ঈশ্বরগঞ্জে ইউপি চেয়ারম্যান ও আ'লীগ সভাপতির নামে ধর্ষণ এবং হত্যার অভিযোগে মামলা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:৪৮ এএম, ২৮ মে,শুক্রবার,২০২১ | আপডেট: ০৭:১১ পিএম, ১৪ সেপ্টেম্বর,শনিবার,২০২৪
ময়মনসিংহে ঈশ্বরগঞ্জে এক তরুণীর মৃত্যুকে ঘিরে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। ধর্ষণে অন্তস্বত্ত্বা ও গর্ভপাত করাতে গিয়ে মেয়ের মৃত্যু হয়েছে এমন অভিযোগে ইউপি চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন আ'লীগ সভাপতি সহ ৫ জনের বিরুদ্ধে গত মঙ্গলবার ময়মনসিংহ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে মামলা দায়ের করেছে মেয়েটির বাবা। এদিকে মৃত্যু সনদ বলছে এটি ব্রেইন স্ট্রোক। এনিয়ে সৃষ্টি হয়েছে এলাকায় তোলপাড়। মিথ্যা মামলা দায়েরের অভিযোগে আজ বৃহষ্পতিবার দূপুরে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে অভিযুক্ত পরিবারের সদস্যরা এবং ইউনিয়ন আ'লীগ ও সহযোগী সংগঠন।
এজাহার সূত্রে জানা যায়,উপজেলার উচাখিলা ইউনিয়ন এলাকায় স্থানীয় কাঠমিস্ত্রি স্বপন পরিবার-পরিজন নিয়ে উচাখিলা বাজারে বসবাস করে আসছিলেন। ওই বাসায় তার অনুপস্থিতিতে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম শফিক, তার বড় ভাই ইউনিয়ন আ'লীগের সভাপতি মঞ্জুরুল হক সহ অনেকেই প্রায়ই আসা যাওয়া করতো। এক পর্যায়ে স্বামী স্বপন চেয়ারম্যান সহ অন্যান্য লোকদের বাড়িতে আসতে নিষেধ করে। যার ফলে শুরু হয় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পারিবারিক কলহ। তাদের তিন মেয়ে ও এক ছেলে থাকার পরও এই ঘটনার জের ধরে গত ২০১৭ সালে স্বামীকে ডিভোর্স দেন স্ত্রী আসমা। তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী আসমা তিন কন্যাসহ উচাখিলা বাজারে কৃষি বিভাগের সরকারি পরিত্যাক্ত সিড স্টোরে বসবাস শুরু করেন।
এজাহারে আরো জানা যায়, এ বাসায় চেয়ারম্যান সহ অন্যান্যরা নিয়মিত যাতায়াত করার সুযোগে মিথ্যা প্রলোভনে ওই স্বপনের মেয়ের (১৬) সঙ্গে দৈহিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এতে ওই কিশোরী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার জন্য ওই কিশোরীকে কবিরাজি ওষুধ সেবন করানো হয়। এতে প্রচুর রক্তক্ষরণ হওয়ায় গত ৯ মে কিশোরীকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে ডাক্তার তাকে ঢাকায় রেফার্ড করেন। পরে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে মেয়েটি মারা যায়।
অভিযোগে আরো জানা যায়, কিশোরীর লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়াই ঢাকা থেকে এনে স্থানীয়ভাবে দাফন না করে, উপজেলার সদর ইউনিয়নে জামিয়া গাফুরিয়া মাদ্রাসার কবরস্থানে লাশ দাফন করে। পরে নিহতের বাবা বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ পোষন করলে ময়মনসিংহ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ইউপি চেয়ারম্যান, নিহত তরুণীর মা, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও দুই সহযোগীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
একদিকে ইউপি চেয়ারম্যান সহ অন্যান্যদের নামে ধর্ষণ ও হত্যা মামলা, অন্যদিকে হাসপাতালের ডেথ সার্টিফিকেট বলছে মেয়েটির মৃত্যু হয় ব্রেইন স্ট্রোক করার কারণে। এনিয়ে এলাকায় চলছে তোলপাড়।
ফলে বৃহষ্পতিবার দূপুরে ইউনিয়ন পরিষদে অভিযুক্তদের পরিবার এবং ইউনিয়ন আ'লীগ ও সহযোগী সংগঠন সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
এসময় ধর্ষন ও হত্যা মামলাটি সম্পুর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট এবং আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যানের ভাব মুর্তি নষ্ট করার জন্যে একটি কুচক্রী মহল কাজ করছে বলে চেয়ারম্যানের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করে জানান। ভাতিজা নায়েব এ জাহান মনি।
হাসপাতালটির ডেথ সার্টিফিকেটে বলা হয়- যক্ষার জীবাণু শরীরে ছড়িয়ে পড়া এবং এই জীবাণু ব্রেইনের রক্তনালীতে বাসা বাঁধার কারণে ইশকেমিক স্ট্রোক মৃত্যুর কারণ। ডেথ সার্টি ফিকেট দেখে কয়েকজন চিকিৎসক এমনটি জানিয়েছে। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. লিমাত বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তরুণীর মা আসমা জানান, স্বামীর সঙ্গে ডিভোর্স হওয়ায় প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে মিথ্যা মামলা করেছে। তার মেয়ে স্ট্রোক করে মারা গেছে।
উচাখিলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শফিকুল ইসলাম জানান, মেয়েটি স্ট্রোক করে মারা গেছে। কিন্তু নির্বাচনকে সামনে রেখে তাকে রাজনৈতিক ভাবে ঘায়েল করার জন্য চক্রান্ত করে তার নামে মামলা করানো হয়েছে।
ঈশ্বরগঞ্জ থানার ওসি মো. আবদুল কাদির মিয়া বলেন, আদালত থেকে তারা কোনো ধরণের আদেশ পাননি। আদেশ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।