ডায়েট, ধূমপান একেবারেই না করা, ঠান্ডা না লাগানো, শরীরচর্চা, প্রাণায়ম, এসব মেনে চলতে হবে। হাতের কাছে রাখতে হবে প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র। অন্য সময়ের তুলনায় এই সময় গ্যাসের সমস্যা বেশি হয়। বিশেষত রাতের দিকে যাতে গ্যাস না হয় সে বিষয়ে সতর্ক থাকুন। আর তাই খাওয়া-দাওয়া কিন্তু মেপে করবেন।
প্রতিদিন ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা ঘুমাতে হবে। সপ্তাহে অন্তত আড়াই ঘণ্টা ব্যায়াম করুন, সঙ্গে বেশি মোটা হলে ক্যালরি কমিয়ে দেয়াই ভালো। মানসিক চাপ কমিয়ে ফেলুন। ধূমপান ছেড়ে দিন। ঠান্ডা লাগা, সর্দি-কাশি, টনসিল কিংবা বুকে কফ জমার মত সমস্যায় আগে থেকেই সতর্ক থাকুন।
উচ্চরক্তচাপের সমস্যা থাকলে নিয়মিত ওষুধ খান। ঠান্ডায় রক্তচাপ খুব বেশি ওঠানামা করে। যে কারণে হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়। এবার ব্লাডপ্রেসার আর হৃদস্পন্দন একসঙ্গে বেড়ে গেলে হার্টের রোগীদের জন্য খুবই ক্ষতিকর।
শীতে দূষণ তুলনামূলক ভাবে অনেক বেশি। সব থেকে বেশি ক্ষতি করে ধোঁয়াশা। এখান থেকেই বুকে সংক্রমণের সম্ভাবনা বেড়ে যায় অনেকখানি। হার্টের সমস্যাকে আরও বেশি জটিল করে তোলে এই সংক্রমণ।
প্রতিদিন ২০ মিনিট করে সূর্যের আলোর সংস্পর্শে এলে শরীরে নাইট্রিক অক্সাইডের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ে, যা রক্তচাপকে কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
শীতে ঘাম কম হয়। শরীর থেকে অতিরিক্ত টক্সিন বেরনোর সুযোগও কিন্তু থাকে কম। অতিরিক্ত পানি অনেক কারণেই ফুসফুসে জমে যায়। ফলে সেখান থেকেও হতে পারে হার্ট অ্যার্টাক।
ভিটামিন ডি এর অভাব হলেও কিন্তু বাড়ে হার্ট অ্যার্টাকের ঝুঁকি। ভিটামিন ডি-এর অভাব হলে হার্টের বিশেষ কিছু কোশগঠনে সমস্যা হয়। আর এই কোশই কিন্তু হার্ট অ্যাটাকের পর হার্টকে রক্ষা করে।
শীতে কিন্তু শরীরচর্চা করতে ভুলবেন না। সেই সঙ্গে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি খান। অতিরিক্ত পানিও তা বলে খাবেন না। লবণ কম খান। কাঁচা লবণ একেবারেই খাবেন না। যে সব ওষুধ নিয়মিত খান কোনওভাবেই তা খেতে ভুলে যাবেন না। বেশি করে আঁশযুক্ত খাবার খান। স্যাচুরেটেড ফ্যাট বা জমাট-বাঁধা চর্বি জাতীয় খাবার কমিয়ে ফেলে ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার খাবেন।
আলু কিংবা কলাই-জাতীয় খাবারের চেয়েও গুটিযুক্ত ফলধারী লতা, যেমন- শিম, বরবটি রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় এগুলো রাখতে পারেন ওষুধ বিবেচনায়ও।
দারুচিনির ব্যবহার হৃৎপিন্ডকে সতেজ করে তুলতে অনন্য ভূমিকা রাখে। প্রতিবেলা খাবারে দুই চা চামচ দারুচিনি রক্তে শর্করার পরিমাণ কমিয়ে আনে, এমনকি মাংস খাবার পরের মুহূর্তেও।
প্রতিদিন এক কাপ পরিমাণ আখরোট-জাতীয় ফল খেলে শরীরের রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া কার্যকর হয়ে ওঠে। কেননা আখরোট-জাতীয় ফলে থাকে ওমেগা-৩ নামের চর্বি, যা বিভিন্ন ধরনের প্রদাহের বিরুদ্ধে শক্তিশালী অবস্থান নেয় এবং এর ফলে দূষিত রক্ত নিয়মিত পরিসঞ্চালিত হয়ে হার্টের গতি স্বাভাবিক রাখে।
ব্রাজিলীয় গবেষকরা জানিয়েছেন, ডিমের কুসুমে থাকা ভিটামিন ই, বি-১২ এবং ফলেট করোনারি আর্টারিকে পরিষ্কার রাখে।
কোনোভাবেই কাজের ক্লান্তিকে আপনার ওপর চেপে বসতে দেবেন না। এ জন্য মাঝেমধ্যেই অবসাদ দূর করতে আপনার পছন্দকে গুরুত্ব দিন। সুইজারল্যান্ডের এক গবেষণা জানিয়েছে, অবসাদ দূর করার তৎপরতা হৃদযন্ত্রের সংকট কাটায় ৫৭ শতাংশের কাছাকাছি।
হার্টের সমস্যার সঙ্গে উচ্চ ডেসিবেলের শব্দেরও বেশ যোগ রয়েছে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, বাড়ি থেকে দূরে প্রতি ১০ ডেসিবেল শব্দের মাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আপনার হার্ট এটাকের পরিমাণও বাড়তে থাকে ১২ শতাংশ হারে।